সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে থাকা ‘শরিফার গল্প’ বিতর্ক ঘিরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠন করা পাঁচ সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিও।
কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “কমিটিতে যেখানে রাখার প্রয়োজন ছিল জীববিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের। সেখানে কমিটি করা হয়েছে মওলানা ও মুফতিদের নিয়ে।”
এসময় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দাবি মেনে কোনও রচনা বা বিষয় প্রত্যাহার বা পরিবর্তন না করারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কমিটির ‘স্কুল পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নিয়ে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণির বইটিতে ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ শিরোনামের অধ্যায়ে যুক্ত হয়েছে শরীফার গল্প। যার উদ্দেশ্য পুরুষ ও নারীর পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
এই অধ্যায়টির বিরোধিতা করে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবের বক্তব্য এবং তার বই ছেঁড়ার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
তা দেখে বিষয়টি ‘আরও গভীরভাবে’ পর্যালোচনা করে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্ক বোর্ডকে (এনসিটিবি) সহায়তা করার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বক্তব্যে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, সবাই আসিফ মাহতাবকে শিক্ষক হিসেবে সম্বোধন করলেও আমি তাতে একমত নই। কারণ তার কর্মকাণ্ড শিক্ষকসুলভ নয়। তিনি যা করেছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে ‘শরিফার গল্প’ নামে একটি রচনা রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্পর্কে যথাযথ ধারণা দেয়ার জন্য।
“কিন্তু ১৯ জানুয়ারি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব এই রচনাটি ছিঁড়ে ফেলে গণমাধ্যমে যে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন তা হালকাভাবে দেখার কোনও কারণ নেই। তার এই কর্মকাণ্ডের পর ঝিম মেরে বসে থাকা হেফাজতীরা এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সংগঠন মাঠে নেমে পড়েছে।”
১৯ জানুয়ারির সেমিনারে মৌলবাদী শিক্ষকদের ফোরামের নেতারা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি বিষোদগার করে বলেছেন নতুন পাঠক্রমের সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে। কারণ এটি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য, ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য যা তাদের ভাষায় ‘ইসলামবিরোধী’। শাহরিয়ার কবির যুক্ত করেন, “অভিযুক্ত শিক্ষক তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি ও মর্যাদা বিষয়ক পাঠে সমকামিতা প্রচারের অভিযোগ এনেছেন বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তিনি জানতেন এর প্রতিক্রিয়া কী হবে। তিনি বলেছেন ইসলামের মর্যাদা রক্ষার জন্য নাকি এ কাজ করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, “লিঙ্গবৈষম্য এখানে মূল তর্ক নয়। যারা বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন, তাদের মূল বক্তব্য হলো ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি থাকতে পারবে না। তাদের ভাষায়, ইসলামে তৃতীয় লিঙ্গের কোনও স্বীকৃতি নেই। অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি না চাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে আঘাত করা হয়েছে।”
সরকার যদি এর সঙ্গে সমঝোতা করে, তবে তা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “আমরা শিক্ষায় এমন সাম্প্রদায়িক বা মৌলবাদি আঘাত দেখতে চাই না।”