চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তিও দাবি করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ ও দাবি জানান শেখ হাসিনা। বিকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সেই থেকে ভারতেই আছেন তিনি। দেশটির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে দিল্লিতে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
ভারত যাওয়ার পর থেকে তিনি প্রকাশ্যে কোনও কথা না বললেও, বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পেইজ থেকে তার বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। তবে এই ফেইসবুক পেইজটি কোথা থেকে পরিচালিত হয়, তা জানা যায়নি।
সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা ও হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পরদিন তাকে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম। এর প্রতিবাদে আদালত প্রাঙ্গণে আগে থেকে জড়ো হওয়া চিন্ময়ের অনুসারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
তাদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছোড়ে পুলিশ ও বিজিবি। সেসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে চিন্ময়ের অনুসারীরা। সংঘর্ষ আদালত প্রাঙ্গণ পেরিয়ে আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অংশ নেয় স্থানীয়রাও।
সংঘর্ষের পর সেবক কলোনি এলাকায় সাইফুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়। পরে তা উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়।
এই মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, “চট্টগ্রামে একজন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে, এই হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তি দিতে হবে।”
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একজন আইনজীবী তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিল, আর তাকে এভাবে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে তারা সন্ত্রাসী। তারা যেই হোক না কেন শাস্তি তাদের পেতেই হবে।”
বর্তমান সরকারকে ‘অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারী’ হিসেবে দাবি করে বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, “ইউনূস সরকার যদি এই সন্ত্রাসীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে তাকেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। দেশবাসীর প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ান। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।”
সরকার সবক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে বলে মনে করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের জীবনের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তোলেন।
এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে এসবের তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের একজন শীর্ষ নেতাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
“চট্টগ্রামে মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে মসজিদ, মাজার, গির্জা, মঠ এবং আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি আক্রমণ করে ভাংচুর ও লুটপাট করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ছাত্র-জনতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা, হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমি এসব নৈরাজ্যবাদী ক্রিয়াকলাপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”