এবার মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘এক্সিলেন্স ইন সিনেমা অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হবে কিংবদন্তি শাবানা আজমিকে।
আয়োজকদের দিক থেকে ভারতের এক সংবাদমাধ্যমে এই ঘোষণা দিয়েছেন শিবেন্দ্র সিং দুঙ্গারপুর।
শাবানা আজমির হাতে এই সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেবেন সিনেমা জগতের আরেক কিংবদন্তি ওয়াহিদা রেহমান।
শাবানা আজমিকে নিয়ে মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক দুঙ্গারপুর বলেন, “তার ৫০ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ার ছিল বৈচিত্র্যময় এবং অসাধারণ।”
পাঁচ দশকের এক দীর্ঘ ক্যারিয়ার পার করেছেন শাবানা আজমি। অভিনয় দিয়ে পর্দায় করে নিয়েছেন স্বতন্ত্র জায়গা। সিনেমায় নারী চরিত্র তার কারণে পেয়েছে শক্তিশালী মাত্রা।
১৮ অক্টোবর শুরু হবে মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। দ্বিতীয় দিন অর্থ্যাৎ ১৯ অক্টোবর হবে ‘মাস্টারক্লাস’ শিরোনামে আলোচনা; যেখানে শাবানা আজমির সঙ্গে দেখা যাবে বলিউডের আরেক অভিনেত্রী বিদ্যা বালানকে।
শাবানা আজমী অভিনয় জীবনের বিশাল অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন বিদ্যা বালান।
উৎসবে দেখানো হবে শাবানা অভিনীত সিনেমা ‘আর্থ’ যা ১৯৮২ সালে মুক্তি পেয়েছিল। মহেশ ভাট পরিচালিত এই সিনেমা তাকে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে চতুর্থবারের ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পাইয়ে দিয়েছিল।
শাবানা আজমির অভিনয়ে অভিষেক ঘটেছিল ১৯৭৪ সালে ‘অঙ্কুর’ সিনেমা দিয়ে। এই সিনেমা তাকে এনে দিয়েছিল জাতীয় পুরস্কার।
গত সেপ্টেম্বরে জীবনের ৭৪ বছর পূর্ণ করার সময় বলিউডে নিজের সুবর্ণজয়ন্তীও পালন করেন শাবানা আজমি।
বলিউড পাড়ার নারী তারকাদের মধ্যে ফারহা খান, বিদ্যা বালান, দিয়া মির্জা, উর্মিলা মাতন্ডকর, রিচা চাড্ডা, শিবানী দান্ডেকর, আলি ফজল, তানভি আজমি মিলে শুভেচ্ছা জানান তাকে।
তখন শুভেচ্ছা বার্তায় শাবানা আজমিকে ‘আম্মা’ সম্বোধন করেন দিয়া মির্জা।
শাবানা আজমি সেরা অভিনেত্রী বিভাগে ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছেন পাঁচবার। চারবার সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন ফিল্মফেয়ার আসরে।
২০০৬ সালে ফিল্মফেয়ার আয়োজনে পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা।
ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছেন আটবার। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে অনেকবারই পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন শাবানা আজমি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়া হয়েছে।
সমাজসেবামূলক কাজে বলিউডের আইকন মানা হয় শাবানা আজমিকে। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছেন মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার এবং রাজীব গান্ধী পুরস্কার।
১৯৮৪ সালে চিত্রনাট্যকার, গীতিকার এবং কবি জাভেদ আখতারের সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে বাঁধা পড়েন শাবানা আজমি।
জাভেদ আখতারের সাবেক স্ত্রী হানি ইরানি এবং সন্তান ফারহান আখতার ও জোয়া আখতারের সঙ্গে তার চমৎকার সম্পর্কের কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে।
জাভেদ-শাবানার বিয়ের ৪০ বছর পার হলেও তাদের সংসারে কোনো সন্তানের আগমন হয়নি।
শারীরিক সমস্যার জন্য গর্ভধারণ করতে পারেননি বলে নিজেই জানিয়েছিলেন শাবানা আজমি। আর ফারহান আখতার ও জোয়া আখতারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় সন্তান দত্তক নেয়ার কথাও কখনও ভাবেননি তিনি।
২০২২ সালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলিউডের এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী।
হালে কলকাতায় আরজি কর ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসা সাধারণ জনতার সঙ্গে একাত্ম হন তিনিও।
শাবানা আজমি তখন বলেন, “২০১২ সালে নির্ভয়াকাণ্ডের পর জাস্টিস বর্মা কমিটির রায়ের পরও এগুলো ঘটছে। যা ভেবেই বিরক্ত আমি।
“আমাদের মজ্জাগত যে পুরুষতন্ত্র রয়েছে তাকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে হবে।”
ওয়াহিদা রেহমানের সঙ্গে মোট চারটি সিনেমায় কাজ করেছেন শাবানা আজমি।
এর মধ্যে আছে অপর্ণা সেন পরিচালিত ‘১৫ পার্ক অ্যাভিনিউ’, প্রকাশ মেহতার ‘জোয়ালামুখী’, গুলজারের ‘নামকিন’ এবং রাম কেলকারের ‘পিয়াসি আঁখে’।
সিনেমায় পাঁচ দশকেরও বেশি কর্মজীবন পার করেছেন ওয়াহিদা রেহমানও। এরমধ্যে ৯০টিরও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। ৫০,৬০, ৭০, ৮০, ও ৯০ -এর দশকে অসংখ্য সফল সিনেমার মুখ ছিলেন ওয়াহিদা রেহমান।
২০২১ সালের দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।
তিনি সত্যজিৎ রায়ের ‘অভিযান’ সিনেমাতেও অভিনয় করেন।
২০২১ সালে ’স্কেটার গার্ল’ সিনেমায় সবশেষ কাজ করেছিলেন ওয়াহিদা রেহমান।
আর আলিয়া ভাট ও রণবীর কাপুরের সঙ্গে ‘রকি অর রানি কি প্রেম কাহানি’ সিনেমায় দেখা গিয়েছিল শাবানা আজমিকে।
১৯৯৯ সালে সিনেমা জগতে ২৫ বছর পূর্ণ করায় মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মাননা পেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। এবার একই মঞ্চ থেকে সম্মাননা নেবেন নিজের অভিনয় জীবনের ৫০ বছর পূর্তিতে।
এ বছর মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শাবানা আজমির বর্ণিল অভিনয় জীবনের উদযাপন করবে। পাশাপাশি ক্যামেরার সামনে এবং পেছনে যে নারীরা ভারতীয় সিনেমায় অবদান রেখেছেন তাদেরও স্মরণ করা হবে।
সামনে ‘বান টিক্কি’ সিনেমায় দেখা যাবে শাবানা আজমিকে। এতে আরও আছেন অভয় দেওল এবং জিনাত আমান। এই সিনেমার সুবাদে ৪১ বছর পরে আবারও জুটি বাঁধছেন বলিউড ক্লাসিক যুগের দুই অভিনেত্রী শাবানা আজমি ও জিনাত আমন।