Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

মেডিকেলের সেই শিক্ষক পিস্তল নিয়ে চলতেন, ভয়ও দেখাতেন

গুলিবর্ষণের পর শিক্ষকের বিচার দাবিতে বিক্ষোভে এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গুলিবর্ষণের পর শিক্ষকের বিচার দাবিতে বিক্ষোভে এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
[publishpress_authors_box]

সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীকে গুলি করার পর গ্রেপ্তার হয়েছেন শিক্ষক রায়হান শরীফ।

তার সঙ্গে থাকা পিস্তলটিও জব্দের কথাও জানিয়েছে পুলিশ। তবে পিস্তলটি বৈধ কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল।

এদিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে, রায়হান শরীফ আগে থেকে পিস্তল নিয়ে ঘুরতেন, ভয় দেখাতে গুলিও ছুড়তেন।

রায়হান শরীফ সরকারি ওই মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

সোমবার বিকালে কলেজ ক্যাম্পাসে গুলিতে আরাফাত আহত হওয়ার পর শিক্ষক রায়হান শরীফের বিচার চেয়ে বিক্ষোভে নামে শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষককে ধরে নিয়ে আসে।

অধ্যক্ষ মো. আমিরুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “যতটুকু জেনেছি, আজ তিনি অসময়ে তার ক্লাস নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তার ক্লাস করতে অপারগতা জানায়। এই নিয়ে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই শিক্ষক আরাফাতের পায়ে গুলি করেন।”

শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার ফরেনসিকের ক্লাস ছিল তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের। কিন্তু কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক রায়হান শরীফ সেখানে এসে জোর করে তার ক্লাস করাতে নিয়ে যান। এনিয়ে ঝামেলা শুরু হয়।

এক শিক্ষার্থী বলেন, এই শিক্ষক ক্লাসে এসে দু-একজন শিক্ষার্থীকে ‘টার্গেট’ করেন। তাদের দিকে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখান। আজও ভয় দেখাতে গিয়ে আরাফাতের পায়ে গুলি করেন। গুলির শব্দে অন্য শিক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুস সাকিব উচ্ছ্বাস বলেন, “এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে এর আগেও গুলি করার অভিযোগ আছে। তিনি শিক্ষার্থীদের হলে গিয়েও অস্ত্র প্রদর্শন করেন। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে এর আগে জানানো হলেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”

রায়হান শরীফ মাঝে মধ্যেই অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতেন বলে স্বীকার করে অধ্যক্ষ আমিরুল। তবে এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কেন উদাসীন ছিল, সে বিষয়ে অধ্যক্ষের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা যখন শিক্ষক রায়হান শরীফকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে, তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তার দিতে জুতা ছুড়ছিলেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেন, “রায়হান শরীফকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।”

বাংলাদেশের নাগরিকরা নিজের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার লাইসেন্স নিতে পারলেও তাতে কয়েকটি শর্ত রয়েছে।

কারও জীবনের ওপর বাস্তব ঝুঁকি থাকলে, অর্থাৎ কেবল আত্মরক্ষায় জন্য তিনি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে আবেদন করতে পারেন। আর লাইসেন্স পেলে ফাঁকা গুলি চালানোর ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম আছে। তার ব্যত্যয় ঘটলে শাস্তির বিধানও রয়েছে।

রায়হান শরীফের অস্ত্রটি বৈধ কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আরিফুর বলেন, “আমরা তার পিস্তলের বৈধতা যাচাই করছি। এখন পর্যন্ত পিস্তলটি বৈধ হওয়ার মতো কোনও প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু আরও কয়েকটি ধাপ যাচাই শেষে তার অস্ত্রটি অবৈধ বলা সম্ভব।”

যদি পিস্তলটি অবৈধ হয়, তাহলে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও মামলা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে উরুতে গুলিবিদ্ধ আরাফাত বর্তমানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ।

পুলিশ সুপার বলেন, “ওই শিক্ষার্থীর পকেটে মোবাইল থাকায় তিনি গুরুতর আহত হননি। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত আছেন।”

তদন্তে কমিটি গঠন

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে গুলি করার অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দূর-রে- শাহওয়াজ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তদন্ত কমিটির কথা জানানো হয়েছে।

তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক রয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ। অন্য দুই সদস্য হলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো মহিউদ্দিন মাতুব্বর এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কমিটির প্রধান অধ্যাপক বায়জীদ খুরশীদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আগামীকাল ভোরে সিরাজগঞ্জ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের উদ্দেশে রওনা দেব। বিস্তারিত তদন্ত করে অবশ্যই এ ঘটনার কারণ আমরা জানাব, দোষীদের শাস্তির আওতায় আসতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত