ভারতে স্পিনারদের জয়জয়কার সবসময়। সম্প্রতি দুজন বা তিনজন স্পিনার নিয়ে খেলে বিদেশি দলগুলোকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে তারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে চেন্নাইয়ের এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামের লাল মাটির পিচেও তারা তিন স্পিনার খেলাবে বলে জানিয়েছে পিটিআই।
তাই বলে বাংলাদেশের স্পিনও ফেলনা নয়। পরিসংখ্যান বলছে, অন্তত একবিংশ শতাব্দীতে ভারত সফর করা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্পিন চতুষ্টয় অন্যতম সেরা। একবিংশ শতাব্দীতে শ্রীলঙ্কা ২০০৯-১০ মৌসুমে গিয়েছিল ভারত সফরে । তাদের স্পিনারদের সম্মিলিত উইকেট ছিল ৮৫০টি (সিরিজ শুরুর আগে)।
এরপরই অবস্থান বাংলাদেশিদের। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে একবিংশ শতাব্দীতে ভারত সফর করা দলগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৫৭ উইকেট বাংলাদেশি স্পিনারদের। সাকিব আল হাসানের উইকেট ২৪২টি, তাইজুল ইসলামের ১৯৫, মেহেদী হাসান মিরাজের ১৭৪ আর নাঈম হাসানের ৩৬টি।
একবিংশ শতাব্দীতে ভারত সফর করা দলের স্পিনারদের উইকেট
(টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে)
দল মৌসুম উইকেট
শ্রীলঙ্কা ২০০৯-১০ ৮৫০
বাংলাদেশ ২০২৪-২৫ ৬৫৭
শ্রীলঙ্কা ২০০৫-০৬ ৫৭৩
অস্ট্রেলিয়া ২০০৪-০৫ ৫৫১
শ্রীলঙ্কা ২০১৭-১৮ ৫২৩
২০০৯-১০ মৌসুমে সফর করা লঙ্কান দলের মুত্তিয়া মুরালিধরনের টেস্ট উইকেট ছিল ৭৮৩টি। তাকে একপাশে সরিয়ে রাখলে শ্রীলঙ্কার বাকি স্পিনারদের সংগ্রহ ৬৭টি। সেই তুলনায় বাংলাদেশের স্পিনারদের সম্মিলিত শক্তি অনেক। এদের মধ্যে তরুণ নাঈম হাসানের অভিষেক ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামের বিপক্ষে। পাঁচ নম্বর বোলার হিসেবে আক্রমণে এসে অভিষেক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
এতদিনে সবমিলিয়ে খেলেছেন কেবল ১০ টেস্ট, এর ৩ ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট। বিদেশের মাটিতে অবশ্য একটি টেস্টও খেলা হয়নি তার। পাকিস্তানে দুই টেস্টে বাংলাদেশের পেসাররা ৩৬ উইকেটের ২১টি নেওয়ায় এবারও নাঈমের মতো প্রতিভাবানের খেলার সম্ভাবনা কম। নাঈমের মতো স্পিনার হয়তো বেঞ্চে বসে থাকবে, সুতরাং বাংলাদেশি স্পিনকে আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না।
সাকিব আল হাসান কদিন আগেও সারের হয়ে কাউন্টিতে সমারসেটের বিপক্ষে নিয়েছেন ৯ উইকেট। তার সেরাটার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ।একবিংশ শতাব্দীতে ভারত সফর করা দলের সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া স্পিনারের তালিকায় সাকিব আছেন আট নম্বরে। সিরিজ শুরুর আগে সাকিবের টেস্ট উইকেট ২৪২টি।
২০০৯-১০ মৌসুমে সর্বোচ্চ ৭৮৩ উইকেট ছিল মুত্তিয়া মুরালিধরনের, এই তালিকায় শীর্ষে আছেন তিনিই। ২০০৪-০৫ মৌসুমে শেন ওয়ার্নের উইকেট ছিল ৫২৭টি। এই তালিকাতেই মুরালিধরন ও শেন ওয়ার্নের নাম এসেছে দুবার। এছাড়া সাকিবের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন নাথান লায়ান (২০২২/২৩, ৪৬০ উইকেট), রঙ্গনা হেরাথ (২০১৭/১৮, ৪০৫) ও ডেনিয়েল ভেট্টরি (২০১০/১১,৩২৫ উইকেট)
মেহেদী হাসান মিরাজ পাকিস্তান সফরে হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য সিরিজ। সাকিবের সঙ্গে তার জুটিটা জমেছিল বেশ। এই দুজনের জন্য সুযোগই পাননি তাইজুল ইসলামের মতো স্পিনার।
একবিংশ শতাব্দীতে ভারত সফর করা দলের দ্বিতীয় সফল স্পিনারের উইকেট
(টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে)
স্পিনার দল মৌসুম উইকেট
তাইজুল ইসলাম বাংলাদেশ ২০২৪-২৫ ১৯৫
মন্টি পানেসার ইংল্যান্ড ২০১২-১৩ ১৪২
দিলরুয়ান পেরেরা শ্রীলঙ্কা ২০১৭-১৮ ৯৩
পরিসংখ্যান বলছে, সিরিজ শুরুর আগে একবিংশ শতাব্দীতে ভারত সফর করা দলগুলোর দ্বিতীয় সফল স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট তাইজুলের। এই অফস্পিনারের উইকেট ১৯৫টি। ২০১২-১৩ মৌসুমে ভারত সফরে আসা মন্টি পানেসারের ১৪২ উইকেট ছিল এতদিনের সেরা।
একবিংশ শতাব্দীতে ভারত সফর করা দলের তৃতীয় সফল স্পিনারের উইকেট
(টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে)
স্পিনার দল মৌসুম উইকেট
মেহেদী হাসান মিরাজ বাংলাদেশ ২০২৪-২৫ ১৭৪
মার্ক ওয়াহ অস্ট্রেলিয়া ২০০০-০১ ৫১
মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ ৩৯
শুধু তাই নয়, সিরিজ শুরুর আগে একবিংশ শতাব্দীতে ভারত সফর করা দলগুলোর তৃতীয় সফল স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট মেহেদী হাসান মিরাজের। তার উইকেট ১৭৪টি। ২০০০-০১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ওয়াহর উইকেট ছিল ৫১টি।
সাকিব, তাইজুল, মিরাজের ত্রয়ী খেললে তাই চেন্নাইয়ের লাল উইকেটে আতঙ্কে থাকতেই পারেন ভারতীয় ব্যাটাররা।