দুয়ারে কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এর প্রস্তুতিতে দেশের মাঠে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার শেষ সুযোগ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ। সেই সিরিজের ক্যাম্পে ১৭ জনের দলে নেই সাকিব আল হাসান।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা মাঠে গড়ানোর আগেই বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের নাম আইসিসিতে জমা দিতে হবে বিসিবিকে। যদিও সেই দলে ইচ্ছে মতো পরিবর্তনের সুযোগ আছে পরবর্তীতে। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কিনা ক্যাম্পে নেই দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসান।
এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয়ের সেই চিরাচরিত হেঁয়ালি, যা বিশ্বকাপ বা বড় কোনও উপলক্ষ্যের আগে বরাবরই করে এসেছেন তিনি। বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন পর্যন্ত অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিলেন।
নতুন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু নিশ্চিতভাবেই এই ক্যাম্পে চেয়েছিলেন সাকিবকে। কিন্তু ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এ মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরবেন তিনি। দেশে ফিরেই কি সরাসরি খেলবেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে?
যত বড় নামি খেলোয়াড়ই হোক, এভাবে কেউ জাতীয় দলে খেলতে পারেন না। সেটা স্মরণও করিয়ে দিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, ‘‘(সাকিব) বাংলাদেশে এলে সম্ভাবনা আছে ডিপিএলে এক-দুইটা ম্যাচ খেলার। তারপর আমাদের টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে ঢুকে যাবেন তিনি। সেখানে ক্রিকেটীয় স্কিল অনুশীলনের সুযোগ আছে। টিম ম্যানেজমেন্ট ও তিনি (সাকিব) যেভাবে চান, তারপর অবশ্যই চাইব যে টি-টোয়েন্টি সিরিজে যেহেতু পাঁচটা ম্যাচ আছে, শেষদিকে তিনি যেন খেলার সুযোগ পান।’’
বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ও খেলার মধ্যে থাকতে সাকিবের ডিপিএলে খেলার কথা বলেছেন লিপু। বিসিবির ক্রিকেট ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও জানিয়েছেন ডিপিএলের সুপার লিগে খেলে জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ দিকে সাকিবের যোগ দেওয়ার কথা।
অথচ শেখ জামালের শীর্ষ কয়েকজন কর্তা মিডিয়ায় জানিয়েছেন ডিপিএলে আর খেলবেন না সাকিব! তাহলে কি তাকে সরাসরিই জায়গা দিতে হবে জাতীয় দলে? নাকি মত বদলে ম্যাচ প্র্যাকটিসের জন্য ডিপিএলে খেলবেন তিনি।
প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে যদি ক্যাম্পে না থাকতেন সাইফউদ্দিন, তাওহিদ হৃদয়, শরিফুল ইসলামরা-তাহলে কি তাদের সুযোগ মিলত বিশ্বকাপ বা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে?
সাকিবের এভাবে কোনও কিছু তোয়াক্কা না করার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে ড্রেসিংরুমে যে কারণে একটা সময় ভুগতে হবে বিসিবিকে। তারপরও বিসিবি এর আগে কঠোর হয়নি সাকিবকে নিয়ে।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। সেবার বিশ্বকাপগামী দলের ফটোসেশনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ অন্যরা থাকলেও ছিলেন না শুধু সাকিব আল হাসান। আইপিএল খেলে আগের দিন দেশে ফিরলেও ফটোসেশনে আসেননি তিনি।
এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানিয়েছিলেন অসহায়ত্ব, ‘‘দুঃখজনক, আর কী বলব? এটা দুঃখজনক, যেহেতু দলের ফটোসেশন এখানে যখন ঢুকি, তখন তাকে ফোন করেছিলাম, কোথায় তুমি? বলল, ‘আমি তো চলে এসেছি (দেশে)।’ ও যে এসেছে জানিও না, পত্রিকায় পড়েছি। পরে বলল, ‘আপনার বাসায় আসব রাতে।’ বলেছি, এখন একটু দেখা হোক। বলল, ‘আমি তো বেরিয়ে গেছি।’ জিজ্ঞেস করে জানলাম, ওকে আগেই বলা হয়েছিল ফটোসেশন আছে। জাতীয় দল যাচ্ছে, ফটোসেশনে সবাই একসঙ্গে থাকবে। আমরা আশা করেছিলাম কিন্তু সে নাই।’’
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের তখনকার প্রধান আকরাম খান বেশ বিরক্তি নিয়ে ব্যবহার করেছিলেন ‘মিসিং’ শব্দটা। ২০১৮ সালের নভেম্বরে বিসিবি যখন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে সাকিবকেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করায় বিশেষ সম্মাননা দিয়েছিল, সে অনুষ্ঠানেও সাকিব ছিলেন না। ২০২২ সালের বিপিএল ফাইনালের আগেও ফটোসেশন না করে গিয়েছিলেন বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে। দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতা এড়িয়ে চললে ঐকতানে ব্যাঘাত ঘটে নিশ্চিতভাবে।
সবশেষ গত বিশ্বকাপেও একই ধারা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন আগেই। বিসিবি অধিনায়ক করে সাকিব আল হাসানকে। এরপর তামিম ইকবাল বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়লে উত্তপ্ত হয়ে উঠে ক্রিকেটাঙ্গন। সে সময় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলছিল বাংলাদেশ। সিরিজ শেষের পর দিনই জাতীয় দল বিশ্বকাপ খেলতে উড়াল দেয় ভারতে।
এর আগে আনুষ্ঠানিক কোনও ফটোসেশনই হয়নি! হয়নি কোনও সংবাদ সম্মেলনও। হয়তো সাকিব আল হাসান বিব্রতকর কোনও প্রশ্ন শুনতে চাননি তামিমকে নিয়ে। সংবাদ সম্মেলন না হলেও টি-স্পোর্টসে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়ে বিশ্বকাপের বিমানে উঠেছিলেন সাকিব।
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কের সময় হয় না, অথচ বেসরকারি টেলিভিশনের জন্য ঠিকই সময় বের করেছিলেন তিনি।
সেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে বিপিএল, ডিপিএল খেলেছেন সাকিব। করেছেন বিজ্ঞাপনের কাজ। হয়েছেন সংসদ সদস্য। এর ফাঁকে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন কেবল একটি টেস্ট। জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন প্রায় এক বছর আগে। অথচ বিশ্বকাপের ঠিক আগে পরিবারকে সময় দিতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় নেই গুরুত্বপূর্ণ ক্যাম্পে।
তাতে কি বার্তা দিচ্ছেন সাকিব? ফটোসেশন, সংবাদ সম্মেলনের মত এসব ক্যাম্পেরও দরকার নেই!