বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীতে ধূমপায়ীদের মৃত্যুর হার অধূমপায়ীদের তুলনায় বেশি ছিল তিন গুণ। এছাড়া গবেষণা বলছে, ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের তুলনায় তাদের মৃত্যুর হার ছিল প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের ‘দ্য রিলেশনশিপ বিটুইন স্মোকিং অ্যান্ড কোভিড-১৯ আউটকামস ইন টার্মস অব মর্বিডিটি অ্যান্ড মর্টালিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। বৃহস্পতিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষণার তথ্য বলছে, কোভিড-১৯ মহামারিতে ধূমপায়ীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ধোঁয়াবিহীন তামাক বা এসএলটি (জর্দা-গুল-সাদা পাতা) ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ হার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ এবং অধূমপায়ীদের মৃত্যুহার ছিল ২ দশমিক ১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার’-এ ১২ জুন ২০২০ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ১ লাখ ২৭ হাজার ৭১ জন সেবা গ্রহীতার মধ্যে ১ হাজার ৬০৭ জনের ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ধূমপায়ী রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি অধূমপায়ীদের থেকে ৭৩ শতাংশ বেশি এবং ধূমপান ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা ৪০ শতাংশেরও বেশি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল ৩৬ শতাংশ বেশি।
গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা বলেন, “তামাকের ভয়াবহতা রুখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নানা গবেষণা ও পরিসংখ্যান দিয়ে আমরা সহজেই বুঝতে পারি তামাক আমাদের জন্য কত ক্ষতিকর! তাই তামাক রুখতে সবার অংশগ্রহণ একান্ত জরুরি এবং এক্ষেত্রে আমরা যে কোনওভাবে সহায়তা করতে প্রস্তুত।”
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, “করোনার সঙ্গে ধূমপানের সম্পর্ক নিরূপণে করা গবেষণার ফলাফলে আমরা শঙ্কিত। আমাদের তামাক বিষয়ে দ্রুত সচেতন হতে হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আফতাব উদ্দীন সরকার বলেন, “সংক্রামক এবং অসংক্রামক রোগসহ তামাকের অন্যান্য ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের তামাক চাষ নিয়েও সচেতন হতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে তামাকের নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”
গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, জনসমাগম, কর্মক্ষেত্র এবং গণপরিবহনকে ১০০ ভাগ ধূমপানমুক্ত রাখা, কার্যকর করারোপের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধি করে তামাক পণ্য তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে রাখা, তামাকের যে কোনও প্রচারণা নিষিদ্ধ করাসহ বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারাকে শক্তিশালী করে তামাকের বিস্তার রোধ করা জরুরি। জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে যেন তারা তামাক সম্পর্কিত চিকিৎসা এবং তামাকের ব্যবহার রোধে কার্যকর কাউন্সেলিং দিতে পারে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ মহামারিতে ২২ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৯ জন। এসময়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ হাজার ৪৯৩ জন।