চাঁদপুরের আলোচিত পারভীন আক্তার হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার হিসেবে পরিচিত রসু খাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
রায়ে বলা হয়, “যে জঘন্য অপরাধ সে করেছে তার জন্য কোনও অনুকম্পা বা সহানূভুতি পেতে পারে না। তার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাই একমাত্র শাস্তি।”
বিচারিক আদালতে মামলার অন্য দুই আসামি জহিরুল ইসলাম ও মো. ইউনুছকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও, তা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট।
আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. সফি উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আয়েশা ফ্লোরা, মো. রবিউল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম।
এর আগে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ রসু খাঁসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) আবদুল মান্নান। সেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে নথি আসে। পাশাপাশি আসামিরাও আপিল করেন।
আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে ৯ জুলাই রায়ের দিন ঠিক করেছিল হাইকোর্ট।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২০ জুলাই রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে রসু খাঁ ও অন্য আসামিরা ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য হাঁসা গ্রামের নির্জন মাঠে পারভীন নামে এক নারীকে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পারভীনের স্পর্শকাতর অঙ্গ ও দুই পায়ের উরুতে সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ২০টি ক্ষতচিহ্ন ছিল। পারভীন অজ্ঞাত পরিচয় হওয়ায় তৎকালীন সময়ের ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মীর কাশেম আলী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
কে এই রসু খাঁ?
মামলার তদন্তে উঠে আসে রসু খাঁর নাম। সদর উপজেলার মদনা গ্রামের এই বাসিন্দা শুরুতে ছিলেন ছিঁচকে চোর, একপর্যায়ে হয়ে ওঠেন সিরিয়াল কিলার।
তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ থানায় মোট ১০টি মামলা আছে। যার মধ্যে নয়টি হত্যা এবং একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে।
জিজ্ঞাসাবাদে নিজেই পুলিশকে জানিয়েছেন যে, ১০১ নারী খুন করে সিলেটের মাজারে গিয়ে সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার।
যেভাবে গ্রেপ্তার
২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর বাজার উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মসজিদের ফ্যান চুরির ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন রসু খাঁ।
এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে তার একের পর এক খুনের তথ্য। নিজেই স্বীকার করেন ১১ নারীকে হত্যার কথা। এই নারীদের প্রত্যেকেই ছিলেন পোশাককর্মী।
চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর দুই সহযোগীসহ রসু খাঁকে পারভীন হত্যা মামলায় আসামি করা হয়।