সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নিজঘরে মেয়েসহ দম্পত্তিকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় রাজিব কুমার ভৌমিক নামে তাদের এক আত্মীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ব্যবসায়িক দেনা-পাওনার ঝামেলা থেকে মামা বিকাশ সরকারকে সপরিবারে হত্যা করেছেন রাজিব কুমার ভৌমিক।
বুধবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল। স্বজনরা জানিয়েছেন, বিকাশ সরকারসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের খবর তার ভাগিনা রাজিব কুমার ভৌমিকই তাদের দিয়েছিলেন।
গ্রেপ্তার রাজিব কুমার ভৌমিক (৩৫) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপুকুর গ্রামের প্রয়াত বিশ্বনাথের ছেলে। তিনি ও তার মামা বিকাশ সরকার যৌথভাবে মাছের খাদ্য কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। গতকাল মঙ্গলবার গভীররাতেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত সোমবার দিবাগত রাতে তাড়াশ পৌর শহরের বারোয়ারী বটতলা এলাকার নিজ বাড়ির ঘর থেকে কালিচরণ সরকারের ছোট ছেলে বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৪০) ও মেয়ে পারমিতা সরকার তুষির (১৫) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
বিকাশ সরকার ওষুধের ব্যবসা করতেন। প্রায় তিন বছর আগে তিনি ওই ব্যবসা ছেড়ে পুকুরে মাছ চাষ, কৃষি-খাদ্যপণ্য কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন। বিকাশ সরকার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তাড়াশ উপজেলা শাখার কোষাধ্যক্ষও ছিলেন। বিকাশের মেয়ে তুষি তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।
মরদেহ উদ্ধারের পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে অজ্ঞাতপরিচয় লোকদের আসামি করে তাড়াশ থানায় মামলা করেন নিহত স্বর্ণা সরকারের বড় ভাই সুকমল চন্দ্র সাহা। হত্যার পেছনে পূর্বশত্রুতার কথা বলা হয় মামলায়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরিফুর বলেন, বিকাশ সরকার ভাগিনা রাজীব ভৌমিকের সঙ্গে যৌথভাবে মাছের খাদ্যের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় রাজিব ভৌমিককে পুজিঁ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন বিকাশ সরকার। লভ্যাংশ হিসেবে রাজিব তার মামা বিকাশকে বিভিন্ন ধাপে ২৬ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু চলতি বছর রাজিবের কাছে আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন বিকাশ।
এ নিয়েই মামা-ভাগিনার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গত ২২ জানুয়ারি টাকা চেয়ে রাজিবকে অনেক চাপ দেন বিকাশ। একইসঙ্গে বিকাশ তার বোন রাজিবের মা প্রমিলা রানীকে বকাঝকা করেন। বিষয়টি রাজিব মেনে নিতে পারেননি। তখন তিনি তার মামা বিকাশসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পুলিশ সুপার জানান, এর জের ধরে ২৭ জানুয়ারি শনিবার বিকালে টাকা দেওয়ার নাম করে রাজিব মামার বাসায় যান। তখন তার মামা বিকাশ বাসায় ছিলেন না। কৌশলে মামী স্বর্ণা সরকারকে কফি আনার জন্য বাইরে পাঠান রাজিব। সেই সুযোগে মামাতো বোন পারমিতা সরকার তুষিকে হত্যা করেন রাজিব। মামি কফি নিয়ে বাসায় আসলে তাকেও একইভাবে রড দিয়ে পিটিয়ে অজ্ঞান করে হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে হত্যা নিশ্চিত করেন। এর কিছুক্ষণ পরে বিকাশ সরকার আসলে তাকেও একই কায়দায় হত্যা করেন তিনি।
আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, তিনজনকে হত্যার পর রাজিব বাসার বাইরে থেকে তালা দিয়ে উল্লাপাড়ায় নিজ বাড়িতে পালিয়ে যান। পথে একটি পুকুরে রড ফেলে দেন। আর হাসুয়াসহ ব্যাগটি নিজের বাড়ি রেখে দেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, মামলার আগে থেকে পুলিশের একাধিক টিম হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছিল। বিভিন্ন সূত্র থেকে রাজিবকে সন্দেহ হলে রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর রাজিবের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত রড ও হাসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার বাদি বিকাশের স্ত্রীর ভাই সুকমল চন্দ্র সাহা বলেন, “রাজিবের কাছে বোন, ভাগনি ও জামাইয়ের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছিলাম। সে নিজেই এই কাজ করেছে তা আমরা কেউ আগে বুঝতে পারিনি। জামাই বা আমার বোনও কখনও ব্যবসায়িক ঝামেলার কথা আগে জানায়নি। এখন এই পরিবারের আর কেউ থাকল না।”