ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত ত্যাগ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নাকচ করে দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হয়। যেখানে বলা হয়, ভারত ছেড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন শেখ হাসিনা। কয়েকটি খবরে এমনও দাবি করা হয় যে, আমিরাতের আজমানে নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের মালিকানাধীন বাড়িতে এখন অবস্থান করছেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করতে সকাল সন্ধ্যার ভারত সংবাদদাতা কথা বলেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে। ভারতীয় কর্মকর্তারা এসব খবরকে ‘ফেইক নিউজ’ বলে উড়িয়ে দেন।
এদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অবস্থান এখন কোথায়, সে খবর সরকারের কাছে নেই।
শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান নিয়ে খোঁজ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
ভারত থেকে সংবাদদাতা সেদেশে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের বরাত দিয়ে আরও জানিয়েছেন, ভারত ত্যাগের কোনও পরিকল্পনা আপাতত আওয়ামী লীগ সভাপতির নেই।
আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের পারিবারিক সূত্রও জানিয়েছে, দুবাই কিংবা অন্য কোনও দেশে ওসমান পরিবারের মালিকানাধীন বাড়িতে শেখ হাসিনার অবস্থানের খবর তাদের জানা নেই।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ওসমান পরিবারের পারিবারিক সখ্য রয়েছে। সম্প্রতি শামীম ওসমানকে প্রথমে ভারতের দিল্লিতে ও পরে দুবাইয়ের একটি শপিংমলে দেখা যায় বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর আসে।
এসব সূত্র মিলিয়ে শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে আরব আমিরাতে চলে গেছেন এবং শামীম ওসমানের বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা, সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। তারপর থেকে তিনি দিল্লির উপকণ্ঠে একটি আধা-সামরিক বাহিনীর অতিথি নিবাস বা ‘সেইফ হাউজে’ রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
যদিও নয়া দিল্লির পক্ষ থেকে তাদের অবস্থানের বিষয়ে কিছুই প্রকাশ করা হয়নি।
শেখ হাসিনা মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও চাকরিসূত্রে দিল্লির বাসিন্দা। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক (আরডি) হিসেবে কর্মরত। সে হিসেবে তার বর্তমান কর্মস্থল ভারতের রাজধানী দিল্লিতে।
এর আগে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ছয় বছর ভারতেই নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
তবে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে আশ্রয় নিতে হয় শেখ হাসিনাকে। সেসময় শোনা গিয়েছিল, তিনি ইউরোপের কোনও দেশে আশ্রয় চাইবেন। যদিও তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছিলেন, তার মা অন্য কোনও দেশে আশ্রয়ের আবেদন করেননি।
এরই মধ্যে বিচারের মুখোমুখি করতে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাচ্ছে বর্তমান সরকারের সমর্থকরা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য উপদেষ্টারাও তাকে ফেরানোর বিষয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেছেন।
শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট এরই মধ্যে বাতিল করেছে সরকার। নিয়ম অনুযায়ী, কূটনৈতিক পাসপোর্ট থাকলে ভিসা ছাড়াই অন্য দেশে ৪৫ দিন অবস্থান করা যায়।
এখন সেই পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় শেখ হাসিনা ভারতে এখন কোন স্ট্যাটাসে রয়েছেন, তা জানা যায়নি। তিনি কোনও বিশেষ ভিসায় ভারতে অবস্থান করছেন, না কি তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও ভারত সরকার পুরোপুরি নীরব।
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পরপরই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় সভা ডাকেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে সভায় সর্বসম্মতভাবে শেখ হাসিনাকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী ভারতে অবস্থানের অনুমোদন দেওয়া হয়।