জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে এবার দুই দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ।
রবিবার শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার কামালের আদালত এই অনুমতি দেয়।
এর আগে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক মাহাবুল ইসলাম তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষের শুনানি করেন। আসামি পক্ষে আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে বলেন, “শাহরিয়ার কবির এজাহারভুক্ত ৩৯ নং আসামি। আসামিদের নির্দেশে ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলি চালানো হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। নিহত হয় যাত্রাবাড়ীতে রফিকুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তি।
“এই আসামি একজন নাস্তিক। মুসলমানদের বিরুদ্ধে উনি অনেক কথা বলেছেন। নাস্তিকরা আবার আওয়ামী লীগ সরকারকে পছন্দ করতেন। আওয়ামী লীগ সরকারও নাস্তিকদের ভরণ-পোষণ করে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তারা আবার রুখে দাঁড়াতেন।”
“এই হত্যা মামলার সাথে আসামি জড়িত রয়েছে। মামলার তদন্ত স্বার্থে প্রকৃতি রহস্য উদঘাটনের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি” বলেন ফারুকী।
এরপর আসামি পক্ষে আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ রিমান্ড বাতিল শুনানিতে বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে মামলায় সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। তিনি একজন শিক্ষক, কলামিস্ট। তিনি সারাজীবন শিক্ষকতা করেছেন। আসামির ভাগ্য খারাপ তিনি এর আগেই জেল গেলেন। এখন আবার যেতে হলো।
“আসামির হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, পায়ে রড লাগনো, অসুস্থ ব্যক্তি। যেহেতু তিনি অসুস্থ, তাই এই মামলার জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হলে তাকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।”
শুনানি শেষে বিচারকের উদ্দেশে এই আইনজীবী বলেন, “শাহরিয়ার কবির কিছু বলতে চান, আপনি অনুমতি দিলে।”
আদালত অনুমতি দিলে শাহরিয়ার কবির বলেন, “আমি এর আগে রিমান্ডে গিয়েছি। হুইল চেয়ার ছাড়া হাঁটতে পারি না। আমার পায়ে সমস্যা রয়েছে। মামলা বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না। তবে সঠিকভাবে আমার চিকিৎসার প্রয়োজন। গত ৪ মাস ধরে আমি অসুস্থ। আমি এখনও চিকিৎসার জন্য কারা হাসপাতালে রয়েছি। কাশিমপুর কারাগারে আমার ট্রিটমেন্ট হচ্ছে না।
“আমি সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত। আমার ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য একটু পুলিশ সুপারকে বলে দিতেন, তাহলে ভালো হতো। যদিও আইনজীবী এই বিষয়ে বলেছেন।”
এসময় এক বিএনপিপন্থী আইনজীবী চিৎকার করে বলেন, “অনেক বলেছেন, আর না। থামেন এবার, থামেন।”
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “যখন বাহিরে কোনও মিছিলে তাকে দেখি, তখন তিনি সুস্থ থাকেন। আদালতে আসলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এগুলো সব টালবাহানা।”
এসময় শাহরিয়ার কবির রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, “গত চার মাস আমাকে বাহিরে কোথায় দেখেছেন? কোনও ছবি/ভিডিও দেখাতে পারবেন।” এই প্রশ্নে জবাব দেননি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
বিচারক দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর মহাখালীর বামা থেকে শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ছাত্র আন্দোলনের সময় কাজের মেয়ে লিজা আক্তারকে হত্যার অভিযোগে রমনা মডেল থানার মামলায় তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ২৩ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শেষ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীর মনোয়ারা হাসপাতালের সামনে রফিকুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।