পুঁজিবাজারে কারসাজি ও আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সোমবার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ২৪ সেপ্টেম্বর সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে।
ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আবুল খায়ের হিরুকে জরিমানা করা হয় ২৫ লাখ টাকা। শেয়ার কারসাজির অভিযোগে হিরুর ব্যাংক হিসাব গত ২০ আগস্ট থেকে জব্দ রয়েছে।
সোমবার বিএফআইইউ থেকে সাকিব আল হাসান ছাড়াও তার স্ত্রী উম্মে রোমান আহমেদ, আবুল খায়ের হিরুর বাবা আবুল কালাম মাদবর, হিরুর ভাই মোহাম্মদ বাশার, বোন কনিকা আফরোজ ও ব্যবসায়ী মো. নাজমুল বাশার খানের ব্যক্তিগত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয় বিএফআইইউ।
ওই চিঠি পেয়েছে এমন এক ব্যাংক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “এই সকল ব্যক্তি ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অতীত ও বর্তমানের সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ। হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, লেনদেন বিবরণী জমা দিতে বলা হয়েছে।”
জনপ্রিয় ক্রিকেট অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান আওয়ামী লীগ সরকারের মনোনয়ন নিয়ে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
গত জুলাইয়ের শুরুতে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন মাসের মধ্যভাগে দমন-পীড়ন-হত্যার ঘটনায় সহিংস হয়ে ওঠে; যা আগস্টের শুরুতে তীব্র আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়।
এর পরপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। একটি হত্যা মামলায় আসামি করা হয় সাকিব আল হাসানকেও, যখন তিনি বিদেশে অবস্থান করছিলেন। এর ফলে দেশে ফিরতেও তাকে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।
প্যারামাউন্টের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করায় সাকিব আল হাসান ছাড়াও ইসহাল কমিউনিকেশনকে ৭৫ লাখ টাকা, আবুল খায়েরকে ২৫ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ টাকা, মোনার্ক মার্টকে ১ লাখ টাকা, লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজকে ১ লাখ টাকা এবং জাহেদ কামালকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সাকিব আল হাসান পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির শুভেচ্ছা দূতও হয়েছিলেন। একটি ব্রোকারেজ হাউজের অনুমোদনও পেয়েছেন।
তবে সাকিবের ব্যবসায় হাতেখড়ি রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে। এরপর ধীরে ধীরে পুঁজিবাজার, বিদ্যুৎকেন্দ্র, প্রসাধনী, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, কাঁকড়া ও কুঁচের খামারসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেন।
এর মধ্যে ব্যাংকের ব্যবসায়ও ঢুকতে চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা হয়ে ব্যাংকটির নিবন্ধন নিতে দেখা করেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে। তবে প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করতে না পারায় ব্যাংকটির নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সবশেষ যুক্ত হন ফুটওয়্যার ও ই-কমার্স ব্যবসায়। মোনার্ক মার্ট সাকিব আল হাসানের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, যা বেশ কয়েক বছর ধরেই কি আলোচনায় ছিল।
সব মিলিয়ে ক্রিকেটের মাঠ ছাপিয়ে করপোরেট জগতের বড় উদ্যোক্তা হয়ে উঠছিলেন সাকিব।
তবে রাষ্ট্রক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর থেকে খেলা ও ব্যবসা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সাকিব।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটা মিরপুরে খেলতে চেয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় দেশে ফেরা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
দেশে ফিরে নিরাপদে খেলা ও দেশ ত্যাগের নিশ্চয়তা পেলেই আসার কথা জানিয়েছেন তিনি।
২৯ সেপ্টেম্বর শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে গ্রামীণফোনের লভ্যাংশের চেক প্রদান অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, “সাকিব আল হাসানের পরিচয় দুটি, এটি মনে রাখতে হবে। তিনি একজন খেলোয়াড়। সে হিসেবে তার যতটা নিরাপত্তা দেওয়া দরকার সেটা দেওয়া হবে।
“অপরদিকে তিনি একজন রাজনীতিবিদও। আওয়ামী লীগের হয়ে রাজনীতি করেছেন। মানুষের মধ্যে তো এই দুই পরিচয় নিয়েই মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। এখন খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের একজন খেলোয়াড়কে যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়ার দরকার ততটুকু আমরা দেব।”