দেশ ছাড়ার আগে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, “আমার মা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। তিনি সে সময়ই পাননি।”
বাংলাদেশ সময় শনিবার মধ্যরাতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে রয়টার্স। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে চান বলেও এ সাক্ষাৎকারে জানান জয়।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। ওইদিন বিকেলে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তবে হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, “মায়ের পরিকল্পনা ছিল একটি বিবৃতি দেবেন এবং নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।”
“কিন্তু ঠিক সেসময় আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে এগোতে শুরু করে” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেখানে তার হাতে আর সময় ছিল না। এমনকি আমার মা তার জিনিসপত্র গোছানোরও সময় পাননি। তাই সংবিধান অনুযায়ী, তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।”
এক সরকারের পতন থেকে আরেক সরকারের উত্থানের পথরেখা
৫ আগস্টের ভাষণে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাও দেন সেনাপ্রধান। এর পর ভেঙে দেওয়া হয় সংসদ।বৃহস্পতিবার শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ ছাড়া যে তত্ত্বাবধায়ক (অন্তর্বর্তী) সরকার গঠিত হয়েছে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায়।
গত ৬ আগস্ট এক প্রতিক্রিয়ায় জয় বলেছিলেন, তার মা আর রাজনীতি করতে চান না। অবশ্য দুদিন পরে সে বক্তব্য সংশোধন করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরলে শেখ হাসিনাও ফিরবেন।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে জানান জয়। তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই তিন মাসের ভেতর হতে হবে।
একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্য তাকে অনুপ্রাণিত করেছে বলে জানান জয়। ওই বক্তব্যে খালেদা জিয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ভুলে শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার বার্তা দিয়েছিলেন।
খালেদা জিয়ার ‘অতীতকে অতীতে রাখার’ বক্তব্যে আনন্দিত জানিয়ে জয় বলেন, “আসুন অতীত ভুলে যাই। আমরা আর প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাই না। আমাদের এখন একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন, তা সরকারে থেকে হোক আর না থেকে হোক।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে চাই।”
পরবর্তী নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে লড়বেন কি না, জানতে চাইলে শেখ হাসিনার ছেলে বলেন, “এই মেয়াদের পর আমার মা অবসরে যেতে চেয়েছিলেন। এরপর যদি দল আমাকে চায়, তাহলে আমি অবশ্যই বিবেচনা করব।”
বিচারের জন্য প্রস্তুত
রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, তার মা আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি হতেও প্রস্তুত ছিলেন।
“গ্রেপ্তারের ভয়ে আমার মা কখনও ভীত হননি। তিনি কোনও অন্যায় করেননি। তার সরকারের অন্যরা অন্যায় করেছেন মানে এই নয় যে আমার মা সেগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। তার অর্থ এই নয় যে সেসব কিছুর জন্য আমার মা দায়ী।”
তবে আন্দোলনরতদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর নির্দেশ সরকারের পক্ষ থেকে কে দিয়েছিল সে সম্পর্কে কিছু বলেননি জয়।
তিনি বলেন, “যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সহিংসতার নির্দেশ কাউকেই আমার মা দেননি। পুলিশ সহিংসতা থামানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা অত্যধিক বলপ্রয়োগ করেছিল।”
“আমাদের সরকার তৎক্ষণাৎ, আমিও ওই আলোচনায় ছিলাম, আমি মাকে বলেছিলাম, আমাদের এখনি (ছাত্রলীগকে) বলতে হবে যেন হামলা না করে, সহিংসতা বন্ধ করে।”
জয় তার পছন্দমাফিক সময়ে দেশে ফিরবেন জানিয়ে বলেন, “আমি কখনো বেআইনি কিছু করিনি। তাহলে আমাকে কেউ থামাবে কীভাবে?”
রাজনৈতিক দলগুলি কোথায় যাচ্ছে না মন্তব্য করে জয় বলেন, “আমাদের মুছে ফেলা যাবে না। আমাদের সাহায্য ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের ছাড়া বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব হবে না।”