বীরেন্দর সেবাগ এতটা ভাবেননি। সাকিব আল হাসান জবাবটা যে এভাবে দেবেন। ১১ জুন সাকিবকে অফ ফর্মের জন্য অবসর নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সাকিবের আত্মসম্মানবোধের প্রশ্নও তুলেছিলৈন। মাত্র একদিনের ব্যবধানে ১৩ জুন সাকিবের ব্যাটে জবাব পেলেন সাবেক ভারতীয় ওপেনার। ৪৬ বলে অপরাজিত ৬৪ করলেন সাকিব। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই ম্যাচে সাকিবের ব্যাটিং কি দেখেছেন শেবাগ?
ক্যারিয়ার জুড়ে সাকিব এমন অনেক জবাব ব্যাটে-বলে দিয়েছেন। যখন চারিদিক থেকে প্রত্যাশা ও সমালোচনার তীর দিকে ধেয়ে গিয়েছিল। কখনও পারফরম করতে পারেননি বলে আবার কখনও মাঠের বাইরের কর্মকান্ডে। সেসবের কিছুই সাকিবকে কখনও ক্রিকেটের মনোযোগ হারাতে দেয়নি। দেখা গেছে এমন কিছুর পরের ম্যাচেই এই অলরাউন্ডার জ্বলে উঠেছেন।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত বছর মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুটো ইনিংসে বিশের ওপর রান ছিল সাকিবের। এরপর থেকে টানা দুই ইনিংসে বিশের ওপর রান করা হয়নি। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই রান খরায় ভুগছিলেন। তা চোখে লাগেনি। বিশ্বকাপের দুটি ইনিংসে ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনা জেঁকে ধরেছিল সাকিবকে।
প্রত্যাশা ও সমালোচনার চাপটা বেড়ে যাওয়াতেই স্বরূপে ফিরলেন সাকিব। যেন ফর্মে ফিরতে টনিক লাগে বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের। সেই অবস্থাটা তৈরি হয়েছিল ডাচ ম্যাচের আগে। আর তাই ১৯ ইনিংস পর টি-টোয়েন্টিতে ১৩-তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন তিনি।
সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১২-তম ব্যাটার হিসেবে ২৫০০ রানের বেশি করলেন তিনি। আর বিশ্বকাপে ৮০০ বা তার বেশি রান করা অষ্টম ব্যাটার হয়েছেন।
সাকিবের অর্জনগুলো অবশ্যই শেবাগের জানা। সংবাদ মাধ্যমে ঠিকই খবর পেয়ে যাবেন। ডাচদের বিপক্ষে সাকিব ফিফটি করেছেন। শেবাগ এটাও জেনে থাকবেন সাকিবের এই ফিফটি টি-টোয়েন্টিতে ১৩-তম। অথচ এই ভারতীয় ওপেনারের নিজের ফিফটি আছে মাত্র দুটি। অবশ্য সাকিবের ১২৪ টি-টোয়েন্টির বিপরীতে শেবাগ এই ফরম্যাটে খেলেছেন মাত্র ১৯টি ম্যাচ।
ম্যাচ কম খেললেও শেবাগের ক্রিকেটের জ্ঞান কম নেই। সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ক্রিকেটারদের কি করতে হয় তা জানেন। কিন্তু সাকিবকে পরামর্শ দেয়ার সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ারের প্রসঙ্গ নিয়ে এসেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল ও আফগানিস্তানের এক বোলারকে যখন খেলতে পারছিলেন না, তখন বুঝে গিয়েছিলেন তার সময় শেষ। শেবাগ তখনই অবসরের সিদ্ধান্ত নেন। শেবাগরা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে দিলেও সাকিব ছাড়েন না।
পাকিস্তানের এক পেসার ছিলেন রানা নাভিদ উল হাসান। ওয়ানডেতে এই পেসারের কাছে সর্বোচ্চ ৬ বার আউট হয়েছিলেন শেবাগ। চামিন্দা ভাস, শন পোলকের কাছে আত্মসমর্পনের সংখ্যাটাও একই। ৫ বার করে আউট হয়েছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন, মারভিন ডিলন, নুয়ান কুলাসেকারা, নাথান ব্রাকেন, কাইল মিলসের বলে। টেস্টে সর্বোচ্চ ৭ বার ডেল স্টেইনের কাছে আর ৬ বার করে ম্যাথিউ হোগার্ড, বেন হিলফেনহাসের কাছে। ওই রানা নাভিদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- শেবাগকে আউট করা খুব সহজ।
সহজ বলার কারণ রিভার্স সুইং বা ইন সুইং খেলতে পারতেন নাে এই ভারতীয় ব্যাটার। যে বোলারদের কাছে বেশিবার করে আউট হয়েছেন সবার মূল অস্ত্র ছিল রিভার্স সুইং। শেবাগের ব্যাট ও প্যাডে বেশ ফাঁকা থাকতো। ২০০৭ বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মর্তুজার বলে তার বোল্ড হওয়ার ভিডিও যে কোনও বাংলাদেশীকে আনন্দ দেবে।
এই বিশ্বকাপে আফ্রিকার বিপক্ষে পুল করতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন সাকিব। কটাক্ষ করে শেবাগ বলেছিলেন, “আপনি ম্যাথিউ হেইডেন বা অ্যাডম গিলক্রিস্ট নন যে পুল করে সফল হবেন।” সাকিব নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পুল করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। আর একই স্টেডিয়ামের কমেন্ট্রি বক্সে বসে সাবেক অজি গ্রেট ওপেনার হেইডেন প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সাকিবকে।
এবার শেবাগও নিশ্চয় নিজের ভুল শুধরে এই অলরাউন্ডারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবেন !