বন্যার পানি নেমে যেতেই ক্ষয়ক্ষতি দেখা দিতে শুরু করে। এরমধ্যে বাড়তে থাকে ডায়রিয়া এবং আরও নানা পানিবাহিত রোগ।
বিশেষজ্ঞরা তাই সতর্ক করে বারবার বলছেন, বন্যার সময় এবং পানি নামার পর থেকে চর্মরোগ হতে পারে অনেকের।
বন্যা এবং এই সময় বৃষ্টিতে দীর্ঘ সময় ভেজা শরীর ও স্যাঁতস্যাঁতে কাপড়ে থাকার কারণে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ হয়ে থাকে।
এতে করে চামড়ায় চুলকানি দেখা দেয়। এই সময় অনেকের সংস্পর্শে আসার কারণে হতে পারে স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া রোগও। আর পরিবারে একজনের হলে বাকিদেরও খোসপাঁচড়া হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
আঙ্গুলের মাঝখানে ঘা রোগ হতে পারে অনেকের। আবার চুলকাতে চুলকাতেও ত্বকে ঘা হতে পারে।
প্রাথমিক সাবধানতা
বন্যার সময় শিশুকে পানির সংস্পর্শে আসা খেলনা দেওয়া যাবে না। তুলা বা ফোম দিয়ে বানানো খেলনা পানি শুষে রাখে, তাই এ ধরনের খেলনা এই সময় শিশুদের হাতে একেবারেই দেওয়া ঠিক হবে না।
বাড়ির আশেপাশে বা কোথাও কেবল কাদা জমেছে বলে মনে হলেও সেখানে থাকতে পারে ব্লেড, পিন, কাঁটা এবং নানা বিপজ্জনক বস্তু। আবার বন্যার সময় পানি ও কাদা থেকে কোনো বস্তু তুলতে গেলে ধারালো ধাতু, কাচ, লাঠিতে লেগে আঘাতজনিত কারণেও চামড়ায় ক্ষত দেখা দিতে পারে।
এসময় হাতে গ্লাভস এবং পায়ে রাবারের বুট, প্লাস্টিকের জুতা পরে কাজ করা যেতে পারে।
ত্বকের কাটাছেঁড়া অংশে অবশ্যই পানিরোধী ব্যান্ডেজ করতে হবে। যদি পানিরোধী ব্যান্ডেজ হাতের কাছে পাওয়া না যায় তাহলে গজ অথবা পরিষ্কার কাপড় পেঁচিয়ে রাখতে হবে।
বন্যার পানিতে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো দূষণ থাকতে পারে। দুর্যোগের এই সময় চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব স্যাঁতস্যাঁতে কাপড় এড়ানো এবং শরীর শুকনা রাখা। কড়া রোদে শুকানো কাপড় পরে থাকতে হবে।
চর্মরোগ এড়াতে যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
বন্যার পানিতে হাত-পা ভিজলে এরপর অবশ্যই কুসুমগরম সাবান পানি দিয়ে গা ধুয়ে এবং মুছে নিতে হবে।
নিমপাতার অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ত্বকের সংক্রমণ ঠেকাতে পারে। তাই ত্বকের যে কোনো সমস্যায় এবং সাবধান থাকতে নিমপাতা ফোটানো পানি ঠান্ডা করে গোসলের পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এভাবে গোসলে শরীরের চুলকানি থেকে আরাম মিলবে।
যার যার সামর্থ ও সুবিধা অনুসারে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রিম, সাবান, শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
চুলকানির উপশম না হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
স্ক্যাবিস চিকিৎসা
খালি চোখে দেখা যায় না এমন আট পায়ের অতিক্ষুদ্র পোকা চামড়ার নিচে গর্ত করে করে ডিম পাড়তে শুরু করে। এতে শরীরে ফুসকুড়ি ও তীব্র চুলকানি বাড়তে থাকে।
হাত ও পায়ের আঙুলের ফাঁকে, কব্জি-বগল ও ঊরুসন্ধিতে ঘামাচির মতো ছোট ছোট দানার আকারে স্ক্যাবিস দেখা দেয়। দ্রুত চিকিৎসা না করালে সারা শরীরেই ছড়িয়ে যায় এই খোসপাঁচড়া রোগ।
ভীষণ ছোঁয়াচে এই রোগ যে কোনো বয়সী কারও হতে পারে। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলালেও এ রোগ ছড়াতে পারে।
ক্রিম, লোশন ও ট্যাবলেট ব্যবহারের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। তবে এক বাড়িতে একজন আক্রান্ত হলেও সবারই এই চিকিৎসা নিতে হবে।
ফ্লুক্লক্সাসিলিন, পারমিথ্রিন, ক্রোটামিটন, বেনজিল বেনজয়েট চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসারে ব্যবহার করতে হবে। এর সঙ্গে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধও চলতে পারে।