ছাত্র-জনতার লাগাতার আন্দোলনের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে আছেন। তবে সেখানে তিনি ঠিক কোথায় আছেন, তা মঙ্গলবারও খোলাসা করেননি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কোথায়, এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলছে জল্পনা। ভারত থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন বলে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়। অসমর্থিত সূত্রের বরাতে তারা জানায়, সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার এনডিটিভিকে বলেন, “দেশের অভিবাসন আইন অনুযায়ী, কাউকে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার কোনও বিধান নেই। যাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রয়োজন, তাদের প্রথমে নিরাপদ যে দেশে পৌঁছান, সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত।”
শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, এমন সময় মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল করেছে দেশটির সরকার। এ বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।
ভারত থেকে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে না পারলে সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কোথায়, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই তার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয় বুধবার দাবি করলেন, তার মা কোনও দেশেই আশ্রয় চাননি।
এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, ‘‘মায়ের আশ্রয়ের অনুরোধ সম্পর্কিত যেসব প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভুল। তিনি কোথাও আশ্রয়ের জন্য অনুরোধ করেননি। তাই ব্রিটেন বা আমেরিকার পক্ষ থেকে আশ্রয়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ও অসত্য।’’
জয় আরও দাবি করেন, তার মায়ের আশ্রয় নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে কোনও রকম আলোচনাই হয়নি।
এর আগে ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় জানান, শেখ হাসিনার ভারত থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা এখন দিল্লিতে আছেন। আমার বোন তার কাছে আছেন। আমার বোনতো দিল্লিতে থাকেন। শেখ হাসিনা ভালো আছেন। তবে তার খুবই মন খারাপ।”
সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, “শেখ হাসিনা খুবই দুঃখিত, যে দেশের জন্য তার বাবা জীবন দিয়েছেন, পুরো পরিবার প্রাণ হারিয়েছে, যে দেশের জন্য তিনি জেল খেটেছেন, এত পরিশ্রম করেছেন, এত উন্নয়ন করেছেন, সেই দেশের মানুষ তাকে এভাবে অপমান করে বের করে দেবে, তার ওপর আক্রমণ করতে যাবে- এটা আমরা কেউ কল্পনা করতে পারিনি।”
সোমবার শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর জয় জানিয়েছিলেন, তার মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। এত পরিশ্রম করার পরেও যেভাবে তার মায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলো, তাতে তিনি (হাসিনা) অত্যন্ত হতাশ এবং বীতশ্রদ্ধ।
জয় সে সসময় আরও জানান, তার মা এখন পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটানোর পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু কোথায় বা কীভাবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।
সোমবার দুপুরে বোন রেহানাকে নিয়ে গণভবন ছাড়েন শেখ হাসিনা। সেদিনই তিনি ভারতে পৌঁছান। দিল্লির লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে তাদের বহনকারী বিমান।
এরপর সে রাতেই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল দেখা করেন হাসিনার সঙ্গে। একই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠক করেন দেশটির লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে।
বৈঠকের পর জয়শঙ্কর বলেন, ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করার জন্য ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে কিছুটা সময় দিতে রাজি। এরই মধ্যে বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, খুব অল্প সময়ের নোটিসে ভারতে আসার আর্জি জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ভারত সেই অনুমতি দেওয়ার পরই বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে আসেন তিনি।