তারকা তো তারাই যাদের হেন বিষয় নেই যা নিয়ে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। কিন্তু আমাদের মতোই একই গ্রহের মানুষ হয়েও স্রেফ খ্যাতিই কি তাদের আমাদের থেকে আলাদা করে? এই বাক্যে কিছুটা সত্যি থাকলেও পুরোটা যে আছে এমনটা ঠিক জোরের সাথে বলা যাচ্ছেনা। আপনি হয়তো বলবেন তারাও তো আমাদের মতো খায়, ঘুমায় আর গায়ে মশা বসলে সপাটে চড় বসায়। কিন্তু ‘ঘুম প্রিয়’ বিখ্যাত কিছু তারকাদের নিয়ে এ লেখাটি পড়লে আপনার ধারণা বদলে যেতে পারে। তখন আবার মনে হতে পারে- এই না হলে তারকা!
মারায়া ক্যারি
‘ভিশন অব লাভ’ দিয়ে সঙ্গীত আকাশে তার আবির্ভাব। দুনিয়া কাঁপানো এ গান জয় করে নেয় অগণিত শ্রোতার হৃদয়। সঙ্গীতের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এরপর একে একে যুক্ত হয় আরও হিট গান। মারায়া ক্যারিকে নিয়ে এইসব তথ্য খুব নতুন কিছু নয়। কিন্তু তার ম্যারাথন ঘুমের অভ্যাস এর কথা কয়জন জানে?
দিনে কম করে হলেও ১৫ ঘণ্টা নাকি ঘুমান এই তারকা! ম্যারাথনই বটে!
শোনা যায়, এক বিশেষ কায়দায় শয়ন কক্ষের আর্দ্রতা কণ্ঠের জন্য উপযোগী করে এরপর ঘুমাতে যান ক্যারি। যেনতেন ঘুম এ নয়!
জেনিফার লোপেজ
গোটা একবিংশ শতক নেচেছিলো যার গানে তার নাম জেনিফার লোপেজ। বলছি ‘ইফ ইউ হ্যাড মাই লাভ’ গানটির কথা। এ গান শোনেননি, সারা দুনিয়ায় এমন মানুষ মেলা ভার। ‘মাথা আউলে’ দেওয়া গ্ল্যামার আর জাদুকরী কণ্ঠ, এই দুই দিয়ে ৫৪-তেও হৃদয় হরণ করে যাচ্ছেন তরুণদের।
কিন্তু কীসে লোপেজের ‘মাথা আউলে’ যায় জানেন?
উত্তর হলো ‘ঘুম না হলে’।
আমেরিকান ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ইন্সটাইল’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লোপেজ বলেন, “নিজেকে ঠিক রাখার একটাই উপায়, আর তা হলো ঘুম।” রাতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুম না হলে লোপেজের ‘মাথা আউলে’ তো যায়-ই, এর সাথে যুক্ত হয় ক্লান্তি। ঘুম না হলে মেজাজও নাকি খিচড়ে থাকে এই পপ তারকার।
আর প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে জীবন থেকে চা-কফি তো বাদ দিয়েছেনই, এমনকি সিগারেট এবং অ্যালকোহলকেও না বলেছেন লোপেজ। ঘুম তার এতোই প্রিয়!
অপরাহ উইনফ্রে
ঘুম অপরাহ উইনফ্রের কাছে এক তপস্যার নাম। আর ঘুমের জন্য রীতিমতো ‘স্লিপ ডক্টর’ এর পরামর্শ মেনে চলেন তিনি। আমেরিকার জনপ্রিয় এই টিভি ব্যক্তিত্ব ঘুমোতে যান রাত ১০টার ভেতর আর জেগে ওঠেন ঠিক ৬টায়। আর ঘুমোতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন নিজের ‘গ্র্যাটিটিউট বুক’ এ নিয়ম করে লেখেন কয়েক বাক্য।
কিন্তু ঘুম ভাঙ্গাতে অ্যালার্মের দ্বারস্থ হন না একেবারেই। স্বাভাবিক নিয়মেই ঘুম থেকে জেগে ওঠার অভ্যাস রপ্ত করেছেন এই তারকা। আর বিছানা ছেড়েই মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে মন দেন ব্যায়ামে। যত্ন নেন নিজের প্রিয় পোষা কুকুরের। আর ঘুমকে কেন্দ্র করে এই সমস্ত কায়দা-কানুনের একচুলও ছাড় দিতে নারাজ এই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।
জেনিফার অ্যানিস্টন
ঘুম তো নয়, যেন ‘বহু বাসনায় প্রাণপণে’ পাওয়া কোন কিছু। হলিউড অভিনেত্রী, ‘ফ্রেন্ডস’ টিভি সিরিজ খ্যাত জেনিফার অ্যানিস্টোনের ঘুমের প্রসঙ্গে এলে এমনই মনে হয়। দীর্ঘদিন লড়েছেন ইনসমনিয়ার সঙ্গে। ছিল ‘স্লিপওয়াকিং’ এর মতো জটিল সমস্যা।
আর এখন ঘুম তার বহুবাসনার ধন। ঘুম এবং ঘুমের প্রস্তুতি নিতে জেনিফার যা যা করেন সেসব জানলে আপনার মনে পড়ে যেতেই পারে রবি ঠাকুরের ‘তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’ গানটির কথা।
কিন্তু ঘুমাতে কী করেন এই তারকা?
জেনিফার অ্যানিস্টন তার ঘুমের জন্য নেন কয়েক স্তরের প্রস্তুতি। প্রথমটি হলো, সন্ধ্যা হলেই লক্ষ্মীটির মতোন চলে যান নিজের বেডরুমে। আর এ সময় নিজের ফোনটি রেখে দেন রুমের বাইরে। দূরে থাকেন অন্যান্য স্ক্রিন থেকেও।
এরপর সেরে ফেলেন মুখের মেকআপ তুলে ফেলার কাজ। খুঁজে নেন নিজের ‘আসল আমি’ কে। আয়েশ করে নিয়ে নেন একটি ‘হট বাথ’। শেষে ম্যাডিটেশন এবং ‘গ্র্যাটিটিউট বুক’ এ একান্ত নিজের কথাবার্তা।
তরপর নিজেকে সঁপে দেন বিছানায়। চেষ্টা করেন প্রতিদিন ঠিক একই সময়ে ঘুমাতে যেতে। তবে ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে নিভিয়ে দেন ঘরের সমস্ত বাতি। মহার্ঘ্য এক ঘুম বটে!
কার্লি ক্লস
কিন্তু আমেরিকান মডেল কার্লি ক্লস আরও এক কাঠি সরেস। ঘুমের জন্য এমনকি বাদ দিতে পারেন সমস্ত কাজকর্ম! তাও আবার যখন থাকে ভীষণ ব্যস্ত শিডিউল। তক্কে তক্কে থাকেন এই সুন্দরী, কখন চট করে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যায় এই আশায়।
ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্লস জানান, “ঘুম আমার এতোই প্রিয় যে, গোটা দিন আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নষ্ট করতে পারি।”
শুধু কি তাই? ক্লসের কাছে ঘুম হলো ‘সৌন্দর্যের আধার’।
আলিয়া ভাট
ঘুম নিয়ে ‘গাঙ্গুবাই’ আলিয়া ভাট যা বললেন তাতে আফসোসই হতে পারে আপনার। বলিউডের এই তারকা জুম টিভিকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি চাইলেই ১৮ঘণ্টা টানা ঘুমাতে পারেন!
কিন্তু আফসোস! নেহায়েত সময়ের অভাবের কারণেই নাকি এমন ‘কুম্ভের’ ঘুম দিতে পারছেন না আলিয়া। পারলে ছাড়িয়ে যেতেন মারায়া ক্যারিকেও।
তার আশা পূরণ হোক!