Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সামসুল হক কলেজের সাফল্য কোন মন্ত্রে

ঢাকার মাতুয়াইলের সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
ঢাকার মাতুয়াইলের সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

ক’দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল। তাতে দেখা যায়, ঢাকার একটি কলেজের ৫১ জন শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। চিকিৎসক হতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তারা।

ভর্তি পরীক্ষার ফলে সম্মিলিত মেধাতালিকায় একাদশ স্থান পেয়েছেন এই কলেজেরই শিক্ষার্থী সানজিদা সুলতানা মাহী। কলেজটি হলো ঢাকার মাতুয়াইলের সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

শামসুল হন খান কলেজের পাশাপাশি ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, তাদের ১৩ জন মেয়ে, ১৭ জন ছেলে। এই কলেজটি যাত্রাবাড়ীতে। দুটি কলেজেরই অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা।

কী কারণে দুই কলেজের এমন ঈর্ষণীয় সাফল্য- জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান মোল্লা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, শিক্ষকদের সহযোগিতা, শিক্ষার্থীদের কঠোর অধ্যবসায় এবং দুই কলেজের পড়ার মানই কারণ।

মাতুয়াইলের সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ শুধু মেয়েদের জন্য। মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজটিতে ছেলে-মেয়ে উভয়ই পড়েন। প্রভাতী শাখায় মেয়েরা, দিবা শাখায় ছেলেরা। দুই কলেজের শিক্ষার্থীরাই মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।

মাহবুবুর মোল্লা বলেন, “এখানে এবারে ভর্তির সুযোগ পাওয়া এমন শিক্ষার্থীও রয়েছে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবে আমরা প্রমাণ করতে চেয়েছি, দারিদ্র্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সেখানে কেবল দরকার নিজ ইচ্ছা, আর সঙ্গে গাইডেন্স। সেই গাইডেন্সটা আমরা দিয়েছি। বাকিটা তারা নিজেরাই করেছে।”

মাতুয়াইল এলাকার স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সামসুল হক খান ১৯৮৯ সালে নিজের নামে কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯৯৩ সালে সেটি উচ্চ মাধ্যমিক হিসেবে হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ড. মাহবুবুর রহমান সে বছরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দেন। তখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল মাত্র ১২৫ জন। এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি।

মাহবুবুর বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানটি কিন্তু ২০১২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় আর ২০১৫ সালে প্রথম হয়। সুতরাং শিক্ষার্থীদের এই সাফল্য হঠাৎ করে আসেনি। এটা ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে। যার ধারাবাহিকতা আমরা এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও দেখতে পাচ্ছি।”

শিক্ষার্থীদের প্রতি কতটা মনোযোগ দেন, তা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ছোট থেকেই শিক্ষার্থীদের স্বপ্নবাজ করে গড়ে তুলি। আমরা তাদের শিখিয়েছি, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-মেয়ে, ধর্ম-বর্ণ কোনটিিই বিশেষ কিছু নয়। কেবল মানুষ হতে হবে, মানবিক হতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে।”

এই কলেজের কেউ কোচিং সেন্টারে যায়নি দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা এমনভাবে কলেজে পড়িয়েছি, অর্থাৎ আমাদের পাঠদান পদ্ধতিটাই এমন ছিল যে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে হয়নি।

“তারপরও সবাই তো সমান নয়। যাদের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি বা ম্যাথের মতো বিষয়গুলোতে ক্লাসে সমস্যা হতো, তাদের জন্য আমরা ছুটির পর স্পেশাল ক্লাস নিতেন শিক্ষকরা।”

দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে নিজের বেতন থেকে ভর্তির টাকাও দিয়েছেন বলে জানান অধ্যক্ষ মাহবুবুর।

ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মাহবুবুর রহমান মোল্লা স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের পর কীভাবে নিজের নামে আলাদা কলেজ হলো- সেই প্রশ্নে মাহবুবুর বলেন, “শামসুল হক খান কলেজ তো মেয়েদের জন্য। সবাই এর সম্পর্কে জানত। কিন্তু ছেলেদের জন্য তখন এমন কিছু ছিল না। তখন এলাকার স্থানীয়রা আমাদের বলেন ছেলেদের জন্য এমন কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে।”

এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন সাড়ে পাঁচশর মতো শিক্ষক রয়েছেন। দুটোই অনাবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কেবল মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেই নয়, এর আগে ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও তার প্রতিষ্ঠানের ফলাফল ভালো ছিল। ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ৯৬ জন। তাদের মধ্যে এ প্লাস পায় ৮৯৯ জন, পাসের হার ছিল ৯৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।

গত বছরে ৩৫ জন শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। বুয়েটসহ অন্যান্য প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ছেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

সামসুল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পাস করে সম্মিলিত মেধা তালিকায় একাদশ স্থান অর্জন করা সানজিদা হক মাহী ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। তার বড় দুই ভাই-বোনও এখান থেকেই পাস করেছেন। তার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।

কলেজের সাফল্যের কারণ নিয়ে সানজিদা বলেন, “এখানকার শিক্ষকরা আসলে অন্যরকম। নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি তারা আমাদের জন্য নির্ধারিত সময়ের পর বিশেষ ক্লাস নিতেন। “এখানে কারও প্রতি শিক্ষকদের কোনও বায়াসনেস ছিল না, আমাদের সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া হতো। যে কারণে আমরা সবাই সববিষয়ে ভালো করে জানতাম, যেটা সম্মিলিতভাবে আমাদেরকে ভালো ফলাফলে সাহায্য করেছে।”

এই প্রতিষ্ঠানে শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত কঠোর নিয়ম কানুনের কথাও বলেন সানজিদা।

মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর এখন কার্ডিওলজিস্ট হওয়ার স্বপ্ন এই তরুণীর। কারণ, হৃদরোগে ২০২১ সালে বাবাকে হারাতে হয়েছিল তাকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত