পালিয়ে যাওয়া ছাড়া শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে বীরত্বের কিছু দেখতে পাননি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “পৃথিবীর যারা অসীম সাহসী নেতৃত্বদানকারী এবং দেশপ্রেমিক হয় তারা নিজের দেশ রেখে নিজের নেতাকর্মীদের ফেলে চলে যায় না।”
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার নয়াপল্টনে নিহত রিকশাচালক মোহাম্মদ কামালের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যান রুহুল কবির রিজভী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রিকশাচালকের পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া অর্থ সহায়তা।
সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের রিজভী বলেন, “আজকে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে গিয়ে কত কথাই না বলছেন। একদিন তার এক মন্ত্রী বলেছিলেন, অমুকের কন্যা কখনও পালায় না। আমরা তো শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে পালানো ছাড়া বীরত্বের কিছু দেখিনি।”
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। নানা ঘটনা পরিক্রমার মধ্য দিয়ে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “মর্মান্তিক সেই হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচ বছর তিনি (শেখ হাসিনা) বিদেশে পালিয়ে ছিলেন। তিনি তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে এক বছর কিংবা ৬ মাস পরেই দেশে ফিরতে পারতেন। কিন্তু তিনি আসেননি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি দেশে ফিরতে পেরেছিলেন। আর ফিরেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করেছিলেন। তিনি দেশে ফেরার ঠিক ১৩ দিনের মাথায় জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণ করেন।”
নেতাকর্মীদের বিপদের মধ্যে ফেলে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন এমন অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “পৃথিবীর যারা অসীম সাহসী নেতৃত্বদানকারী এবং দেশপ্রেমিক হয় তারা নিজের দেশ রেখে, নিজের নেতাকর্মীদের ফেলে রেখে যায় না।
“খালেদা জিয়া কি পেরেছেন? দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা কত চেষ্টা করেছে, পারেনি। কিন্তু তখনও আপনাকে (শেখ হাসিনা) চেষ্টা করে তারা সফল হয়েছিল। পরে শেখ হাসিনা অভিমান করে মইনুদ্দিনকে বললেন, ‘উনি গেলেন না কিন্তু আমি কেন যাব’?”
রিজভী বলেন, জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে কারাগারে রোগে-শোকে কাতর হয়েও খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকামী মানুষের পাশে ছিলেন।
জনস্রোত ধেয়ে আসবে একথা আগেই বুঝতে পেরেছেন জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “জনগণের ক্ষোভের যে প্রবাহ, সেই প্রবাহ দেখে আমি আগেই বলেছিলাম আপনার রাজ সিংহাসন উল্টে যাবে। ঠিকই উল্টে গেছে। পালিয়ে গেছেন তার বন্ধু প্রতিম দেশে।
“এটাতো কাপুরুষের কাজ। আওয়ামী নেতাকর্মীরা কী এটা দেখতে পান না? নিজের আত্মীয়স্বজন, নিজের ছেলেমেয়েকে পার করে নিয়ে গেলেন। অথচ নেতাকর্মীদের ফেলে চলে গেলেন।”
এসময় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি জাহিদুল কবির, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাদেশে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি
টানা তিন দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ১১টা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচারের দাবিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্ন্দ্রীয় কার্যালয় বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইট, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তাছাড়া প্রত্যেক পাড়া-মহল্লাতেও সকাল থেকেই বিএনপির মিছিল এবং অবস্থান চোখে পড়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শুধু ঢাকা নয়, দেশের প্রত্যেক জেলা, উপজেলায় এই অবস্থান কর্মসূচি রাখা হয়েছে। যেকোনো ধরনের সহিংসতা রুখতে আমরা প্রস্তুত আছি।”
প্রতিটি ওয়ার্ডের মোড়ে মোড়ে বিএনপি অবস্থান নিয়েছে জানিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক বলেন, “আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেজন্য আমরা সজাগ আছি।”