Beta
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

‘ভেঙ্গে ফেলা ভাস্কর্য তরুণদের দায়িত্বে পুনরায় তৈরি করতে হবে’

shilpokola-jamil-ahmed-main
[publishpress_authors_box]

গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সারা দেশে ভেঙে ফেলা ভাস্কর্য পুনরায় তৈরি করতে তরুণদের এগিয়ে আসতে আহ্বান এসেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ‘ভাস্কর্য: সাম্প্রতিক নির্মাণ ও বিনির্মাণ’ সংক্রান্ত আলোচনা সভায়।

শিল্পকলা একাডেমি পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনুষ্ঠানটি প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানানো হয়।

গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সভাপতি ভাস্কর ইমাম হোসেন (সুমন)।

আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন – বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদুল হক।

আলোচনায় মোহাম্মদ জাহিদুল হক বলেন, “আমাদের এখানে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সমস্যা হয়েছে ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে। গ্রিসে এক সময় অনেক রিয়েলিস্টিক ভাস্কর্য ছিল। গ্রিসের একজন বিখ্যাত দার্শনিক ডায়োজেনেস ভাস্কর্যের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছিলেন, যুক্তিবাদী লোকজন বললেন- ভাস্কর্যের কাছে কেন ভিক্ষা চাচ্ছেন, দার্শনিক বলেন- আমি রিফিউজ বা প্রত্যাখ্যাত হতে চাই। আমাদের ছেলেরা শশী লজের, ভেনাসের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলেছে, সেক্ষেত্রে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে তারা যে প্রত্যাখ্যাত হবে- এটা তারা কোথায় প্র্যাকটিস করবে! এটা ভাঙা ঠিক হয় নি। তরুণদের দায়িত্বে এটা পুনরায় তৈরি করতে হবে।“

আলোচক মোহাম্মদ জাহিদুল হক আরও বলেন, “ইউরোপে হাই আর্টের বিরুদ্ধে যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ফাইট না করবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বুঝবো না ক্যালিগ্রাফিও ‘হাই আর্ট’। মুসলিমরাও যে ফ্লোরাল আর্টগুলো করেছে , জাপানিরা যে কিমানু গোলা বানিয়েছে, আমাদের মায়েরা যে রুমাল সেলাই করে এবং অনান্য এক্সপ্রেশন- সবই ‘হাই আর্ট’। ইউরোপের হেজিমনি না ভাঙতে পারলে আমাদের আর্টকে আমরা সঠিকভাবে পারসিভ করতে পারবো না, হৃদয়গ্রাহীও করতে পারবো না।“

পরে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “আমাদের ট্র্যাডিশনাল শিল্পী, পাল সম্প্রদায়ের যারা রয়েছেন, যারা মূর্তি গড়েন তাদের ভবিষ্যত কী? তারা কি মূর্তি গড়তে পারবে স্বচ্ছন্দে, নির্দ্বিধায়? আমি এথ্নলজি ধরে একেবারে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ করেছি। অনেক গ্রামে পালপাড়ায় গিয়েছি, তারা শঙ্কিত। তারা বাংলাদেশ ছাড়বে কিনা ভাবছেন, তাদের মূর্তির আদৌ কোন বাজার আছে কিনা ভাবছে, মূর্তি পূজা আদৌ করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে তারা ভাবছে। এটাকে আপনি ভাস্কর্য বলেন, নাকি মূর্তি বলেন- সেটা আলাদা রাজনীতি। কিন্তু সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ধর্ম যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সেখানে আমাদের বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কি আসলেই লেজিটিমাইজ করতে যাচ্ছি যে, আমরা ইসলামকেন্দ্রিক যে চিন্তা করি , তার কারণে রিপ্রেজেন্টেশনাল কাজ না করে নন-রিপ্রেজেন্টেশনাল কাজ করা এখন প্রয়োজন, যেখানে ইউরোপের অনুকরণধর্মী বাস্তবধর্মী মূর্তি গড়ার দরকার নাই আমাদের।“

মহাপরিচালক আরও বলেন, “সামনের আর্টের স্বরূপ কী হবে? ইসলামের বিষয়গুলো আমি থিয়েটারের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছি , যেখানে নবীজি কোথাও থিয়েটারকে অগ্রাহ্য করেননি বরং কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসরা যে নাচ করছিল, তা আয়েশাকে পাশে তুলে দেখিয়েছেন। আমার এ সংক্রান্ত বই রয়েছে In Praise of Niranjan: Islam Theatre and Bangladesh (২০০১),। খুব পরিষ্কার যে, থিয়েটার পারফরমেন্সকে ইসলাম কোথাও নিষিদ্ধ করেনি, কিন্তু মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ করেছে।“

তিনি আরও বলেন, “মুখোমুখিভাবে আমাদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে, পাশ্চাত্যের চিন্তাধারা থেকে ইউরোপ যখন সরে আসছে, যখন রিপ্রেজেন্টশন আর্টকে খারিজ করছে, তখন আমরা কি পরোক্ষভাবে বলতে চাই যে, আমাদের বাংলাদেশে নন-রিপ্রেজেন্টেশন আর্ট করা বাঞ্ছনীয় । এখানে মূর্তি যারা গড়েন, ট্র্যাডিশনাল আর্টিস্ট তাদের জায়গা কোথায় এই বিষয়টি সামনাসামনি পরিষ্কার করতে হবে।“

এর আগে বিকাল ৩টায় প্রথম পর্বের আলোচনায় ‘ভাস্কর্য: আধুনিকতার প্রাথমিক পর্ব ও নভেরার উত্থান’ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাহিত্য পত্রিকা প্রতিধ্বনির সম্পাদক কবি ও লেখক সাখাওয়াত টিপু।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও গবেষক রেজাউল করিম সুমন এবং শিক্ষক, শিল্পী ও গবেষক দীপ্তি দত্ত।

স্বাগত বক্তব্য দেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত