Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

রাজাকার আমি বলিনি, তারাই নিজেদের পরিচিত করল : শেখ হাসিনা

আন্দোলনের মধ্যে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আন্দোলনের মধ্যে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
[publishpress_authors_box]

নিজের যে বক্তব্য নিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তিনি রাজাকার বলেননি, বরং তার বক্তব্য বিকৃত করে শিক্ষার্থীরা রাজাকার স্লোগান তুলেছিল।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের মধ্যে ভাংচুর ও অগ্নিসেংযোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন দেখতে গিয়ে শুক্রবার একথা বলেন সরকার প্রধান।

রামপুরায় তিনি বিটিভির পুড়ে যাওয়া ভবন দেখার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। ধ্বংসচিহ্ন দেখে অশ্রুভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল তার চোখ।

বিটিভি ভবনে গিয়ে ধ্বংসচিহ্ন দেখে অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দিয়েছিল সরকার। তবে হাইকোর্টের এক রায়ে কোটা পুনর্বহাল হলে তার প্রতিক্রিয়ায় এই মাসের শুরুতে পুনরায় আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যেই গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা পাবে?”

তার সেই বক্তব্যের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাদের মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে- ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’।

সেই প্রসঙ্গ ধরে শুক্রবার বিটিভি ভবনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার একটা কথা নিয়ে তারা প্রতিবাদ করল, আমার কথাটা বিকৃত করেছে।”

কোন প্রেক্ষাপটে সেই বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিষয়টি বলেন।

এরপর বলেন, মুক্তিযোদ্ধা, নারী, জেলাসহ বিভিন্ন কোটায় চাকরি পেতে হলেও লিখিত, মৌখিকসহ সব পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখে উত্তীর্ণ হয়ে তারপরই চাকরির জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়। ফলে কোটায়ও যে চাকরি পায়, তারও মেধা রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “যারা পরীক্ষা দিয়ে মেধাবী, তারাই তো পাচ্ছে। সেই সূত্রেই আমি বলেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের পরিবারের সন্তান-সন্ততিরা কি মেধাবী না? তাহলে মেধাবী শুধু রাজাকারের ছেলে-মেয়ে। এটা বলার সঙ্গে তাদের স্লোগান ..

“বিকাল ৪টায় আমি প্রেস কনফারেন্স করি, কয়েক ঘণ্টা চলে যায়, হঠাৎ ১১টা, সাড়ে ১১টার দিকে দেখলাম ছেলে-মেয়েরা বের হয়ে আসছে, মেয়েরা হল থেকে বের হয়ে আসছে। তাদের স্লোগান কী- ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’; ‘তোমার বাবা আমার বাবা, রাজাকার-রাজাকার’।”

“আমি তো রাজাকার বলিনি, তারা নিজেরাই স্লোগান দিয়ে নিজেদের রাজাকার হিসাবে পরিচিত করল সকলের কাছে।”

একাত্তরে বাঙালিদের ওপর নিপীড়নের জন্য এদেশি দোসরদের সহায়তা পেতে রাজাকার বাহিনী গঠন করেছিল পাকিস্তানি সরকার। সেই কারণে ‘রাজাকার’ শব্দটি বাঙালির কাছে ঘৃণার্হ।

অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতও ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দিকে তাদের যেন একটা ক্ষোভ।”

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গত সপ্তাহে সহিংস হয়ে ওঠার পর পাঁচ দিনেই সারাদেশে দেড় শতাধিক জন প্রাণ হারায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করতে হয় সরকারকে।

সংঘাতের মধ্যেই গত ১৮ জুলাই ঢাকায় বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে বিএনপি-জামায়াত সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়ে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল; যদিও দল দুটি এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

বিটিভি ভবন পরিদর্শনের সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সান্ত্বনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার বিটিভি ভবনে বক্তব্যেও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি-জামায়াত অতীতের মতোই অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। তবে এবারের আগুন লাগানোর ধরন আগেরগুলোর তুলনায় আলাদা। তারা এবার আগুন লাগাতে গান পাউডার ব্যবহার করেছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।”

বিটিভি ভবনে হামলাকারীদের নিয়ে তিনি বলেন, “পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি বা কেউই কখনও দেয়নি। কিন্তু আজকে এই টেলিভিশন সেন্টারকে যারা এইভাবে পোড়ালো, একটা কিছু নেই যে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

“তাহলে এরা কারা? এরা কি এদেশেরই মানুষ? এদের কি এই দেশেই জন্ম? একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার চিন্তা নিয়েই যেন তাদের এই আক্রমণ।”

একইভাবে মেট্রোরেল, এভিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি, পয়ঃশোধনাগারে হামলার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন ঘুরে ঘুরে দেখেন।

এই নাশকতায় যারা জড়িত ছিল, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে সরকারকে সহযোগিতার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

সেই সঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশবাসীকে বলব, ঢাকাবাসীকে বলব, যাদের জন্য আজকে আপনাদের এই দুর্ভোগ, যারা ধ্বংস করল, যাদের জন্য আজকে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, আমি তাদের বিচারের ভার এদেশের জনগণের ওপরই দিয়ে যাচ্ছি।

“যারা এদেশের মানুষের রুটি-রুজির ওপর হাত দিয়েছে, রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের বিচার জনগণকেই করতে হবে। কারণ এদেশের জনগণই একমাত্র শক্তি।”

এই সময়ে যারা মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, সেবিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন সরকার প্রধান।

সরকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেষ্ট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মানুষের জানমাল রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। দেশের সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানে সরকার কারফিউ দিতে এবং সেনাবাহিনী নামাতে বাধ্য হয়েছে। আজকে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত