Beta
শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আলো-আঁধারের সাকিব

shakib_01
Picture of রাহেনুর ইসলাম

রাহেনুর ইসলাম

সাকিব আল হাসান এক বিস্ময়কর চরিত্র। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন প্রতিভা খুঁজে পাওয়া দায়। ব্যাটে-বলে তার অর্জনের ধারেকাছে কেউ নেই। তার কীর্তিতে লাল-সবুজের পতাকায় কত কীর্তিগাঁথা রচিত হয়েছে। এমন প্রতিভাবানরা বোধহয় খেপাটেও হয় খানিকটা, যা নিয়ে সমালোচনাও আছে। তাই বলে কীর্তিমানের কীর্তি তো আর ম্লান হয় না। সুবাদে দেশজুড়ে তার বিশাল ভক্তকুল, যারা সাকিবের নামে জয়ধ্বনি করে প্রতিনিয়ত।

এই জনপ্রিয়তার নতুন পরীক্ষায় নেমেছেন সাকিব। পরীক্ষা এবার জাতীয় নির্বাচনের ভোটে। এই বৈতরণি কীভাবে পার হবেন, সেটাই দেখার বিষয়।

সাকিব যদি চাঁদ হয়, তার আলোয় আলোকিত আমাদের ক্রিকেট। এই চাঁদেরও কিছু কলঙ্ক থাকে, সেগুলো একসঙ্গে করলেই দাঁড়ায় আলো-আঁধারের সাকিব আল হাসান।

আলোকিত সাকিব

১. আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সাকিব আল হাসানের রান ১৪৪০৬ ও উইকেট ৬৯০টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি ছাড়া আর কোন অলরাউন্ডারের ১২ হাজার রান ও ৬০০ উইকেট নেই।

২. সাকিব আল হাসানের ওয়ানডে রান ৭৫৭০ আর উইকেট ৩১৭টি। ওয়ানডে ইতিহাসে দ্রুততম অলরাউন্ডার হিসেবে ৫০০০ রান ও ২৫০ উইকেটের রেকর্ডটা সাকিবেরই।

৩. ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিব ব্যাট হাতে করেছিলেন ৬০৬ রান, পাশাপাশি নিয়েছিলেন ১১ উইকেট । বিশ্বকাপ ইতিহাসে এমন অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্স করতে পারেননি কেউ।

৪. আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব ফরম্যাট মিলিয়ে সাকিব ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ৪১বার। ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার জিতেছেন ১৬বার, যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

৫. আন্তর্জাতিক ১১৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সাকিবের উইকেট ১৪০টি, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১৪৭ উইকেট নিয়ে তার সামনে আছেন নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি।

৬. ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৩৬ ম্যাচে সাকিব আল হাসানের রান ১৩৩২। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটা সপ্তম সর্বোচ্চ রানের কীর্তি।

৭. ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিবের উইকেট ৪৩টি, যা ১১তম সেরা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ১৩০০ রান ও ৪০ উইকেটের কীর্তি সাকিব ছাড়া নেই কারও।

৮. ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসির অলরাউন্ড র‌্যাংকিংয়ের টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি-তিন ফরম্যাটেই শীর্ষে পৌঁছেছিলেন তিনি।

৯. আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রান করা ও উইকেট নেওয়ার রেকর্ড সাকিবের। মিরপুরে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তার রান ৪৫০০-এর বেশি। উইকেটও পেয়েছেন ২৪০টির বেশি।

১০. ২০১৯ সালে ইএসপিএনের জরিপে বিশ্বের ৯০তম সেরা ক্রীড়া অ্যাথলেট হয়েছিলেন সাকিব।

১১. ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসপিএ) বিচারে দেশের ইতিহাসে সেরা ক্রীড়াবিদদের মর্যাদা পেয়েছেন সাকিব।

অন্ধকারাচ্ছন্ন সাকিব

১. ২০২৩ সালের মার্চে দুবাইয়ে বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভ খানের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘শোরুম আল হাসান’ নামে সমালোচনাটা তীব্র হয় আরও।

২. ২০২২ সালে বেটিং সাইট বেটউইনারের সহযোগী সংবাদমাধ্যম ‘বেটউইনার নিউজ’ এর সঙ্গে জড়িয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হন আবারও। ২ আগস্ট নিজের অফিসিয়াল ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়ে বেটউইনার নিউজ–এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন সাকিব। বিসিবির চাপে পরে সরে এসেছিলেন সেই চুক্তি থেকে।

৩. জুয়াড়ির দেওয়া প্রলোভনের তথ্য না জানানোয় ২০১৯ সালে সাকিব সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন দুই বছরের জন্য। পরে এক বছর শাস্তি ভোগ করে মাঠে ফেরেন তিনি।

৪. বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালের ৫ মে থেকে ২০২২ এর ১০ মার্চ পর্যন্ত ৪টি তদন্ত চালায়। তাদের তদন্তে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম হেরফের করার জন্য মোনার্ক হোল্ডিংসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়। আর এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাকিব আল হাসান।  

৫. বিসিবির অনাপত্তিপত্র না নিয়ে ২০১৮ সালে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব। তাকে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়ায় টেস্ট ও ওয়ানডে থেকে অবসরের হুমকি দেন সাকিব। এর শাস্তি হিসেবে বিসিবি তাকে নিষিদ্ধ করে ৬ মাস।

৬. ২০২১ সালের জুনে প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর মুশফিকুর রহিমের বিপক্ষে সাকিবের বোলিংয়ে এলবিডব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় লাথি মেরে স্টাম্প ভাঙেন এ অলরাউন্ডার। পরের ওভারে বৃষ্টি নামলে আম্পায়ার খেলা বন্ধের নির্দেশ দিলে তিনি স্টাম্প উপড়ে ফেলেন নিজের হাতে । এজন্য তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি জরিমানা গুণেন পাঁচ লাখ টাকা।

৭. ২০১৮ সালে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে চুক্তি হয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের। নানা বিতর্কিত কান্ডে ২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের সঙ্গে চু‌ক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত জানায় দুদক। 

৮. ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ছক্কা মারতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ দিয়েছিলেন সাকিব। এই আউট নিয়ে ধারাভাষ্যকাররা আলোচনা করার সময় প্যাভিলিয়নে বসে থাকা সাকিব অশালীন ইঙ্গিত করেন যা টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এজন্য তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি।

৯. ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার পর দর্শকদের উদ্দেশ্যে মধ্যমা আঙুল দেখিয়ে বাজে ইঙ্গিত করেছিলেন সাকিব।

১০. ২০১৩ সালে অটোগ্রাফ চাওয়া এক দর্শকের কলার চেপে ধরে বিতর্কে জড়ান আবারও।

১১. ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে চলার সময় তার স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে ড্রেসিংরুম ছেড়ে এসে এক দর্শককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছিলেন সাকিব।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত