আন্দোলনের মধ্যে ঢাকায় এক কিশোর নিহতের মামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে সাত দিন ধরে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার ধানমণ্ডি থেকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার তাকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ধানমণ্ডি এলাকায় আব্দুল মোতালেব (১৪) নামে এক কিশোর হত্যার মামলায় তাকে হাজির করা হয় ঢাকা মহানগর হাকিম মাহবুব আহমেদের আদালতে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমণ্ডি মডেল থানার এসআই মো. খোকন মিয়া এই ঘটনার বিষয়ে শাজাহান খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন হেফাজতে রাখার আবেদন করেন।
শাজাহান খানের পক্ষে প্রাণনাথসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন জানান।
শুনানিতে তারা মানবিক দৃষ্টিতে শাজাহান খানের জামিন চাওয়ার সময় তিনি যে ৮ বারের সংসদ সদস্য, সেই কথা উল্লেখ করেন।
এসময় আদালতে উপস্থিত বিএনপি সমর্থন আইনজীবীরা চিৎকার করে বলেন- ‘অনির্বাচিত সরকার’।
কিছুক্ষণ দুই পক্ষের আইনজীবীদে মধ্যে বাগবিতণ্ডা চলার পর ৭২ বছর বয়সী শাজাহান খানের শারীরিক অবস্থার বিষয়টি তুলে ধরেন তার আইনজীবী।
তিনি বলেন, “তার হার্টে ৫টা ব্লক ধরা পড়েছে। ৯০% ব্লক রয়েছে। হার্টে রিংও পরানো আছে।”
এরপর আদালত ৭ দিন রিমান্ডের আদেশ দেয়।
বিকাল ৪টা ৪ মিনিটে শাজাহান খানকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তিনি হাসি মুখে কাঠগড়ায় দাঁড়ান। তারপর তিনি আদালতে উপস্থিত দলের নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে ইশারায় আশ্বস্ত করেন।
বিকাল ৪টা ২৩ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। এরপর শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন গত ৪ আগস্ট ধানমণ্ডি এলাকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন আব্দুল মোতালিব (১৪)। তিনি বুকে ও গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
এ ঘটনায় গত ২৬ আগস্ট নিহতের পিতা আব্দুল মতিন বাদী হয়ে ধানমণ্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। তাতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭৬ জনকে আসামি করা হয়। শাজাহান খানের নাম আসামির তালিকায় ২৩ নম্বরে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিরা আন্দোলন দমনে পুলিশ, র্যাব ও ১৪ দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনীসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সারাদেশে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। তাতে বাদীর ছেলে আব্দুল মোতালিবও নিহত হন।
গত ৪ আগস্ট জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান কিশোর মোতালিব।
পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় প্রতিটি সংসদে মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তার আগে তিনি জাসদ করতেন। ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদে গিয়েছিেলন তিনি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে নৌপরিবহনমন্ত্রী ছিলেন শাজাহান খান। বাংলাদেশ সড়ক শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি তিনি।