শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরের মধ্যে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। যেখানে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়া তার, কিংবা তার পরিবারের জন্য কোনও সমস্যা নয়।
আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পেইজ থেকে প্রায় ছয় মিনিটের ভিডিও বার্তাটি প্রচার করা হয়। জয় কোথা থেকে এই ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তা জানা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, “আমি সজীব ওয়াজেদ জয়। কোটা নিয়ে এই যে ছাত্রদের আন্দোলন, কোটার বিরুদ্ধে আমরাও ছিলাম, আমাদের সরকার কোটা সরিয়ে নিয়েছে, তাদের সম্পূর্ণ দাবি মেনে নিয়েছে।
“এটা আদালতের একটা রায় ছিল, সরকারের ছিল না। তাও আমরা আপিল করে দ্রুত এই কোটা তুলে দেই। তাতেও আন্দোলনকারীরা সন্তুষ্ট না। আমরা তাদেরকে আলোচনায় ডেকেছি। একটা জুডিশিয়াল কমিশন করেছি, যে সংঘর্ষ, যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে- সেটার বিচারের জন্য।”
দেশবাসীর উদ্দেশে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “ঠিক আছে, শেখ হাসিনার পর আপনাদের কী হবে, সেটা আমারও চিন্তার বিষয় না, আমার পরিবারেরও বিষয় না। আপনারা বুঝবেন।
“তবে, এইভাবে সংঘর্ষ করে, হত্যা করে ক্ষমতা দখল করা যাবে না। এটা আর আন্দোলন না, যখন পুলিশকে হত্যা করা হচ্ছে, নিরীহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, বাসায় বাসায় আগুন দেওয়া হচ্ছে, এটা হয়ে গেছে সন্ত্রাস।”
তিনি বলেন, “পুলিশে যারা অতিরিক্ত ফোর্স ব্যবহার করেছে, তাদের সাসপেন্ড করেছি- তাতেও এই আন্দোলনকারীরা সন্তুষ্ট নয়।
“প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাদেরকে ডেকেছেন আলোচনার জন্য। তাতেও তারা সন্তুষ্ট না, আমরা যতোই ছাড় দিতে থাকি, যতোই তাদের দাবি মেনে নিতে থাকি, ততোই তারা কিছুতেই সন্তুষ্ট না, তাদের দাবি বাড়তেই থাকে। এখন দাবি সরকারের পতন।
“তবে সরকারের পতনের পর কী হবে, কী হবে- এটা কেউ ভেবেছেন?”- এ প্রশ্ন রেখে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষা করতে চাই। সরকার পতন করে শুধু মাত্র একটা উপায় আছে, সেটি হচ্ছে নির্বাচন। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, কোনও অনির্বাচিত সরকার এক মিনিটের জন্য ক্ষমতা নিতে পারবে না। তাদের এই নির্বাচনের দাবিও যদি মেনে নেই…
“কিন্তু তারা তো আমাদের কোনও দাবিই মেনে নিচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “আমরা যদি এখন সরকার পতনের দাবিও মেনে নেই, তারা দাবি করবে, এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন করব না। তখন কী হবে, এটা কেউ ভেবেছেন?”
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “জানি, আমাদের সেই সুশীল সমাজ আবার আলোচনা করছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা তো আমাদের আছে- আপনারা ভুলে গেছেন?
“যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল বিএনপির আমলে, আরেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসল, দেশের কী অবস্থা হয়েছিল। শেষমেশ সব থেকে বড় কথা, আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, যে অনির্বাচিত সরকার এক মিনিটের জন্য দেশের ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগ, আমরা আন্দোলন করেছি, আমরা আন্দোলন করে এ দেশকে স্বাধীন করেছি। আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি।
“আন্দোলন করে আমরা দেশের উন্নয়ন করেছি। আপনারা যে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বলছেন, আজকে শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ এতদূর আসতে পারত? অসম্ভব। কেউ কল্পনা করতে পারে নাই যে, বাংলাদেশ এরকম উন্নতি করবে। এরকম উন্নয়ন হবে।”
তীব্র আন্দোলনের মধ্যে সেনাপ্রধানের ভাষণের ঘোষণার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর আসে। তিনি ভারতের আগরতলায় গেছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে।
জি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় গেছেন। তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ পাননি।
সোমবার দুপুরে বিবিসি বিভিন্ন সংবাদ সংস্থাকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর দেয়।
এএফপি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ সরে গেছেন।
শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে গণভবন থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার খবর রয়টার্সও দিয়েছে। তবে শেখ হাসিনা কোথায় আছেন, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
Posted by Sajeeb Wazed on Monday, August 5, 2024