তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে তিনি ভারতে গেছেন।
সোমবার দুপুরের পর তিনি ঢাকা থেকে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পৌঁছান। সেখান থেকে তার দিল্লি যাওয়ার খবর দিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম।
তার আগে ঢাকায় সেনানিবাসে সাংবাদিকদের সামনে এসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ব্যাপক সহিংসতায় গড়ানোর পর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গড়ালেও রবিবারও কঠোর অবস্থানে ছিলেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
তিনি আন্দোলন দমনে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেন। মোবাইল ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সোমবার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণায় অটল থাকার পর সাবেক একদল নেতা কর্মকর্তা তার পক্ষে সমর্থন জানালে দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। বিভিন্ন জেলায় সেনাসদস্যদের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা যেতে থাকে।
সোমবার সকালে ঢাকায় পুলিশ তল্লাশি চৌকি বসিয়ে তল্লাশি শুরু করলেও দুপুরের আগে যখন ঘোষণা আসে যে সেনাপ্রধান ভাষণ নিয়ে আসছেন, তখনই দ্রুত চিত্র পাল্টে যায়। পুলিশ সড়ক থেকে সরে পড়তে থাকে, সেনা অবস্থানের পরিসরও বাড়তে থাকে।
এরমধ্যেই দুপুরে শেখ হাসিনার দেশের বাইরে চলে যাওয়ার খবর আসে। তার আগে সকালে তাকে বঙ্গভবনে যেতে দেখা গিয়েছিল।
বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে আগরতলায় পৌঁছেছেন।
জি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় গেছেন। তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ পাননি।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, শেখ হাসিনা আগরতলা থেকে বিমানে নয়া দিল্লি রওনা হন।
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শেখ হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে নামে।
দিল্লিতে তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল রয়েছেন। তবে দিল্লি থেকে শেখ হাসিনা লন্ডনে যেতে পারেন বলে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে।
শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আন্দোলনকারীদের একটি দল গণভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যায়। তারা এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকে পড়ে।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর যে অবস্থা হয়েছিল, গণভবনেও তাই ঘটে।
ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যালয়, শেখ হাসিনার বাড়ি সুধা সদন, ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা ভাংচুর হয়।
এরমধ্যে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দলটির নেতাদের কেউই প্রকাশ্যে নেই।
তবে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেইসবুকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, “শেখ হাসিনার পর আপনাদের কী হবে, তা আমাদের চিন্তার বিষয় না, আমার পরিবারেরও চিন্তার বিষয় না। আপনারা বুঝবেন।”
তার সেই ভিডিও আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পাতায়ও ভিডিও বার্তাটি পোস্ট করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জয় কোথা থেকে ভিডিওটি দিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এর মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ কয়েকটি নির্বাচনে জয়ী হয় তার দল আওয়ামী লীগ।
বিরোধী দল দমন করে তিনি ‘আয়রন লেডি’ হিসাবে বিদেশে পরিচিতি পেলেও স্বৈরাচারের তকমা নিয়েই তাকে বিদায় নিতে হলো। শুধু তাই নয়, দেশও ছাড়তে হলো।