গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে ঢাকার শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
শনিবার শাহবাগে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ ৬ দফা দাবিতে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন বেলা ৩টার পর রাজধানী বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধরা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হন। এ সময় হামলার প্রতিবাদে সড়কে বসে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা।
শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ায় জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়ক, কাটাবন সড়ক, মৎস্য ভবন সড়ক ও ফার্মগেট সড়কের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ যায়।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ বসু সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “একটি গোষ্ঠী আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রায়ের উপর হামলা করছে, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ঘটনায় দোষীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া আমাদের ঘোষিত ৬ দফা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে আমাদের এই আন্দোলন চলবে।”
একই দাবি শিববাড়ি থেকে আসা বাবু রায়ের। তিনি বলেন, “কোটা বাতিলের দাবিতে আমরাও একমত। ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের কোনও দ্বিমত ছিল না। কিন্তু সরকার পতনের পর আমাদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কেন হামলা করা হচ্ছে? এই হামলার প্রতিবাদে আমরা আজকে বিক্ষোভ করতে শাহবাগে এসেছি। আমাদের ছয় দফা মানতে হবে।”
প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব সাহা। তিনি বলেন, “আমাদের সম্প্রদায়ের উপর কেন হামলা হবে? দ্রুত হামলাকারীদের বিচার দাবি করছি।”
স্ত্রীসহ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতে মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন উত্তম কুমার সাহা। তিনি বলেন, “ছাত্রদের যে আন্দোলন হয়েছে, সেই আন্দোলনে আমার ছেলে বুয়েটে পড়ে, সেও আন্দোলন করেছে। আমার ছেলের বন্ধুরাও অংশ নিয়েছে। আন্দোলনে তারা পানি খাইয়েছে।
“এই আন্দোলনে কিন্তু আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজনও নিহত হয়েছে। তাহলে কী কারণে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা হলো। এখন তো কোনও নির্বাচন হয়নি যে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, তার জন্য আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করবে। এটা খুব কষ্ট লাগে।”
হিন্দুদের বাড়িঘরে জামায়াত-শিবির, বিএনপি হামলা করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এ হামলার জন্য রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান দায় এড়াতে পারে না।”
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে অনেকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই‘, “তুমি কে আমি কে, বাঙালী বাঙালী’ বলে স্লেগান দিতে থাকেন।
বিক্ষোভে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করার পাশাপাশি ৬ দফা দাবি তুলেন ধরেন তারা। দাবির মধ্যে রয়েছে- স্বতন্ত্র সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংসদে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ, জাতীয় বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন ও সংগঠিত সকল প্রকার নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে যে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়, অনেক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে আগস্টে তা এক দফা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। এরপর গণভবনসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ তাদের মন্দিরে হামলার অভিযোগ করে হিন্দু সম্প্রদায়। এই হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামসহ ঢাকায় কর্মসূচি পালন করেন তারা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন বন্ধসহ ৯ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ সনাতন পার্টি নামে একটি সংগঠন।
এ সময় তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা বন্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বিএনপি-জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। তবে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ ৯ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি তোলেন সংগঠনের নেতারা।