বিশ্বে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিটেন্সের প্রবাহে গত মার্চের পর এপ্রিলেও ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি এপ্রিল মাসের ২৬ দিনে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬৮ কোটি (১.৬৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছে।
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১১০ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ২৬ দিনে ১৮ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার বা ৭১০ কোটি টাকা।
মাসের বাকি ৪ দিনে (২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক দাঁড়াবে ১৯৩ কোটি ৮৪ লাখ (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার। সেক্ষেত্রে গত মার্চ মাসের পর এপ্রিলেও ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের কম রেমিটেন্স দেশে আসবে।
মার্চে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। আর গত বছরের মার্চের চেয়ে এই মার্চে ১.২৭ শতাংশ কম রেমিটেন্স এসেছে।
তবে গত ফেব্রুয়ারিতে আগের বছরের একই মাসের চেয়ে রেমিটেন্স বেশি ছিল ৩৯ শতাংশ।
গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছিল। জানুয়ারিতে এসেছিল ২.১১ বিলিয়ন ডলার; ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল আরও বেশি, ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবারই দুই ঈদের আগে রেমিটেন্সপ্রবাহ বাড়ে; ঈদের পর কম আসে। কিন্তু এবার রোজার ঈদের আগে প্রবাসী আয় বাড়েনি। ঈদের পর কিছুটা গতি এলেও পরবর্তী দিনগুলোতে কম এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম পাঁচ দিনে (১ থেকে ৫ এপ্রিল) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। পরের সাত দিনে (৬ থেকে ১২ এপ্রিল) পাঠিয়েছে ৪২ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। গত ১১ এপ্রিল দেশে ঈদ উদযাপিত হয়।
এরপর ১৩ থেকে ১৯ এপ্রিল এসেছিল ৪০ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত এসেছে ৩৯ কোটি ৯৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
সব মিলিয়ে ২৬ দিনে (১ থেকে ২৬ এপ্রিল) দেশে এসেছে ১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।
আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। নভেম্বরে আসে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ১৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এই নয় মাসে ১৬ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলে প্রবাসীরা।
গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছিল বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিটেন্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বেড়েছিল বলে জানিয়েছে তারা।
তবে মার্চ মাসে কিছুটা হোঁচট খায়। এপ্রিলেও সেই নেতিবাক ধারা দেখা যাচ্ছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। কমতে শুরু করে রেমিটেন্স।
সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে।
এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।
রিজার্ভের পতন ঠেকাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনও প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।
গত ২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছে প্রবাসীর স্বজনরা। এই আড়াই টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।