সংঘাত-সহিংসতার অবসানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, তিনি সংঘাত চান না। আলোচনার জন্য গণভবনের দরজা খোলা রয়েছে।
“তারা যদি আমার সঙ্গে বসতে চায়, তাহলে আমি বসতে রাজি। তারা যদি এখনইও আসতে চায়, কথা বলতে চায়, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তাদের দাবি কী কী বাকি আছে, আমি তা শুনতে চাই, যেটা আমাদের সাধ্যর মধ্যে, তা আমি পূরণ করতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।”
আন্দোলনকারীদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যখনই আন্দোলনকারীরা কথা বলতে চায়, আলোচনা করে সমাধান করতে চায়, আমি তাদের সঙ্গে নিজেই বসতে রাজি।
“আমি তাদের সঙ্গে বসব, তাদের কথা কথা শুনব, তাদের দাবি বারও কিছু আছে কি না, তা আমার শুনতে হবে।”
“আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারী যদি আলোচনা করতে চায়, আমি এখনও রাজি, যে কোনও সময় তারা আসতে পারে। দরকার হলে তাদের গার্জিয়ানদের নিয়েও আসতে পারে,” বলেন তিনি।
শনিবার গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন বলে বাসস জানিয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দেন।
তারা হলেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
কোটা সংস্কারের পরও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তাদের আলোচনায় ডাকলেন।
আন্দোলনের মধ্যে আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
বিচারের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।”
সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততায়ও সরকারের আপত্তি নেই বলে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।
পেশাজীবীদের সঙ্গে এই সভায় প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিল করা হয়েছে।
সর্বোচ্চ আদালতে নির্দেশনায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে সরকার নামিয়ে আনলেও আন্দোলন থেমে নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন এই আন্দোলন ঘিরে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের গুলিতে নিহতদের শাস্তিসহ ৯ দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার মিছিল-সমাবেশ করছে তারা। রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’র ডাকও দিয়েছে তারা।
২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দিয়েছিল সরকার। তবে গত জুন মাসে হাইকোর্টের এক রায়ে কোটা পুনর্বহাল হলে তার প্রতিক্রিয়ায় এই মাসের শুরুতে পুনরায় আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যেই গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা পাবে?”
তার সেই বক্তব্যের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাতে জোরদার হয় আন্দোলন। পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালালে পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে গড়ায়।
পরদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে আন্দোলনকারীদের আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানালেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। আদালতে শুনানি এগিয়ে আনতে আইনমন্ত্রীর আশ্বাসেও হয়নি কাজ।
১৮ জুলাই সংঘাত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এরপর কয়েকদিনে দুই শতাধিক নিহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে সরকার।
এরপর আন্দোলনকারীদের ছয় সমন্বয়ককে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ধরে নেওয়া হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা সম্বলিত তাদের ভিডিও বার্তাও দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমে।
তবে গত বৃহস্পতিবার ছয় সমন্বয়ক ছাড়া পাওয়ার পর বলেন, তাদের ওই বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তারা এখনও আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।