ইতালীয় ভবিষ্যতবাদীদের আন্দোলন থেকেই ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছিল। হালে সিলিকন ভ্যালি কী করে প্রবল কর্তৃত্ববাদের সমার্থক হয়ে উঠেছে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী দ্য আটলান্টিকে করেছেন অ্যাড্রিয়েন লাফ্রান্স।
মার্ক জাকারবার্গের ছোট্ট একটি গল্প থেকেই সিলিকন ভ্যালির কর্তৃত্ববাদের গড়নটা ধরা পড়ে। প্রায় ২০ বছর আগে নিজের কম্পিউটারের নীল আভায় বসে এক বন্ধুর সঙ্গে চ্যাট করছিলেন তিনি। বন্ধুকে বলছিলেন, কীভাবে তার নতুন ওয়েবসাইট দ্য ফেইসবুক তাকে তার সহশিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য এনে দিচ্ছে।
জাকারবার্গ: হ্যাঁ, তোমার যদি কখনও হার্ভার্ডের কারও সম্পর্কে তথ্যের প্রয়োজন হয়, আমার কাছে চাইলেই হবে।
জাকারবার্গ: আমার কাছে ৪,০০০ এর বেশি ইমেইল, ছবি, ঠিকানা, এসএনএস আছে
বন্ধু: কী! তুমি কীভাবে এসব পেলে?
জাকারবার্গ: লোকে নিজেই জমা দিয়েছে।
জাকারবার্গ: আমি জানি না কেন।
জাকারবার্গ: তারা আমাকে বিশ্বাস করে
জাকারবার্গ: বেকুবের দল।
সেই কথোপকথনটি পরে চ্যাট রেকর্ড ফাঁসের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল। এর কিছুদিন পর আরও একটি কথোপকথন ফাঁস হয়। সেটি অবশ্য আরও নমনীয় ছিল। ২০০৭ সালে এক ক্রিসমাস পার্টিতে শেরিল স্যান্ডবার্গের সঙ্গে জাকারবার্গের প্রথম দেখা হয়। যিনি পরে জাকারবার্গের প্রধান অপারেটিং কর্মকর্তা ও জীবনসঙ্গী হন। ফেইসবুককে একটি ডিজিটাল সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিতে রূপান্তরিত করার যাত্রায়ও জাকারবার্গের প্রধান সঙ্গী ছিলেন এই শেরিল।
সেখানেই জাকারবার্গ বলেছিলেন শেরিলকে, তিনি চান ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সব আমেরিকান নাগরিকের একটি করে ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থাকুক। আর ফেইসবুকের প্রথম দিনগুলোতেই জাকারবার্গ ‘কোম্পানি ওভার কান্ট্রি’ বা ‘দেশের ওপরে কোম্পানি’ এই মন্ত্রকে নীতিকে হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। জাকারবার্গের কথা শুনে শেরিলেরও মনে হয়, এটাই হবে তার জীবনের যথাযথ মিশন। তিনি একবার তার এক সহকর্মীকে বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে বড় করে গড়ে তোলার জন্যই পৃথিবীতে তার আগমন।
সিলিকন ভ্যালির যা কিছু খারাপ, তার সবই ফেইসবুকের মধ্যদিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এরই মধ্যে। বিশ্বব্যাপী বিভ্রান্তি ছড়ানোর ক্ষেত্রে এর স্বার্থক ভূমিকা চলমান বড় সংকট হিসেবে আবির্ভূত। ২০১২ সালে ফেইসবুক এমনকি মানুষের মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করার বিষয়ে একটি গোপন পরীক্ষাও চালিয়েছিল। তাতে ব্যবহারকারীরা তাদের নিউজ ফিডে যা দেখছিল, তা আসলে ছিল নেপথ্যে থেকে চালানো এক খেলার অংশ। মানুষের অজান্তেই ফেইসবুক কীভাবে এবং কতটা তাদের মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে, তা পরিমাপ করাই ছিল ওই পরীক্ষার লক্ষ্য। অথবা ২০১৭ সালে মিয়ানমারে গণহত্যার উসকানিতে এর ভূমিকার কথা স্মরণ করুন। অথবা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য একটি ক্লাব হাউস হিসেবে এর ব্যবহারের কথাও বলা যায়।
তারপরও ফেইসবুকের ব্যবসা পদ্ধতিটিই সামগ্রিকভাবে প্রযুক্তি শিল্পের আদর্শ। এমনকি অন্যান্য সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম (টিকটক) ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সাংস্কৃতিক প্রাসঙ্গিকতায় ফেইসবুককে পেছনে ফেলার পরও।
ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারও ফেইসবুকের মতোই ব্যক্তির অধিকার, নাগরিক সমাজ ও বিশ্ব গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। সিলিকন ভ্যালিজুড়ে এখন যেভাবে জেনারেটিভ এআই তৈরি হচ্ছে, তা বিবেচনায় নিলে, সামনের বছরগুলোতে সেই ক্ষয়ক্ষতি বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুত হওয়া উচিৎ।
এই কোম্পানিগুলো এবং যারা সেগুলো চালায় তাদের আচরণ প্রায়ই ভণ্ডামিপূর্ণ, লোভী ও স্ট্যাটাসের মোহে আক্রান্ত। কিন্তু এসবের নেপথ্যে আছে আরও বিপজ্জনক এবং একটি স্পষ্ট ও সুসঙ্গত মতাদর্শ যার কথা খুব কমই বলা হয়, তা হলো স্বৈরতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী টেকনোক্রেসি বা প্রযুক্তি অভিজাততন্ত্র। সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানিগুলো আরও পরিপক্বতা অর্জনের পাশাপাশি এই মতাদর্শটিও কেবল আরও শক্তিশালী, আরও আত্মম্ভরী, আরও খেয়ালি এবং ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখেও আরও আগ্রাসী হয়েছে।
নতুন এই প্রযুক্তি অভিজাতরা এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকায়নের মূল্যবোধসমূহ তথা যুক্তিবাদিতা, প্রগতিশীলতা ও স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক বাগাড়ম্বর করেন। কিন্তু বাস্তবে তারা একটি অগণতান্ত্রিক ও অনুদার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বাকস্বাধীনতার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের দাবি করেন, কিন্তু যারা তাদের তোষামোদি করে কথা বলে না, তাদের প্রতি প্রতিহিংসা দেখান। তারা এই উদ্ভট বিশ্বাস লালন করেন যে, যে কোনও ধরনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রশ্নাতীত এবং অন্তর্নিহিতভাবে ভালো; আপনি পারেন বলেই আপনার তা তৈরি করা উচিৎ; তথ্যের গুণমান নির্বিশেষে অবাধ তথ্য প্রবাহই সর্বোচ্চ মান; গোপনীয়তা একটি প্রাচীন ধারণা; আমাদের সেই দিনটিকে স্বাগত জানানো উচিৎ, যখন মেশিন বুদ্ধিমত্তা আমাদেরকে ছাড়িয়ে যাবে এবং সর্বোপরি, তাদের ক্ষমতা সীমাহীন হওয়া উচিৎ।
তারা যে সিস্টেমগুলো তৈরি করেছে বা তৈরি করছে- যোগাযোগ পুনর্গঠন, মানুষের সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোকে পুনর্নির্মাণ, দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এবং আরও অনেক কিছু- সেসব তাদের বিশ্বাসগুলো জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়, যেগুলো নিয়ে কোনও পরামর্শ করা হয় না বা সাধারণত অর্থপূর্ণভাবে জানানো হয় না।
সিলিকন ভ্যালি ও ওয়াল স্ট্রিট বা ওয়াশিংটন ডি সি এই তিনটির মধ্যে প্রায়ই তুলনা করা হয়। এগুলো সবই ক্ষমতার কেন্দ্র এবং সবই এমন লোকদের আকর্ষণ করে যাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রায়ই তাদের মানবতাকেও ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু সিলিকন ভ্যালির প্রভাব সহজেই ওয়াল স্ট্রিট এবং ওয়াশিংটনকেও ছাড়িয়ে যায়। এটি সম্ভবত নতুন চুক্তির দিনগুলো থেকে শুরু করে অন্য যে কোনও যুগের অন্য যে কোনও ক্ষমতা কেন্দ্রের চেয়ে আরও গভীরভাবে সমাজকে পুনর্গঠন করছে। রিপাবলিকানদের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদ নিয়ে আমেরিকানরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তারা উদারতার বিরোধী আরেকটি ঊর্ধ্বমুখী শক্তিকে উপেক্ষা করার ঝুঁকি নেয়, তারা হলো খেয়ালি ও ব্যাপক ক্ষমতাবান প্রযুক্তির রাজা।
ওপেনএআই এ গত বছরের শেষের দিকে যে শেক্সপিয়রীয় নাটকটি হলো তা থেকেই বোঝা যায় সিলিকন ভ্যালিতে ফেইসবুকের ‘মুভ ফাস্ট অ্যান্ড ব্রেক থিংস’ মানসিকতা কতটা শেকড় গেঁড়ে বসেছে এবং তা কতটা উদযাপিত হয়। ২০১৫ সালে একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার লক্ষ্য হবে এমনভাবে বিশ্বে সাধারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রচলন করা, যা জনসাধারণের কল্যাণে কাজ করবে। ওপেনএআই প্রতিষ্ঠার পেছনে বিশ্বাস ছিল, প্রযুক্তিটি এতটাই শক্তিশালী যে শুধু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তার বিকাশ ও প্রচলন খুবই বিপজ্জনক হবে।
কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে প্রযুক্তিটি এত বেশি গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে যে যারা এটি নিয়ে কাজ করছিল, তারাও চমকে যায়। আর তখনই কোম্পানিটি মূলধন আরও বাড়াতে এর একটি লাভজনক হাতও যোগ করে। মাইক্রোসফট প্রথমে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে, তারপর আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার। তারপর গত বছরের শেষদিকে কোম্পানির সিইও স্যাম অল্টম্যানকে হঠাৎ করেই বরখাস্ত করার পর আবার এক সপ্তাহের মধ্যেই পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে ‘দেশের ওপরে কোম্পানি’ নীতির বিরুদ্ধে যেসব সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল সেসব ধ্বংসের ইঙ্গিতও মেলে।
যারা অল্টম্যানকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন, তাদের অভিযোগ ছিল তিনি কোনও সুরক্ষা ছাড়াই লাগামহীনভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ চান। কিন্তু মাইক্রোসফটের হস্তক্ষেপে তারা অল্টম্যানকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন। পুরো ঘটনাটি ছিল অগোছাল। অল্টম্যান হয়ত কাজটির জন্য সঠিক ব্যক্তি হতে পারেন, কিন্তু বার্তাটি ছিল পরিষ্কার: নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং জনসাধারণের জবাবদিহির বিপরীতে কোম্পানির উন্নয়ন ও মুনাফার সাধনার জয় হয়েছে।
সিলিকন ভ্যালি এখনও অনেক প্রতিভাবান লোককে আকর্ষণ করে, যারা ভালো কিছু করার চেষ্টা করেন এবং যারা আরও আন্তঃসংযুক্ত, তথ্যসমৃদ্ধ বিশ্ব সমাজের সর্বোত্তম সংস্করণ তৈরির জন্য কাজ করছেন। এমনকি সবচেয়ে ক্ষতিকারক কোম্পানিগুলোও কিছু চমৎকার সরঞ্জাম তৈরি করেছে। কিন্তু এই সরঞ্জামগুলো নজরদারি, ম্যানিপুলেশন এবং নিয়ন্ত্রণেরও হাতিয়ার। তারা কমিউনিটি গড়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বিভাজনের বীজ বপন করে; মিথ্যা তথ্য ছড়ায়; ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতার মতো ধারণা দিয়ে নিজেদের মুড়িয়ে রাখে। কিন্তু নিরলসভাবে আমাদের ওপর নজরদারি করে। আমাদের নিজস্ব এজেন্সি বা কর্তাস্বত্বাকে কেড়ে নেয় এবং নিজেদের ফিডগুলোতে আমাদের আসক্ত করে রাখে।
এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তাত্ত্বিক প্রতিশ্রুতিও সোশাল মিডিয়ার প্রতিশ্রুতির মতোই আশাব্যঞ্জক। এআই সত্যিই অনেক উপকারী হতে পারে। এটি সত্যিই পাণ্ডিত্যকে নতুন রূপ দিতে পারে এবং হারানো জ্ঞান খুঁজে বের করতে পারে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে নেতৃত্ব দেওয়া ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, গুগল এবং অন্যান্য কর্পোরেশনগুলো বৃহত্তর জনসাধারণের বা জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং স্বচ্ছতা বা সতর্কতার সঙ্গেও কাজ করছে না। তার পরিবর্তে তারা দ্রুত নতুন প্রযুক্তি গড়ে তোলার এবং সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
টেকনোক্রেসি বা প্রযুক্তি অভিজাততন্ত্র একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে সামনে এসেছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। নিউ ইয়র্ক সিটির বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের একটি ছোট দল প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের পরিবর্তে প্রযুক্তি অভিজাতদের হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব দিয়ে একটি নতুন সামাজিক কাঠামো তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে হালে পানি পায়নি। মানুষ প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের নিউ ডিল বা নতুন চুক্তিকে বেশি পছন্দ করেছিল।
তবে আন্দোলনটি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বেশ সাফল্য পেয়েছিল, শিল্প ও সাহিত্যে আধুনিকতার পাশাপাশি কালের চেতনায়ও প্রভাব ফেলেছিল এবং তার কিছু মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করেছিল। আমেরিকান কবি এজরা পাউন্ডের আধুনিকতাবাদী স্লোগান ‘নতুন কিছু করো’ এই আন্দোলনের প্রভাব থেকেই এসেছে। একটি সমান্তরাল আন্দোলন ছিল ইতালীয় ভবিষ্যতবাদীদের, যার নেতৃত্বে ছিলেন কবি এফ টি মারিনেত্তির মতো ব্যক্তিত্ব, যিনি ‘এগিয়ে যাও, ছাঁচে আটকা পড়ো না’ এবং ‘সৃষ্টি, শুধু ভাবা নয়’ ইত্যাদি স্লোগানের স্রষ্টা। তারা প্রযুক্তি, তৎপরতা ও গতির মোহে আক্রান্ত হয়, যা পরে ফ্যাসিবাদে রূপান্তরিত হয়। ইতালীয় ভবিষ্যতবাদীদের আন্দোলন থেকেই ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে। ১৯০৯ সালে মারিনেত্তি ভবিষ্যতবাদের ইশতেহার প্রকাশ করেন। আর তার ১০ বছর পরই ১৯১৯ সালে ফ্যাসিবাদের ইশতেহার প্রকাশে সহায়তা করেন।
তার বন্ধু এজরা পাউন্ডও মুগ্ধ ছিলেন বেনিতো মুসোলিনির প্রতি এবং একটি রেডিও শো হোস্ট করার জন্য তার সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করেন। সেখানে তিনি ফ্যাসিবাদের প্রচার এবং মুসোলিনি ও অ্যাডলফ হিটলার উভয়ের প্রশংসা করেছিলেন। ভবিষ্যতবাদের ফ্যাসিবাদে বিবর্তন অবশ্যম্ভাবী ছিল না। পাউন্ডের অনেক বন্ধুই তাকে ভয় পেয়েছিলেন বা ভেবেছিলেন যে হয়ত তার মাথা ঠিক নেই। কিন্তু এ থেকে বোঝা যায় যে কীভাবে সামাজিক অস্থিরতার সময়ে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আমূল প্রত্যাখ্যান ও ক্ষোভের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোনও সাংস্কৃতিক আন্দোলন একটি বিধ্বংসী রাজনৈতিক আদর্শে পরিণত হতে পারে।
গত অক্টোবরে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট এবং প্রযুক্তি অভিজাত মার্ক অ্যান্ড্রেসেন তার ফার্মের ওয়েবসাইটে ‘দ্য টেকনো-অপটিমিস্ট ম্যানিফেস্টো’ নামে একটি নথি প্রকাশ করেছেন। ৫০০০ শব্দের এই নথি একটি আদর্শিক ককটেল, যা ইতালীয় ভবিষ্যতবাদীদের কথা এবং বিশেষভাবে কবি মারিনেত্তিকে খুব ভালোভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়। অ্যান্ড্রেসেন সিলিকন ভ্যালির অন্যতম প্রভাবশালী বিলিয়নেয়ার বিনিয়োগকারীদের একজন, যিনি সমালোচনা সহ্য করতে না পারার জন্য এবং বেয়াড়া টাইপ লোক হিসেবে কুখ্যাত। শিরোনামে আশাবাদের প্রকাশ সত্ত্বেও প্রবন্ধটি তার বিরক্তির অনুভূতি দিয়েই চালিত বলে মনে হয়, কারণ তার মত হলো তিনি এবং তার পূর্বসূরিরা যেসব প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়েছেন সেগুলো এখন আর ‘সঠিকভাবে মহিমান্বিত’ নয়। তার এই ইশতেহারে তিনি এবং তার মতো প্রযুক্তি অভিজাতরা যে বিশ্বদৃষ্টি বা দর্শন লালন করেন তাই উঠে এসেছে।
অ্যান্ড্রেসেন লিখেছেন, প্রযুক্তির কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলোসহ এমন কোনও বস্তুগত সমস্যা নেই যা আরও প্রযুক্তি দিয়ে সমাধান করা যাবে না। আর প্রযুক্তির শুধু সর্বদা সামনেই অগ্রসর হওয়া উচিৎ নয় বরং সর্বদা তার অগ্রগতি ত্বরান্বিতও হওয়া উচিৎ, যাতে প্রযুক্তি-পুঁজির ঊর্ধ্বমুখী যাত্রা চিরকাল অব্যাহত রাখা নিশ্চিত করা যায়। তিনি ‘প্রযুক্তি নীতিশাস্ত্র’ এবং ‘অস্তিত্বগত ঝুঁকি’ এসবের মতো শিরোনামের আলোচনাকে প্রযুক্তিবিরোধী প্রচারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তার এই উদীয়মান রাজনৈতিক আন্দোলনের পবিত্র বিশ্বাসগুলোর সারসংক্ষেপ হলো:
আমরা বিশ্বাস করি আমাদের বুদ্ধিমত্তা ও শক্তিকে শুধু ইতিবাচকভাবেই দেখা উচিৎ এবং উভয়কেই অসীমের দিকে চালিত করা উচিৎ। আমরা দুঃসাহসিক কর্মপ্রচেষ্টায় বিশ্বাস করি। নায়কোচিত অভিযাত্রা, স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, অজানা পথে হাঁটা, ড্রাগনগুলোকে জয় করার পর নিজের মানুষদের জন্য লুটের মাল বাড়িতে আনায় বিশ্বাস করি…
আমরা প্রকৃতিতে বিশ্বাস করি, কিন্তু আমরা প্রকৃতিকে জয় করায়ও বিশ্বাস করি। আমরা এখন আর আদিম নই যে বজ্রপাতের ভয়ে কাঁপব। আমরা শীর্ষ শিকারী; বজ্রপাত এখন আমাদের জন্যই কাজ করে।
অ্যান্ড্রেসেন তার আন্দোলনের বেশ কয়েকজন ‘পৃষ্ঠপোষক সাধু’ চিহ্নিত করেছেন, তাদের মধ্যে কবি মারিনেত্তি একজন। তিনি ফিউচারিজমের ম্যানিফেস্টো থেকে উদ্ধৃত করেছেন, ‘প্রযুক্তির জন্য মারিনেত্তির ‘কবিতা’ অদলবদল করেছেন:
সৌন্দর্য শুধু সংগ্রামে বিদ্যমান। এমন কোনও মাস্টারপিস নেই, যার আগ্রাসী চরিত্র নেই। প্রযুক্তিকে অজানা শক্তির উপর সহিংস আক্রমণ হতে হবে, তাদের মানুষের সামনে মাথা নত করতে বাধ্য করতে হবে।
স্পষ্ট করে বলতে গেলে, অ্যান্ড্রেসেনের ইশতেহার কোনও ফ্যাসিবাদী দলিল নয়, তবে এটি চরমপন্থার একটি নজির। তিনি যুক্তিসঙ্গত ভাবেই বলেন যে, প্রযুক্তি, সামগ্রিকভাবে, নাটকীয়ভাবে মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটিয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছান, যে কোনও পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিগত বিকাশকে বাধা দেওয়ার যে কোনও প্রচেষ্টা ঘৃন্য।
এই অবস্থানকে নির্মোহভাবে বিবেচনা করলে, একে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় প্রত্যয় মনে হবে। বাস্তবে এর মাধ্যমে শুধুমাত্র তাকে এবং অন্যান্য সিলিকন ভ্যালি জায়ান্টদের যেকোনও নৈতিক বা নাগরিক কর্তব্য থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সামাজিক ক্ষতির ঝুঁকি বা ইতিহাস বিবেচনায় না নিয়ে এমন নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের অনুমোদন দেওয়া হয় যা শুধু তাদের নিজেদেরই সমৃদ্ধ করবে। অ্যান্ড্রেসেন তাদের শত্রুদের একটি তালিকা ও ‘জম্বি ধারনা’ও শনাক্ত করেন এবং তার অনুসারীদেরকে সেসবকে পরাজিত করার আহ্বান জানান। এই শত্রু তালিকায় ‘প্রতিষ্ঠান’ এবং ‘ঐতিহ্য’কেও রাখা হয়েছে।
অ্যান্ড্রেসেন লিখেছেন, আমাদের শত্রু হলো ‘সবজান্তা বিশ্বদর্শন, বিমূর্ত তত্ত্ব, বিলাসী বিশ্বাস, সামাজিক প্রকৌশল যা বাস্তব জগত থেকে বিচ্ছিন্ন, বিভ্রান্তিকর, অনির্বাচিত ও জবাবদিহিতাহীন- কোনও পরিণতি ছাড়াই সবার জীবন নিয়ে ঈশ্বর খেলা খেলে।
পরিহাসের বিষয় হল, শত্রুর এই বিবরণ অ্যান্ড্রেসেন এবং অন্যান্য সিলিকন ভ্যালি অভিজাতদের সঙ্গেই মেলে বেশি। বিগত দুই দশক ধরে তারা যে বিশ্বটি তৈরি করেছেন, তা নিঃসন্দেহে একটি বেপরোয়া সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জগত, যার জন্য এর স্থপতিদের কোনও পরিণতি ভোগ করতে হয় না, যারা আমাদের সকলের উপর তাদের নিজস্ব বিমূর্ত তত্ত্ব ও বিলাসী বিশ্বাসগুলোকে চাপিয়ে দেয়।
অ্যান্ড্রেসেন তার ইশতেহারে যেসব স্বতন্ত্র নীতি হাজির করেছেন তার মধ্যে কয়েকটি অবশ্য স্বাভাবিক। কিন্তু অ্যান্ড্রেসেনের অবস্থান ও ক্ষমতার বিবেচনায় তার ইশতেহারের অতিবেশি বিপ্লবীপনা উদ্বেগজনক। মাস্কসহ সিলিকন ভ্যালির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্পষ্টতই অনুদার ধারণাগুলোর দিকে ঝুঁকেছেন। ২০২০ সালে সিলিকন ভ্যালিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট পেয়েছিলেন ২৩ শতাংশ, যা অনেক কম কিন্তু ২০১৬ সালের চেয়ে বেশি, সেবার তিনি সিলিকন ভ্যালির ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।
কর্তৃত্ববাদী টেকনোক্রেসি বা প্রযুক্তি অভিজাততন্ত্রের প্রধান বিপদগুলো এই সময়ে রাজনৈতিক নয়, অন্তত ঐতিহ্যগত অর্থে নয়। তবুও ডিজিটাল বিশ্বের নিয়ম ও সাংস্কৃতিক রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচিত কয়েকজনের ইতোমধ্যেই কমবেশি কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, যা রাজনৈতিক শক্তির মতো শক্তিশালী হতে পারে।
১৯৬১ সালে তার বিদায়ী ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইসেনহাওয়ার জাতিকে আসন্ন প্রযুক্তি অভিজাততন্ত্রের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং আবিষ্কারকে সম্মানের সঙ্গে ধরে রাখার ফলে এমনটা ঘটবে। তবে আমাদের অবশ্যই সমান এবং বিপরীত বিপদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে যে, সরকারি নীতি নিজেই বৈজ্ঞানিক-প্রযুক্তিগত অভিজাতদের হাতে বন্দি হয়ে উঠতে পারে। আমাদের মুক্ত সমাজের সর্বোচ্চ লক্ষ্যগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নতুন ও পুরাতন নীতির মধ্যে এটি এবং অন্যান্য শক্তিগুলোকে আনা, ভারসাম্য স্থাপন করা এবং একীভূত করা।”
এর আট বছর পরে দেশের প্রথম কম্পিউটারগুলো আর্পানেট এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল, যা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের পূর্বসূরি এবং ১৯৯৩ সাল থেকে ব্যাপকভাবে বৃবহৃত হতে থাকে। সেসময় সিলিকন ভ্যালিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পুঁজিবাদী এবং মৌলিক ধ্যান ধারণাসহ আশাবাদী উদ্ভাবকদের জন্য একটি ইউটোপিয়া হিসেবে গণ্য করা হত, যারা বিশ্বকে বদলে দেবে এবং আমলাতন্ত্র বা ঐতিহ্যের ভারমুক্ত হয়ে ইন্টারনেটের গতিতে কাজ করে। (সেসময় ইন্টারনেটের গতি প্রতি সেকেন্ডে ১৪.৪ কিলোবিট ছিল)। এই সংস্কৃতির শুরুতেও তার ত্রুটি ছিল, কিন্তু এটি একটি সুস্পষ্টভাবে আমেরিকান উপায়ে কল্পনাপ্রবণ ছিল এবং এটি রূপান্তরমূলক যা কখনও কখনও এমনকি নির্বোধ সুন্দর হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরির দিকে পরিচালিত করেছিল।
দীর্ঘ সময়ের জন্য আমি প্রযুক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে অ্যান্ড্রেসেনের মতোই ভাবতাম। আমি বিশ্বাস করতাম, সোশাল ওয়েব অবশেষে ভালো কিছুই হবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনস্বার্থের পক্ষের মূল্যবোধগুলোই জয়ী হবে। আমি মনে করতাম, সামাজিক ওয়েব নিয়ন্ত্রণ করার আদৌ কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম না (এবং এখনও নই) যে সরকার নিজের ক্ষতি না করেই তা করতে পারবে কি না (নিয়ন্ত্রণের ইউরোপীয় মডেল আমেরিকার মুক্ত-সংবাদমাধ্যমের সুরক্ষার সঙ্গে গভীরভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং জনসাধারণের জানার অধিকার খর্ব করে)। আমি বাজারের প্রতিযোগিতাকে প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং সমাজের উন্নতির জন্য একটি শক্তি হিসেবেই দেখতে পছন্দ করতাম।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্পষ্ট হয়ে গেছে, নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন, কারণ প্রযুক্তি অভিজাততন্ত্রের উত্থান প্রমাণ করে যে সিলিকন ভ্যালির নেতারা জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করবেন না। সোশাল মিডিয়ার বিপদ থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য এবং সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন একচেটিয়াত্ব ভেঙে ফেলার জন্য আরও বেশি কিছু করা উচিৎ। একই সময়ে, আমার বিশ্বাস, নতুন প্রযুক্তি অভিজাতরা যে সাংস্কৃতিক পচন ধরিয়েছে, তা অর্থপূর্ণভাবে মোকাবেলা করার জন্য শুধু নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট হবে না।
মানবজাতির মঙ্গলে বিশ্ব-পরিবর্তনকারী প্রযুক্তির বিকাশে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তাদের যথাযথ অবস্থান পুনরুদ্ধার করা উচিৎ। (হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড ও এমআইটি এই ধরনের প্রচেষ্টার জন্য একটি কনসোর্টিয়াম তৈরিতে বিনিয়োগ করতে পারে)। ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আপনি হয়ত সোশাল মিডিয়া সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দিতে পারবেন না বা আপনার কর্মক্ষেত্রের নজরদারি সফটওয়্যার প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না— এমনকি আপনি হয়ত এসব থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসতে চান না। কিন্তু আদর্শকে সংজ্ঞায়িত করতে পারার মধ্যে অসাধারণ ক্ষমতা আছে এবং আমরা সবাই তা করতে পারি— নিজের জন্য; আমাদের প্রকৃত, বাস্তব জীবনের বন্ধুদের নেটওয়ার্কের জন্য; আমাদের স্কুলের জন্য; আমাদের উপাসনালয়ের জন্য।
কীভাবে আমরা আন্তঃব্যক্তিকভাবে এবং আমাদের কমিউনিটির মধ্যে আগ্রাসী প্রযুক্তি ব্যবহার করব, তা নিয়ে বিতর্ক এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সবার জন্য আরও পরিশীলিত নিয়ম তৈরি করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এর মধ্যে ক্লাসরুমে অ্যাপ এবং ইউটিউবের ব্যবহার, কিশোর-কিশোরীদের সবার হাতে স্মার্টফোন এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা উপেক্ষা সম্পর্কে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জিং রীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ। যারা বিশ্বাস করে যে আমরা সকলেই আরও ভাল কিছু পাওয়ার যোগ্য, এই ধরনের প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
আমাদের বাচ্চারা এমন ডেটা সেট নয় যা পরিমাপ, ট্র্যাক এবং বিক্রি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের বৌদ্ধিক উৎপাদন এআইর জন্য একটি নিছক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল নয়, যা আমাদের সৃষ্টি নকল করতে এবং চুরি করতে ব্যবহৃত হবে। আমাদের জীবন একটি স্ক্রিনে আটকে থাকার জন্য নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্য- আমাদের সমস্ত অগোছালোত্ব, গাছে ওঠা, রাত-সাঁতার, দুঃসাহসিক মহিমাসহ। যখন আমরা টুইট করি না বা ‘লাইক’ ক্লিক করি না বা স্ক্রলিং, স্ক্রলিং, স্ক্রলিং করি না তখনই আমরা নিজেদের সবচেয়ে ভালো সংস্করণ।
প্রযুক্তি অভিজাতরা ঠিকই বলেন যে, নতুন নতুন প্রযুক্তি বিশ্বকে আরও উন্নত করার চাবিকাঠি। তবে প্রথমে আমাদেরকে বিশ্বকে বর্ণনা করতে হবে যেভাবে আমরা একে চাই- যে সমস্যাগুলো আমরা জনস্বার্থে সমাধান করতে চাই এবং সেই মূল্যবোধ ও অধিকার অনুসারে যা মানুষের মর্যাদা, সাম্য, স্বাধীনতা, গোপনীয়তা, স্বাস্থ্য ও সুখকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এবং আমাদের জোর দিয়ে বলতে হবে, আমাদের প্রতিনিধিত্বকারী ছোটবড় প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতাদের এমনভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে, যা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য কী ভালো তা প্রতিফলিত করে এবং কেবল যা প্রযুক্তি অভিজাতদের সমৃদ্ধ করে তা নয়।
নতুন প্রযুক্তি অভিজাতদের নকশা করা পৃথিবীতে আমাদের থাকতে হবে না। তাদের অমানবিকীকরণ এবং ডেটা মাইনিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রকল্পের প্রতি আমাদের সম্মতি দিতে হবে না। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব এজেন্সি বা কর্তাস্বত্বা আছে।
‘আমরা পারি বলেই আমাদের তৈরি করা উচিৎ’ এমন নীতিও চলবে না। আর কোনও অ্যালগরিদমিক ফিডব্যাক চাই না। জনগণকে কম ক্ষমতাবান এবং ক্ষমতাবানকে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত কোনও অবকাঠামো চাই না। প্রতিদিন আমরা তাদেরকে আমাদের মনোযোগ দিয়ে ভোট দিই; এটি মূল্যবান, এবং যারা এটিকে আমাদের বিরুদ্ধে তাদের নিজেদের লাভ ও রাজনৈতিক লক্ষ্যে ব্যবহার করতে চায় তারা এটি মরিয়াভাবেই চাইবে। আপনার মনোযোগ তাদের দেবেন না।