২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে আগামী জুন মাসে। বিপিএল এখন চলছে। বিশ্বকাপের কাছাকাছি সময়ে দেশের সেরা টুর্নামেন্ট। তাই বিপিএল বিশ্বকাপ প্রস্তুতির আদর্শ মঞ্চ বলেছিলেন বিসিবির কর্তারা।
নির্বাচকরা মুখিয়ে ছিলেন নিয়মিতদের পাশাপাশি নতুন কাউকে বিপিএল থেকে খুঁজে নিতে। মাঠে অবশ্য উল্টোটাই হচ্ছে। নতুনদের ঝলকানি তো নেই। পাশাপাশি সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি দলে থাকা ক্রিকেটারদের কারও পারফর্ম্যান্স আশানুরূপ নয়। তাই নিয়মিত ক্রিকেটারদের নিয়েই চিন্তায় আছেন নির্বাচকরা।
বিপিএলে এখন দ্বিতীয় পর্ব চলছে। আর দুই রাউন্ড পর এই পর্বও শেষ হবে। বেশির ভাগ দলই ৫-৪টি করে ম্যাচ খেলেছে। অথচ সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সিরিজে টি-টোয়েন্টি দলে থাকা কোনো বাংলাদেশি ব্যাটারের ব্যাটে হাফসেঞ্চুরি নেই। আলাদা করে কিছু বলার নেই বোলারদের ব্যাপারেও। ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স নেই কারও। ৩ উইকেট করে নিয়েছেন তিনজন কিন্তু সেসব এক ম্যাচের ঝলক।
সেরা দশে তাদের অনুপস্থিতি
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি দলের কোন ব্যাটার এখন পর্যন্ত সেরা ১০ রান সংগ্রাহকের তালিকায় নেই। নিউজিল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি খেলে আসা ব্যাটারদের মাঝে ৪ ম্যাচে ১০৮ রান নিয়ে শীর্ষে আফিফ হোসেন। তার অবস্থান ১৪তম। ওই দলের আর কেউ ১০০ রানের কোটা পার করতে পারেননি। নাজমুল হোসেন শান্ত ৫ ম্যাচে ৬৯, লিটন দাস ৪ ম্যাচে ৩৫, রনি তালুকদার ৪ ম্যাচে ৩৭, সৌম্য সরকার ৪ ম্যাচে ৯৭, তাওহিদ হৃদয় ৪ ম্যাচে ৯৫, শামীম হোসেন ৫ ম্যাচে ৯৭ রান করেছেন।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে খেলা বোলারদের তালিকায় অবশ্য আশার কথা আছে। ৬ উইকেট করে নেওয়া হাসান মাহমুদ (৫ ম্যাচ), মোস্তাফিজুর রহমান (৪ ম্যাচ), শরিফুল ইসলাম (৪ ম্যাচ) ও ৫ উইকেট নেয়া তানভীর ইসলাম (৪ ম্যাচ) আছেন সেরা ১০ জনের তালিকায়। তানজিম সাকিব পেয়েছেন ৪ ম্যাচে ৩ উইকেট।
অলরাউন্ডার শেখ মেহেদি হাসান ৫ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে বোলারদের তালিকায় দুই নম্বরে আছেন। রান করেছেন ৪৯। অপর অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ ৫ ম্যাচে ৭০ রান করে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
দুশ্চিন্তায় প্রধান নির্বাচক
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগে মূল দলের ক্রিকেটারদের এই ফরম্যাটে দেশের সেরা টুর্নামেন্টে এমন অবস্থা। সকাল সন্ধ্যাকে তাই দুশ্চিন্তার কথাই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, ‘‘অবশ্যই এটা বড় চিন্তার বিষয়। যারা সব সময় টি-টোয়েন্টির চিন্তায় থাকে তারা এবার খুব ভাল করছে না। যেহেতু এটা খুব ছোট ফরম্যাট, একটু ব্যাকফুটে থাকলে এটা নিয়ে কাজ করারও তেমন সুযোগ পাওয়া যায় না।”
ক্রিকেটারদের ব্যর্থতায় নিরুপায় প্রধান নির্বাচক তাই অপেক্ষায় আছেন তাদের ফর্মে ফেরার, ‘‘বিশ্বকাপ কাছাকাছি থাকায় খুব সময়ও নেই রিকভারি করার। এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। কিন্তু আমরা আশা করছি এখনও বিপিএলের অনেকটা পথ বাকি। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দ্রুত কামব্যাক করুক।’’
সবদিকেই চোখ নির্বাচকদের
নির্বাচক মন্ডলীর চোখ আছে বিপিএল এবং বিপিএলের বাইরেও। এক ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ম্যাচ জেতানো আলিস আল ইসলাম বা কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া জাতীয় দলের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের দিকে তাদের সমান দৃষ্টি আছে।
মিনহাজুল আবেদীন প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন, ‘‘আমরা সবই ফলো করছি। আমাদের নির্বাচক প্যানেলের সবাই নিয়ম করে প্রতিটা ভেন্যুতে থাকি। কোন ক্রিকেটার কেমন পারফর্ম করছে সবসময়ই আমরা নজরে রাখছি। জাতীয় দলের একটা পুল সবসময়ই তৈরি থাকে, এর বাইরে যদি কেউ বিশেষ পারফর্ম করে তাকে অবশ্যই আমরা বিবেচনায় রাখি।”
নিশ্চিতভাবে বিবেচনায় আছেন মাহমুদউল্লাহও। ফরচুন বরিশালের হয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে ২৩ বলে নিজের ক্যারিয়ারের দ্রুততম ফিফটি করেছেন। মুশফিকুর রহিম ব্যাটারদের তালিকায় ২০২ রান নিয়ে আছেন শীর্ষে। তরুণদের ব্যর্থতা যেন অভিজ্ঞদের দিকেই নজর ফেরাচ্ছে।
নিউজিল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলা দলে বিশ্বকাপের আগে অধিনায়ক হিসেবে যোগ হবেন সাকিব আল হাসান। চোখের সমস্যার কারণে সাকিব নিজেও আছেন বিপত্তিতে। মুশফিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। নয়তো মাহমুদউল্লাহর মতো চিন্তার বাইরে চলে গেলেও আবার ফিরতে তিনি পারতেন বিশ্বকাপ ভাবনায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাদের জায়গা নেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন তরুণরা।
সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সিরিজে টি-টোয়েন্টি দলের খেলোয়াড়দের বিপিএল পারফরম্যান্স
ব্যাটার
নাজমুল হোসেন শান্ত – ৫ ম্যাচে ৬৯ (সর্বোচ্চ ৩৬)
লিটন দাস – ৪ ম্যাচে ৩৫ রান (সর্বোচ্চ ১৪)
রনি তালুকদার – ৪ ম্যাচে ৩৭ রান (সর্বোচ্চ ১৫)
সৌম্য সরকার – ৪ ম্যাচে ৯৭ রান (সর্বোচ্চ ৪২)
তাওহিদ হৃদয় – ৪ ম্যাচে ৯৫ (সর্বোচ্চ ৪৭)
আফিফ হোসেন – ৪ ম্যাচে ১০৮ (সর্বোচ্চ ৪১)
শামীম হোসেন – ৫ ম্যাচে ৯৭ (সর্বোচ্চ ৩৪)
বোলার
তানজিম হাসান সাকিব – ৪ ম্যাচে ৩ উইকেটে (সেরা ১/১৯)
হাসান মাহমুদ – ৫ ম্যাচে ৬ উইকেট (সেরা ৩/২৯)
মোস্তাফিজুর রহমান – ৪ ম্যাচে ৬ উইকেট (সেরা ৩/৩২)
রিশাদ হোাসেন – ম্যাচ খেলেননি
শরিফুল ইসলাম – ৪ ম্যাচে ৬ উইকেট (৩/২৭)
তানভির ইসলাম – ৪ ম্যাচে ৫ উইকেট (২/২৭)
অলরাউন্ডার
শেখ মেহেদি হাসান – ৫ ম্যাচে ৪৯ রান (সর্বোচ্চ ২৯), ৭ উইকেট (সেরা ৩/১১)
মেহেদি হাসান মিরাজ – ৫ ম্যাচে ৭০ রান (সর্বোচ্চ ৩৫), ৪ উইকেট (সেরা ২/১৩)