তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার ব্যবস্থাকে স্থায়ী করেছে, আদালতে এই যুক্তি দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সে প্রশ্নে রুলের শুনানিতে বৃহস্পতিবার এ বক্তব্য দেন তিনি। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি চলছে।
রুলে ইন্টারভেনার (আদালতকে সহায়তা করতে) হয়ে জামায়াতের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। পরে তিনি এ বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন।
এদিন বিএনপির পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। আগের দিন বুধবার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজামান শুনানি করেছিলেন।
১৯৯৬ সালে সংবিধানে যুক্ত হওয়া নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ২০১১ সালের ৩০ জুন বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনে আওয়ামী লীগ সরকার। তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ বলে রায় এসেছিল আদালত থেকে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১৩ দিন পর গত ১৮ আগস্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ নাগরিক। পরদিন ১৯ আগস্ট আদালত রুল দেয়।
শুনানিতে শিশির মনির বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে ইলেকশন মেকানিজমকে ধ্বংস করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়াটি ইচ্ছে করেই বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে।”
এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের ‘ইলেকশনকে সিলেকশনে’ রূপান্তরিত করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পঞ্চদশ সংশোধনী বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করা হয়েছে।”
জামায়াতের এই আইনজীবী বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রিয়, এদেশের মানুষ বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। বাংলাদেশের মানুষ ভোটকে উৎসব হিসাবে নেয়।
“সে উৎসবকে আমরা ধ্বংস করে একটি কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার ব্যবস্থা কায়েম করেছি। আমরা ইলেকশন করেছি, কিন্তু কোনও প্রতিযোগিতা নেই। ইলেকশন করেছি, কিন্তু ইলেকশন কমিশন ফাংশন করে না। ইলেকশন করেছি, কিন্তু বিচার বিভাগের কাছে এসে কোনও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।”
পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক দাবি করে শিশির মনির বলেন, “কারণ বাংলাদেশ সংবিধান একটি ডেমোক্রেটিক পলিটিক্যাল সিস্টেমের কথা বলে। এ সংবিধান কোনও একনায়কতান্ত্রিক কিংবা কর্তৃত্বপরায়ণ সংবিধানের কথা বলে না। এ জন্য পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া উচিৎ।”
এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন ভোটাধিকার সীমিত করে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখে।
এবিষয়ে শিশির মনির বলেন, “আমরা বলেছি, এটি এক ধরনের বাক স্বাধীনতাকে খর্ব করে। একজন সংসদ সদস্য উপযুক্ত মনে করলে নিজের দলের বিরুদ্ধেও মতামত পেশ করার স্বাধীনতা রাখেন। এজন্য ৭০ অনুচ্ছেদকেও আমরা বাতিল চেয়েছি।”
এদিকে সর্বোচ্চ আদালতের যে রায়ের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছিল, সেই রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা পৃথক তিনটি রিভিউ আবেদন হয়েছে। সেগুলোর শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১৭ নভেম্বর দিন ঠিক রয়েছে।