দীর্ঘদিন পর খুলছে রাজধানীর সংস্কৃতিকর্মীদের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ থিয়েটারের ‘সি মোরগ’-নাটকটির ৩০১ তম মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে খুলবে নাট্যশালার দুয়ার।
তথ্যটি সকাল সন্ধ্যাকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ থিয়েটারের দলনেতা ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম এবং শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
এর আগে একাডেমি কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্বল্প পরিসরে খুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হল ও ২টি মহড়া কক্ষ। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও ছাত্র জনতার গণঅভ্যুন্থানের পর বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার বিভিন্ন কক্ষে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সেনাসদস্যরা অবস্থান করছেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময় থেকে জাতীয় নাট্যশালার ৩টি মিলনায়তন, ৬টি মহড়া কক্ষ, সেমিনার কক্ষ, আর্কাইভ কক্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া তাই সম্ভব হয়নি।
সে প্রেক্ষিতে গতকাল ৭ অক্টোবর সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাথে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হল এবং ১ ও ২নং কক্ষ নাটক ও মহড়ার জন্য আগামী ১১ অক্টোবর থেকে সীমিত পরিসরে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়াও হল ও মহড়া কক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালার পাশাপাশি বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় যেসব নির্দেশনা অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা হলো-
জাতীয় নাট্যশালার মূল হল, নাটক মঞ্চায়নের জন্য বিবেচ্য নাট্যদলকে ১ শিফটে একটি প্রদর্শনী করার জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। মিলনায়তন বরাদ্দ চূড়ান্ত করার সময় বরাদ্দপ্রাপ্ত দলকে অবশ্যই তাদের উপস্থিত সদস্যদের তালিকা সংগঠনের প্যাডে লিখিতভাবে নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের দপ্তর কক্ষে জমা দিতে হবে। উক্ত তালিকা মিলনায়তন ব্যবহারের নির্ধারিত দিনে সকল গেইটে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরবরাহ করা হবে। জাতীয় নাট্যশালার মূল গেইটে দর্শক প্রবেশের জন্য নাটক প্রদর্শনীর ২ ঘণ্টা আগে খুলে দেয়া হবে। হল বরাদ্দ ব্যতিত জাতীয় নাট্যশালার মূল গেইট খোলা হবে না।
জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে যেসব সংগঠন/দল নাটক মঞ্চায়ন করবে, ২ টি মহড়া কক্ষ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়া হবে। মিলনায়তন ব্যবহারকারী নাট্যদল মহড়া কক্ষ ব্যবহার করতে না চাইলে, অন্যদলকে কেবল নাটকের মহড়ার জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে বরাদ্দ প্রাপ্ত দলকে অবশ্যই সদস্যদের তালিকা সংগঠনের নিজস্ব প্যাডে লিখিতভাবে নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের দপ্তর কক্ষে দিতে হবে।
মূল গেইট দিয়ে কেবল বরাদ্দ প্রাপ্ত সংগঠনের সদস্য, মহড়াকক্ষ ব্যবহারকারী সংগঠনের সদস্য, শিল্পকলা একাডেমির স্টাফ, সেনাসদস্য এবং টিকেট/আমন্ত্রণপত্র প্রদর্শনী সাপেক্ষে দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন। কোনক্রমেই টিকেট বা আমন্ত্রণপত্র ছাড়া দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন না।
জাতীয় নাট্যশালার মূল হল ও মহড়া কক্ষ ব্যবহারকারী নাট্যকর্মী, সাংবাদিক ও টিকেট/আমন্ত্রণপত্রধারী দর্শনার্থীদের যানবাহন নির্ধারিত সময়ে নাট্যশালার নিচতলার পার্কিং ব্যতিত অন্য কোথাও রাখা যাবে না।
জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হল ব্যবহারের জন্য নাট্যসংগঠনগুলো অনলাইনে আবেদন করতে পারবে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দীর্ঘদিন পর সীমিত পরিসরে হলেও নাট্যশালা খুলে দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন নাট্যকর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ থিয়েটারের দলনেতা খন্দকার শাহ আলম বলেন, “৫ আগস্টেরও অনেক আগে থেকে শিল্পকলা একাডেমি বন্ধ। সংস্কৃতি অঙ্গনে একধরনের শূন্যতা বিরাজ করছিল। নবনিযুক্ত ডিজির প্রতি ধন্যবাদ জানাই। দায়িত্ব গ্রহণের পর অত্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি শিল্পকলা একাডেমি সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। শিল্পকলা বন্ধ থাকলে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে হতাশা আরও বাড়তো।”
ঋতুর পালাবদলে সামনেই আসছে শীত। এ ঋতুতে সংস্কৃতি অঙ্গনও সরব হয়ে ওঠে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতি বছরই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অসংখ্য অনুষ্ঠানে সরব থাকে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গন। তাই, সংস্কৃতিকর্মীদের দাবি, এ সময়টাতে যেন শিল্পকলা পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হয়।
এক নজরে বাংলাদেশ থিয়েটারের সি মোরগ
রচনা: আসাদুল্লাহ ফারাজী
নির্দেশনা: হুমায়ুন কবীর হিমু
কাহিনি সংক্ষেপ: এক জোতদার বজল শিকদার তার কুড়িয়ে পাওয়া মোরগের নামকরণ করে রূপকথার গল্পের শক্তিশালী ‘সি-মোরগ’-এর নামে। কারণ রূপকথার গল্পের সি-মোরগ আলমাস কুমারকে সাত সাগর তের নদী পাড়ি দিয়ে নিয়ে যায় স্বপ্নের দেশ গুলবাহার পরীর দেশে। আর এ মোরগ পাওয়ার পর থেকে শিকদার মনে করে সে যা কিছুতেই হাত দেয় তা সোনা হয়ে ওঠে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন, লোভী ও জোতদার শিকদার মনে করে কুড়িয়ে পাওয়া মোরগটি তার ভাগ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছে; যার কারণে সে মোরগটিকে গভীরভাবে ভালোবাসে। মোরগটির লালন-পালনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। এ নিয়ে তার তিন স্ত্রীর সঙ্গেই নানা ধরনের সংঘাতের সৃষ্টি হয়। এভাবেই এগিয়ে যায় কমেডিনির্ভর নাটকটির কাহিনি।
চরিত্রায়নে: খন্দকার শাহ আলম, ফিরোজ খান, ফারজানা ফাতেমা চৌধুরী সুমি, মাসুদা খান, সুইটি আক্তার রনি, আজিজ রেজা প্রমুখ।