আপনি কি সিগারেট ছাড়ার কথা ভাবছেন? অনেকবার সিদ্ধান্ত নিয়েও ছাড়তে পারছেন না? তবে আপনার জন্য আছে একটি দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ী সংবাদ। বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান, এইতো সেদিন ঘোষণা দিলেন ধুমপান ছেড়েছেন তিনি। শাহরুখের চেইন স্মোকিং এর কথা কে-না জানে।
লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একবার নাকি কোন এক স্কুলের প্রচারণায় পরিস্থিতির চাপে পড়ে সিগারেট ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এতদিনের নেশা ছাড়েন কীভাবে! আবার প্রতিজ্ঞাও ভাঙতে পারেন না। কাজেই তিনি যেটা করলেন- চুরুট ধরলেন।
শাহরুখ খান তার ৫৯ তম জন্মদিনে ধূমপান ছাড়ার ঘোষণা দেয়ায় ভক্তরা রীতিমতো অবাক। শাহরুখ আবার সুনীলের পথেই হাঁটবেন না তো! এমন ঘটনা বিরল নয় ধুমপায়ীদের জন্য। বারবার ছেড়েও ফিরে যান সেই ধোঁয়ার জগতে।
মার্ক টোয়াইনের একটি বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে- পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে ধূমপান ত্যাগ করা। ইতিমধ্যে আমি ১ হাজার বার ওটা করেছি।
সে যাই হোক ইন্সটাগ্রামে শাহরুখের ফ্যান পেইজ ‘শাহরুখ ইউনিভার্স এফসি’ তে পোস্ট করা এক ভিডিও থেকে তার ধূমপান ছাড়ার ঘোষণার কথা জানা যায়।
ভিডিওতে দেখা যায় জন্মদিন উপলক্ষে শাহরুখ ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ নামের এক ইভেন্টে ভক্ত অনুরাগীদের সঙ্গে আলাপ করছেন। আলাপের এক পর্যায়ে শাহরুখ বলেন, “একটা ভালো খবর আছে, আমি আর ধূমপান করছি না।”
তবে ধূমপান ছাড়ার পরও মাঝে মাঝেই শাহরুখ নাকি হাঁপিয়ে উঠছেন। বোঝাই যাচ্ছে, দীর্ঘদিনের বাজে অভ্যাসের মূল্য আরও কিছুদিন তাকে দিতে হবে। নিয়মিত ধূমপানের আছে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব। আর তাই সময় থাকতেই এই অভ্যাসটি ত্যাগ করা উচিত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জেনে নেওয়া যাক ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ৫ উপকারিতা-
সুন্দর ত্বক
দীর্ঘদিনের ধূমপান রক্তনালীকে সংকুচিত করে। এর ফলে দেহে অক্সিজেনের স্বাভাবিক প্রবাহ হ্রাস পায় এবং ত্বকও বঞ্চিত হয় পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে।
ধূমপানের কারণে ঠোঁট হয়ে যায় কালচে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ধূমপানের কারনে শরীরে বার্ধক্য এসে যায় দ্রুত। এই অভ্যাসের কারণে ত্বক স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি কুঁচকে যায়।
ধূমপান ছেড়ে দিলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক অনেক বেশি অক্সিজেন পায়। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। তাই ত্বক ভালো রাখতে অনেক অনেক পয়সা খরচ না করে বরং ধূমপান ছেড়ে দিন।
ভয়ংকর দুর্গন্ধ
সিগারেটের গন্ধ এতটাই তীব্র যে ধূমপানের পর তার গন্ধ শরীরে তো রয়ে যাই-ই, কাপড়েও ছড়িয়ে যায়। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ধূমপান করেন, তাদের শরীর থেকে এই গন্ধ যেন যেতেই চায় না।
ধূমপায়ীর আশেপাশে থাকা মানুষের জন্য গন্ধটি খুবই অস্বস্তিকর। অধূমপায়ীদের এই গন্ধ ফেলে দেয় দারুণ সমস্যায়। এই গন্ধে তাদের শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়ে যায়। অনেকের আবার বমি বমি অনুভূতিও হয়।
চারপাশের মানুষের এমন নেতিবাচক অভিজ্ঞতা ধূমপায়ীর আত্মবিশ্বাস স্বাভাবিকভাবেই কমিয়ে দেয়।
তাই চিন্তা করে দেখুন, আপনিও কি একজন আত্মবিশ্বাসের সংকটে ভোগা ধূমপায়ী? তাহলে আজই ধূমপানকে বিদায় করে দিন।
অর্থনৈতিক সংকট
একজন নিয়মিত ধূমপায়ী কোন হিসেব ছাড়াই সিগারেট কিনতে থাকেন। যা কিনা তার দৈনিক যাপনকে ব্যয়বহুল করে তুলে। সিগারেটের পেছনে খরচ করা এই অর্থ, অর্থপূর্ণ কোন কাজে ব্যয় করলে জীবন যাপনে আরও স্বাচ্ছন্দ্য যুক্ত হতে পারে।
ধূমপানে ইতিবাচক কিছু তো নেই-ই উলটো এই অভ্যাস স্বাথ্যের অবনতি ঘটায়। কাড়ি কাড়ি অর্থও এর পেছনে ধূমপায়ীরা দেদারসে খরচ করেন।
তাই জীবনে স্বচ্ছলতা চাইলে ধূমপান পরিত্যাগ করুন।
প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি
সিগারেটের নিকোটিন হরমোনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। পুরুষদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের ধূমপান শুক্রাণুর উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। আর নারীদের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা হ্রাস করে। এমনকি গর্ভধারণকালীন জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে।
দৃষ্টি এবং শ্রবণশক্তির ক্ষতি
ধূমপান চোখের ক্ষতি তো করেই এমনকি ডেকে আনে অন্ধত্ব। এছাড়া ধূমপান চোখে ছানি পড়া এবং গ্লুকোমার সম্ভাবনাও বাড়ায়। অন্যদিকে এই অভ্যাসের কারণে কানের অভ্যন্তরে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ায় শ্রবণশক্তিরও ক্ষতি হয়। ফলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয় বাঁচাতে আজই ধূমপান ছাড়ুন।