Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

দেশ ছাড়ার ‘আগের দিনই’ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

গত ৫ অগাস্ট হেলিকপ্টারে কুর্মিটোলায় গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে ভারতে যান তিনি।
গত ৫ অগাস্ট হেলিকপ্টারে কুর্মিটোলায় গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে ভারতে যান তিনি।
[publishpress_authors_box]

যেদিন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছিলেন, পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তার আগের দিনেই নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। এমনটাই বলছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

এদিকে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আর তাতেই শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে যায়।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা।

খবরটি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান সেদিন বিকালে সাংবাদিকদের সামনে এসে প্রথম দিয়েছিলেন। এরপর রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে তা জানান।

শেখ হাসিনা এখন ভারতে রয়েছেন। তিনি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কোনও দেশে আশ্রয় পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশটিতে থাকবেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিদেশে থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মায়ের খবরাখবর দিচ্ছেন।

ডয়চে ভেলে বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেছেন, “শেখ হাসিনার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত একদিন আগে নেওয়া হলেও তা তখন ঘোষণা করা হয়নি।”

রবিবারও শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন। কারফিউ কঠোর করেছিলেন। কঠোর হওয়ার বার্তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনেও এসেছিলেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও পদত্যাগের কোনও বার্তা পাননি।

সজীব ওয়াজেদ জয়।

জয় বলছেন, তার মায়ের সিদ্ধান্তটি সবাই জানতেন না।

“আমরা কয়েকজন শুধু জানতাম যে, তিনি ঘোষণা দেবেন, তিনি পদত্যাগ করছেন এবং সংবিধান অনুযায়ী যাতে একটি ট্রানজিশন অব পাওয়ার হয়, সেটাই ছিল তার প্ল্যান।”

একদিন আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে তখন ঘোষণা না দেওয়ার কারণ কী ছিল- এ প্রশ্নে জয় বলেন, “ওটা পরের দিন ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল যে একটু প্রস্তুতি নিয়ে ট্রানজিশন অব পাওয়ার কী হবে সংবিধান অনুযায়ী। এটা তো হুট করে করা যায় না।”       

সেই পরিকল্পনা কেন বাস্তবায়িত হয়নি- সেই কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “তবে যখন তারা (আন্দোলনকারীরা) গণভবনের দিকে মার্চ করা শুরু করল, তখন আমরা ভয়ে শেখ হাসিনাকে বললাম যে আর সময় নেই, তোমার এখনই বেরিয়ে যেতে হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে সারাদেশ থেকে মানুষকে রাজধানীতে আসার আহ্বান জানিয়েছিল। তা ঠেকাতে সকালে ঢাকায় পুলিশের কঠোর অবস্থান দেখা গেলেও দুপুরের ঠিক আগে হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরে পড়ে।

এরপর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল শাহবাগের দিকে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে শহীদ মিনার থেকে শেখ হাসিনার সরকারি বাড়ি গণভবনের দিকে রওনা হয় সেই মিছিল।

গণভবনের বিছানার ম্যাট্রেস, সেটিও নিতে ভোলেননি এই ব্যক্তি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর গণভবনে ঢুকে পড়ে জনতা; যে যা পায়, তাই নিয়ে যায়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

তখনই শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে গণভবন থেকে একটি হেলিকপ্টারে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন বিমান তাদের ভারতের আগরতলা নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা যান দিল্লিতে।

শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করতে হলো কেন- ডয়চে ভেলের এ প্রশ্নে জয় বলেন, “বাংলাদেশে যেভাবে সংঘর্ষ চলছিল, জ্বালাও-পোড়াও চলছিল, তারা (আন্দোলনকারীরা) সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, তারা গণভবন হামলা করবে।

“শেখ হাসিনা কিন্তু দেশ ছাড়তে চাননি। আমরা পরিবার থেকে তাকে কনভিন্স করলাম যে এরা শুধু আন্দোলনকারী না, এরা তোমাকে হত্যা করে ফেলবে। তোমাকে দেশ ছেড়ে যেতেই হবে।”

শেখ হাসিনা এখন কেমন আছেন-জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা এখন দিল্লিতে আছেন। আমার বোন তার কাছে আছেন। আমার বোন দিল্লি থাকেন। শেখ হাসিনা ভালো আছেন। তবে তার খুবই মন খারাপ।

“শেখ হাসিনা খুবই দুঃখিত, দেশের জন্য তার বাবা জান দিয়েছেন, পুরো পরিবার জান হারিয়েছে। যে দেশের জন্য তিনি জেল খেটেছেন, এত পরিশ্রম করেছেন, এত উন্নয়ন করেছেন, সেই দেশের মানুষ তাকে এভাবে অপমান করে বের করে দেবে, তার ওপর আক্রমণ করতে যাবে- এটা আমরা কেউই কল্পনা করিনি।”

ভারতে মায়ের সঙ্গে দেখা করার সম্ভাবনা আছে কি না- এর জবাবে জয় বলেন, “হ্যাঁ, এক পর্যায়ে আমি যাব। তবে সেটা কখন, তা ঠিক হয়নি।”

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

সেনাবাহিনীর সমর্থন প্রত্যাহার

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবারের আগেই সেনাপ্রধান ওয়াকার ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলেন, সেখানে তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর সেনাপ্রধান সেই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়ে আসেন।

সেই বার্তাটি অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল যে সরকারেরর প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থন আর নেই।

ওই সময়ে নিজেদের অবস্থান নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার কিছু এখনও বলেননি, যিনি বিয়ের সূত্রে শেখ হাসিনার আত্মীয়।

তবে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন রয়টার্সকে বলেছেন, সেনা মোতায়েন করায় ানেক সৈন্যকে বাইরে বের হতে হয়েছিল। তারা সার্বিক অবস্থা দেখে অস্বস্তিতে পড়ছিলেন। তা থেকে সেনাবাহিনী প্রধানের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছিল।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কারফিউ ভেঙে জনতার মিছিল দেখে শেখ হাসিনা আশ্রয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এরপর দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে শেখ হাসিনাকে আসতে দেওয়া হয় বলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন।   

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

আওয়ামী লীগের কী হবে

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার দলের এখন ছন্নছাড়া অবস্থা। ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি প্রায় সব জেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলটির নেতাদের বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে। কোনও নেতার খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না।

শেখ হাসিনা দেশত্যাগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কি বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে যায়নি- ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, “তাদের ওপর হামলা শুরু হয়ে গিয়েছিল সরকার পতনের আগে থেকেই। ঢাকা ও বিভিন্ন জায়গায় তাদের ওপর হামলা হচ্ছিল। তাদের কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে।

“এখানে শুধু যে সরকারের দোষ দেওয়া হয়, আওয়ামী লীগের দোষ দেওয়া হয়, এটা ঠিক নয়। এখন দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার নাই, নির্যাতন তো চলছে। আমাদের সব মন্ত্রীর বাসা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আর আমার পরিবারকে হত্যা করা হয়। আমাদের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। কিছু মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সংঘর্ষ তো আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ তো এখন আর সংঘর্ষের জন্য দায়ী নয়।”

জয় আগেই জানিয়েছিলেন, তার ৭৬ বছর বয়সী মা আর রাজনীতিতে ফিরছেন না।

সেক্ষেত্রে জয় নিজে দেশে এসে রাজনীতিতে যোগ দেবেন কি না- এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারও রাজনীতিতে আসার কোনও পরিকল্পনা নেই। 

জয় বলেন, ‘‘তিনবারের মতো আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ক্যু হলো। তিনবারের মতো সবকিছু হারিয়ে বিদেশে থাকতে হলো।

“আমি আর আমার মা বাদে আমরা সবাই বিদেশে অনেক বছর ধরে আছি। আমরা এখানে সেটেলড। আমাদের এখানে জীবনের কোনও অসুবিধা নেই। আমরা এখানে থাকতে অভ্যস্ত।”

শেখ হাসিনার ছেলে জয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসাবে নয়া দিল্লিতে থাকছেন।

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত শেখ রেহানা বা তার সন্তানদের কেউ রাজনীতিতে আসবে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, “না, তাদের রাজনীতিতে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই।”      

গণভবনে গত ৩ অগাস্ট পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটাই তার শেষ ছবি এসেছিল সংবাদ মাধ্যমে।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তার তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টার পদে ছিলেন জয়।

সেই বিষয়টি তুলে তিনি বলেন, “দেশের জন্য এত করেছি যে, গত ১৫ বছরে আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ বানিয়েছি। এটা আমার স্বপ্ন ছিল। আমি সরকার থেকে কোনও বেতন নিইনি। বিনামূল্যে এই কাজ করেছি।

“প্রচুর পরিশ্রম করেছি বাংলাদেশকে ডিজিটাইজড করতে; গ্রামে পর্যন্ত এর সুবিধা পৌঁছাতে। এই যে উন্নয়ন আমি করেছি, তারপরও যদি বাংলাদেশের মানুষ আমার পরিবারের সঙ্গে এরকম করে, তাহলে আমাদের আর কিছু বলার-করার নেই।”

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এখন কে থাকবে-এ প্রশ্ন করা হলে জয় বলেন, “এখন আর এটা আমাদের দায়িত্ব নয়। আওয়ামী লীগকে তারা মনে হচ্ছে, শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

“আর যদি নির্বাচন হয়ও, আওয়ামী লীগকে তারা নির্বাচন করতে দেবে কি না, আওয়ামী লীগকে তারা ঠিকমতো মাঠে নামতে দেবে কি না, এ বিষয়ে এখন কিছুই জানা নেই। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে আমি আমার নেতাকর্মীদের বলতে পারি না যে, তারা বের হোক বা একত্র হোক, কারণ তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। তাদের জান বাঁচানো আমার প্রথম দায়িত্ব।”  

আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে মুজিব পরিবারের ভূমিকা নেওয়া উচিৎ কি না-এর জবাবে জয় বলেন, “এটা উচিতের বিষয় নয়। এখানে বিষয়টা হচ্ছে, আমাদের কি তারা নির্বাচন করতে দেবে? প্রশ্ন হলো সেখানেই। নির্বাচন যদি তারা নাই করতে দেয়, আওয়ামী লীগকে যদি তারা মারধর করতে থাকে, তাহলে সে চেষ্টা করে লাভ নেই। শুধু আমাদের মানুষ মারা যাবে।”

আন্দোলনকারীদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে শেখ হাসিনাপুত্র বলেন, “তারা দাবি করছে, এটা গণতান্ত্রিক আন্দোলন। মানুষ হত্যা করা, পুলিশ হত্যা করা, দেশের প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলা করা, প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির ওপর হামলা করা, জ্বালাও-পোড়াও করা, লুটপাট করা-এটা কোনও আন্দোলন নয়। এটা তো হচ্ছে সন্ত্রাস, জঙ্গি।”

ড. মুহাম্মদ ইউনূস হতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। ছবিটি গত ২৮ জানুয়ারির।

দেশের কী হবে

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দািয়ত্ব নিতে যাচ্ছেন।

এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জয় বলেন, “আমাদের সুশীল সমাজ অনেকদিন ধরে চাইছে যে তিনি (ইউনূস) দেশ চালানোর সুযোগ পাক। তিনি এখন সুযোগটা পাচ্ছেন। তিনি কীভাবে দেশ চালাতে পারবেন, আমি তা দেখতে চাই। দেখার অপেক্ষায় আছি। একটা দেশ চালানো অত সহজ ব্যাপার নয়।”

আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, এমনটা কেন মনে হচ্ছে-এর জবাবে জয় বলেন, “এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে যে আলোচনা চলছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কেউ কোনও যোগাযোগ করছে না, কথা বলছে না। আমরা কী করব?”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনায় আওয়ামী লীগকে কি আমন্ত্রণ জানানো উচিত-এর জবাবে জয় বলেন, “আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করলে, সেই নির্বাচন কি দেশের বাকি অর্ধেক মানুষ মানবে? সেই নির্বাচন তো তারা কোনোদিন মানবে না।”

ভোট হলে আওয়ামী লীগই জিতবে দাবি করে জয় বলেন, “আওয়ামী লীগ মরে যায়নি। আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলাদেশের সব থেকে পুরাতন দল। দেশে এখন ১৭ কোটি মানুষ। যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, আমি জানি, আওয়ামী লীগ ভোটে জিতে আসবে।

“শতভাগ ভোট কোনোদিন কোনও গণতন্ত্রে কোনও সরকার পায় না। আমাদের বিরুদ্ধে যারা ভোটে হেরে গেছে, তারপর তারা ভোট বয়কট করেছে, এরাই আওয়ামী লীগ বিরোধী। তাদেরকেই দেখা গেছে। তবে আওয়ামী লীগের যারা সমর্থক, তারা কিন্তু দেশে আছে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে জয় বলেন, “দেশের অর্থনীতি গতকাল পর্যন্ত ভালোই ছিল। হঠাৎ এ কথা বলা হচ্ছে, কারণ এ বছর দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। তবে দ্রব্যমূল্য সারা বিশ্বে গত এক/ দুই বছরে বেড়েছে। তার আগে দেশের মাথাপিছু আয় তিন গুণ বেড়েছে। ভারত থেকে বেশি হয়ে গেছে।

“এখন দেশের অর্থনীতির কী হবে, জানি না। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পর্যন্ত অর্থনীতি ভালোই ছিল। গত ২/১ বছরে চাপ পড়েছিল। তবে সেটা আমাদের দোষে নয়। দুর্নীতির জন্য নয়। আর আমাদের সরকারের আমলে যখন দুর্নীতি বেড়ে গেছে, আমরা তার বিচার করেছি। এর আগে বাংলাদেশের কোনও সরকার দুর্নীতির বিচার করে নাই। আমাদের নিজস্ব লোকজন যারা দুর্নীতি করেছে, তাদেরও ধরা হয়েছে।”

আন্দোলনে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেসব বিচারের দাবি করা হচ্ছে-এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে জয় বলেন, “বিচার অবশ্যই হওয়া উচিৎ। আমাদের সরকার তো বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিল। তিন সদস্যের জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তারা সেই বিচারের সময় দিল না। এখন এটা আর আমাদের দায়িত্ব নয়।”

সামনের দিনগুলোতে দেশের পরিস্থিতি কেমন দেখতে পাচ্ছেন- জানতে চাইলে জয় বলেন, “টেলিভিশনে, অনলাইনে লুটপাটের ভিডিও যা দেখেছি, তাতে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ সিরিয়ার মতো হয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে কতদূর উন্নতি হবে, দেখা যাক।

“তবে এখন যা বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ হয়ত পাকিস্তানের মতোই হবে। আমি কনফিডেন্ট, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ বলা শুরু করবে, শেখ হাসিনার শাসন ছিল বাংলাদেশের গোল্ডেন পিরিয়ড। এটা তারা অতি শিগগিরই বলা শুরু করবে।” 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত