Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

‘এক সিগারেটে আয়ু কমে ২০ মিনিট, এক প্যাকেটে ৭ ঘণ্টা’

sMOKING
[publishpress_authors_box]

ধূমপান চিকিৎসকদের বর্তমান ধারণার চেয়ে মানুষের অনেক বেশি আয়ু কমিয়ে দেয় বলে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের (ইউসিএল) এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এ কারণে ২০২৫ সালের মধ্যে ধূমপান ছাড়ার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রতিটি সিগারেট মানুষের জীবন থেকে গড়ে প্রায় ২০ মিনিট আয়ু কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ, ২০টি সিগারেটের একটি প্যাকেট আপনার জীবন থেকে প্রায় ৭ ঘণ্টা আয়ু কেড়ে নিতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ১০টি সিগারেট খান তারা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ধূমপান ছেড়ে দিলে ৮ জানুয়ারির মধ্যে তারা এক দিনের সমান আয়ু বাঁচাতে পারবেন। ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধূমপান না করলে তারা জীবনের এক সপ্তাহ এবং ৫ আগস্ট পর্যন্ত না করলে পুরো এক মাস বাঁচাতে পারবেন। আর আগামী এক বছর ধূমপান না করলে তারা প্রায় ৫০ দিনের আয়ু বাঁচাতে সক্ষম হবেন।

ইউসিএল-এর অ্যালকোহল ও তামাক গবেষণা বিভাগের প্রধান গবেষক ড. সারা জ্যাকসন বলেন, “মানুষ সাধারণত জানে যে ধূমপান ক্ষতিকর, কিন্তু এর প্রকৃত ক্ষতির মাত্রা অনেক কম করে দেখে।”

তিনি আবলেন, “যারা ধূমপান ছাড়তে পারে না, তারা গড়ে প্রায় ১০ বছর করে আয়ু হারান। তারা ১০ বছর কম বাঁচেন এবং জীবনের অনেক মূল্যবান সময়, বিশেষ মুহূর্ত এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটানোর অনেক সুযোগ হারান।”

ধূমপান বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধযোগ্য রোগ ও মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। দীর্ঘমেয়াদি ধূমপায়ীদের দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত এসব রোগে মারা যায়। ধূমপানের কারণে যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং এটি ইংল্যান্ডে ক্যানসারজনিত মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি ও মিলিয়ন উইমেন স্টাডির সর্বশেষ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি হলো ধূমপানের প্রভাব নিয়ে বিশ্বের প্রথম বৃহত্তম গবেষণা, যা ১৯৫১ সালে শুরু হয়। আর মিলিয়ন উইমেন স্টাডি ১৯৯৬ সাল থেকে নারীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করছে।

এর আগে ২০০০ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, একটি সিগারেট গড়ে জীবন থেকে ১১ মিনিট আয়ু কমিয়ে দেয়।

তবে জার্নাল অব অ্যাডিকশনে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণায় এই হিসাবকে প্রায় দ্বিগুণ করে দেখানো হয়েছে। নতুন তথ্য অনুযায়ী, একটি সিগারেট একজন ধূমপায়ী পুরুষের জীবন থেকে ১৭ মিনিট এবং একজন নারীর জীবন থেকে ২২ মিনিট আয়ু কেড়ে নেয়।

গবেষক দলের সদস্য ড. জ্যাকসন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, “কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, জীবনের শেষ কয়েক বছর না বাঁচলেও কোনও ক্ষতি নেই। কারণ বার্ধক্যে সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বা শারীরিক অক্ষমতা থাকে। তবে ধূমপান কেবল জীবনের অসুস্থ সময় কমায় না বরং মাঝ বয়সের সুস্থ সময়ও কমিয়ে দেয়।”

তিনি বলেন, “ধূমপান মানুষের অসুস্থতা শুরু হওয়ার সময়কে এগিয়ে নিয়ে আসে। তার মানে, ৬০ বছর বয়সেই একজন ধূমপায়ীর স্বাস্থ্য ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধের মতো হয়ে যায়।”

কিছু ধূমপায়ী দীর্ঘ আয়ু পেলেও বেশিরভাগ ধূমপায়ী নানা রোগে আক্রান্ত হন এবং অনেকে ৪০ বছর বয়সেই মারা যান। এই পার্থক্য ধূমপানের ধরন, সিগারেটের ধরন, পাফ নেওয়ার সংখ্যা এবং কত গভীরভাবে ধোঁয়া টানা হয় তার ওপর নির্ভর করে। আর ব্যক্তিভেদেও ধূমপানের বিষাক্ত পদার্থ মানুষের ওপর ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, সুস্বাস্থ্য উপভোগ করা এবং জীবনের প্রত্যাশিত আয়ু বাড়ানোর জন্য ধূমপান পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন।

পূর্বের গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের কোনও নিরাপদ মাত্রা নেই। যারা দিনে একটি সিগারেট খান, তাদের হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি দিনে ২০টি সিগারেট খাওয়া মানুষের তুলনায় মাত্র ৫০% কম।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “যেকোনো বয়সে ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা আছে। তবে যত দ্রুত এই ‘মৃত্যুর চক্র’ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তত বেশি দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন পাওয়া সম্ভব।”

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ধূমপায়ীরা অনলাইনে NHS Quit Smoking অ্যাপ এবং Personal Quit Plan ব্যবহার করে পরামর্শ, সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। এই পরিকল্পনা ব্যক্তির পছন্দ অনুযায়ী সাজানো হয়।

রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস-এর তামাক বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা প্রফেসর সঞ্জয় আগরওয়াল বলেন, “প্রতিটি সিগারেট জীবনের মূল্যবান মিনিট কেড়ে নেয়। ধূমপান শুধু ব্যক্তি নয়, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং অর্থনীতির ওপরও বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে।”

সংবাদসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত