মেক্সিকোর ইতিহাসের এই প্রথম কোনও নারী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। দেশটির বুথফেরত জরিপ এমন পূর্বাভাসই দিয়েছে।
মেক্সিকোতে রবিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন রাজধানী মেক্সিকো সিটির সাবেক গভর্নর এবং মোরেনা পার্টির নেতা ৬১ বছর বয়সী জ্বালানি বিজ্ঞানী ক্লদিয়া শেইনবম।
তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীও একজন নারী, সচিতল গালভেজ। ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টির এই নেতা ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেক্সিকো সিটির মিগেল হিদালগো জেলার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।
মেক্সিকোর বুথফেরত জরিপ বলছে, দেশটির এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মেক্সিকানদের ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হচ্ছেন ক্লদিয়া শেইনবম।
বুথফেরত জরিপ ঘোষণার পর শেইনবমের মোরেনা পার্টি নির্বাচনে জয়ের দাবি করেছে। যদিও ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টির নেতা গালভেজ তার সমর্থকদের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে বলেছেন।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে সোমবার ঘোষণা করার কথা।
মেক্সিকানরা রবিবার কেবল তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই ভোট দেননি, একই সঙ্গে এদিন তারা মেক্সিকোর কংগ্রেসের সব সদস্য এবং আটটি রাজ্যের গভর্নর নির্বাচনেও ভোট দেন।
ভোটের দিন মেক্সিকোর বিভিন্ন কেন্দ্র ও এর বাইরে সহিংসতার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে বিবিসি। দেশটির সরকারের ভাষ্য, মেক্সিকোজুড়ে ২০ জনের বেশি স্থানীয় প্রার্থী এদিন নিহত হয়েছেন। যদিও বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ৩৭।
মেক্সিকোর পুয়েবলা রাজ্যের ভোটকেন্দ্রে দুটি সহিংসতার ঘটনায় দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানান।
মোরেনা পার্টির নেতা মেক্সিকোর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদরের সমর্থনে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন শেইনবম। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেক্সিকো সিটির গভর্নর ছিলেন এই নারী।
২০২১ সালে মেক্সিকো সিটিতে ইতালির নাবিক ও ঔপনিবেশিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ভাস্কর্য সরিয়ে মেক্সিকান আদিবাসী নারীর ভাস্কর্য স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন তৎকালীন গভর্নর শেইনবম।
বুথফেরত জরিপে শেইনবমের ‘প্রত্যাশিত’ জয়কে ‘মেক্সিকোর ইতিহাসে গৌরবময় মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীন মোরেনা পার্টির প্রেসিডেন্ট মারিও দেলগাদো।
২০১৮ সাল থেকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট পদে থাকা ওব্রাদর সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণে এবারের নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেননি।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট একবারই ছয় বছরের জন্য এই পদে থাকতে পারবেন, এমনটাই বলা আছে দেশটির সংবিধানে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর জনগণের কাছে বেশ কিছু অঙ্গীকার করেছিলেন ওব্রাদর। সেসবের বেশিরভাগই তিনি তার আমলে করতে পারেননি।
তবে সামাজিক কর্মসূচির আওতায় মেক্সিকোর দারিদ্র্য বিমোচন ও বয়স্ক মেক্সিকানদের সহায়তায় তার নেওয়া পদক্ষেপ তাকে জনপ্রিয় করেছিল।
মেক্সিকোর এই নেতার সমর্থন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী শেইনবমের ভোটের ঝুলি ভারী করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে শেষমেশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ওব্রাদরের মতো জনপ্রিয় নেতার প্রভাবমুক্ত হয়ে শেইনবম কতটা স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।