দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এই আদেশ দিয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আরেক মামলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে একই আদালত। আদালত একই সঙ্গে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) আবেদনের ওপর শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার তারিখ ধার্য করেছে।
মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতকে আটক করে পুলিশ। একই রাতে আলমগীরকে আটক করার পর তার বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুদক।
বুধবার সকালে শিবলী রুবাইয়াত ও আলমগীরকে দুদক কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তারপর দুদকের উপপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে শিবলী রুবাইয়াতের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, শিবলী রুবাইয়াত ও আলমগীরকে দুদকের পৃথক দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালতে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন।
শিবলী রুবাইয়াত ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলো- মোনার্ক হোল্ডিং ইনকরপোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের মালিক আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এফএভিপি ইসরাত জাহান, ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখার অপারেশন ম্যানেজার ইকবাল হোসেন ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ।
মামলায় বলা হয়, ভুয়া বাড়িভাড়া চুক্তিনামা দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শিবলী রুবাইয়াত ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা প্রায় দুই লাখ ২৬ হাজার ৩০৮ ডলার ঘুষ নেন। এছাড়া ভুয়া বিক্রয় চুক্তি দেখিয়ে পণ্য রপ্তানি না করে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করেন।
ব্যাংক কর্মকর্তারা কাস্টমার ডিউ ডিলিজেন্স অনুসরণ না করে পণ্য রপ্তানির বিপরীতে কোনও রেকর্ডপত্র না পেয়েও কর্তব্যে অবহেলা ও পরস্পর যোগসাজশে নিজের বা অন্য কারও অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করতে তিন লাখ ৬১ হাজার ডলার বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে তিনি এক কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা নিজে গ্রহণ করেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে দুদক।
মামলায় বলা হয়েছে, আলমগীরের নামে মোট ৭২ কোটি ৮৫ লাখ ৩ হাজার ৫২৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে, যার বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭ টাকা। এক্ষেত্রে তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ২৭ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৯০৮ টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক খাটিয়ে গত ১৬ বছরে রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতকে ২০২০ সালে প্রথম দফায় বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এর আগে সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলটির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সম্প্রতি বিভিন্ন আর্থিক ও অনিয়মের অভিযোগে শিবলী রুবাইয়াতের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। এর আগে গত ৯ অক্টোবর দুদকের এক আবেদনে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
এছাড়া শিবলী রুবাইয়াত ও তার ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামী ব্যাংক থাকা হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অবরুদ্ধ করা হয়েছে তাদের সব বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব।