ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। এই সরকারের অগ্রাধিকার হলো- আইনশৃঙ্খখলা বাহিনীর দ্বারা সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা। দুর্নীতির কারণে দেশের সব শেষ হয়ে গেছে। বিচার বিভাগ ভেঙে পড়েছে।
“দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে, পাতানো নির্বাচন করা হয়েছে। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে তরুণ সমাজ বেড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে।”
ছাত্র আন্দোলনে হতাহতদের কথা স্মরণ করে আবেগঘন হয়ে পড়েন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা। ছাত্র আন্দোলনে শত শত মানুষ মারা গেছে। অনেক ছাত্র চোখে গুলি খেয়েছে, আমি তাদের দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা জানি না, ওদের কী হবে। পৃথিবীর কোনও দেশের ছাত্রদের এত ত্যাগ করতে হয়নি। পৃথিবীর কোথাও নাগরিকরা এতটা মানবাধিকার বঞ্চিত হয়নি।
“বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। ঠিক করতে সময় লাগবে। আশা করি, নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে সবাই পাশে থাকবেন।”
দেশ পুনর্গঠনের পর নির্বাচন
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার; তবে দেশের আইন থেকে শুরু করে প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থা পুনর্গঠনের পর নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
মতবিনিময় সভার পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃতি করে তার প্রেস সচিব বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) খুব দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছেন। অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেটটা হচ্ছে- নির্বাচনটা তখনই করবেন যখন রিফর্মগুলো ক্যারি আউট করা যায়। যেটা জুডিশিয়ারি থেকে সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে, সিকিউরিটি রিফোর্সে, মিডিয়াতে। সমস্ত কিছু উনি রিফর্ম অ্যাড্রেস করার পর অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রুত নির্বাচন করতে পারে, এটা হচ্ছে ওনাদের মূল কাজ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে হত্যাকাণ্ড তদন্ত করবে জাতিসংঘ; অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান এটাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যা করা হয়েছে, এটার গ্রহণযোগ্য ও পক্ষপাত অবলম্বন না করে একটা তদন্ত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, মতবিনিময় সভায় জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার ৫০ জনের বেশি কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। কূটনীতিকরা কোনও প্রশ্ন করেছেন কি না- জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে প্রেস সচিব বলেন, “প্রশ্নের উত্তর ছিল না। উনি সমর্থন চেয়েছেন। বাংলাদেশকে পুনর্নিমাণে পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন।”
ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীরা যে বাংলাদেশ চায়, সেটা করার চেষ্টা করবেন। এমন একটা বাংলাদেশ- যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে, বাক স্বাধীনতা থাকবে, মানবাধিকার থাকবে। একইসঙ্গে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশ যত আন্তর্জাতিক অ্যাগ্রিমেন্ট করেছে, তার যত লিগ্যাল অবলিগেশন আছে, ততগুলো ফুলফিল করা হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ, গ্লোবাল এজেন্সিসহ পার্টনারদের রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে সহায়তা অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করেছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার এখন জোর দিচ্ছে, ম্যাক্রো ইকোনমিক স্টাবিলিটি নিশ্চিত করার বিষয়ে, জানান শফিকুল আলম।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শূণ্যতা পূরণে গত ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন এ সরকার গঠনের পর বিদেশি কূটনীতিকদের একবার ব্রিফ করেছিলেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।