নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার। ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যও। এসব ছাপিয়ে তার আরেক পরিচয় হলো, তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের সন্তান।
মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন শমী, তার বিরুদ্ধে উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ইশতিয়াক মাহমুদ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ।
বুধবার ছিল মামলার রিমান্ড শুনানি। তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানার এসআই মৃত্যুঞ্জয় পণ্ডিত মিঠুন শমী কায়সারকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চান।
বেলা ৩টার দিকে তাকে তোলা হয় আদালতে। শমী কায়সারের আইনজীবী তার পরিচয় তুলে ধরে জামিন চান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে চাওয়া হয় রিমান্ড।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “এরা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। হাসিনাকে বাঁচাতে মাঝে মধ্যে নাটক করত। আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোটের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নাটক মঞ্চস্থ করেছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাবিতে আন্দোলন চলছিল। তারা বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে সেখানে দাঁড়ায়। বাঁধনসহ যারা আন্দোলনের পক্ষে ছিলো তারা এদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। আন্দোলনকারীদের ওপর গরম পানি ঢালার পরামর্শ দেয়। হাসিনাকে খুশি করতে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বাজে ভাষায় বক্তব্য দিত।”
শুনানিকে শমী কায়সারের বক্তব্যও শুনতে চান ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান।
শমী কায়সার বলেন, “আমার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য ফ্যাসিস্ট হাসিনার সঙ্গে থেকেছি, অর্থ সহায়তা করেছি। অর্থ সহায়তা তো দূরের কথা, তখন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। নেট চালু করতে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ১৮ জুলাই বৈঠক করেছি। আমার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে।”
জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বলেছি, এত মানুষ মারা গেছে…”
ঠিক এ সময় হইচই শুরু করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তখন শমী কায়সার কথা বলা বন্ধ করে দেন।
দুই পক্ষের শুনানির পর বিচারক শমী কায়সারকে তিন দিন রিমান্ডে নিতে পুলিশকে আদেশ দেন।
তাপস বললেন, আন্দোলন দমনে কাজ করেননি
একই আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গান বাংলার চেয়ারম্যান কৌশিক হোসেন তাপসেরও। তারও তিন দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক।
শুনানিতে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “তাপস একজন তবলাবাদক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গান বাংলা চ্যানেল সৈয়দ শামসুদ্দিন আহমেদের মালিকানা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দখলে নেয়। সরকারি কনসার্টগুলো তাপস একতরফা নিয়ে নিত। তাকে সাহায্য করত আশরাফুল আলম খোকন। মাঝে মাঝে তাপস গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনাকে গানও শোনাত।”
তাপসের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। তার দাবি, ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন তাপস।
পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন তাপসও।
তিনি বলেন, “আন্দোলন দমনে আমি সহযোগিতা করিনি। বলা হচ্ছে, গরম পানি ঢালার জন্য বলেছি। যে অন্যায় আমি করিনি, জোর করে আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
তখন বিচারক বলেন, “আপনি পলাতক ছিলেন?”
জবাবে তাপস বলেন, “প্রতিদিন গান বাংলার অফিসে গিয়েছি। বাসায়ও অবস্থান করেছি। লোকেশন ট্র্যাকিং করলে পাওয়া যাবে। আমি পলাতক ছিলাম না।”
এর আগে সোমবার ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কৌশিক হোসেন তাপসকে।
শমী কায়সার ও তাপসের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ীসসহ অন্যান্যরা কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। উত্তরা পূর্ব থানাধীন চার নং সেক্টরস্থ আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাই স্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে। ইসতিয়াকের পেটে গুলি লাগে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর ইশতিয়াক মাহমুদ বাদী হয়ে পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১২৬ জনের নাম উল্লেখসহ মামলা করেন।
মামলার নয় নম্বর আসামি তাপস, ২৪ নম্বর শমী কায়সার।
ছেলেকে নির্দোষ দাবি তাপসের মায়ের
এর আগে সকালে তাপসকে আদালতে দেখতে যান তার মা মেহের নিগার চঞ্চল।
সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে মেহের নিগার বলেন, “আমার ছেলেকে রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সে কখনোই এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত হতে পারে না। আমি মা হিসেবে এটা গ্যারান্টি দিচ্ছি।
“তদন্ত না করে, গড়ে যদি সবাইকে এক পাল্লায় মাপা হয়, সেটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনারা সত্য ঘটনা সুন্দর করে তুলে ধরবেন।”