কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংকস যে শরীরের জন্য ভালো নয়, তা আমরা কমবেশি সবাই জানি। তবুও কিছু লোক আছেন, যারা এটি ছাড়া স্বস্তি বোধ করেন না। যেমন, বাঙালি পরিবারে পোলাও-মাংস, বিরিয়ানি বা এ ধরনের ভারি খাবার খাওয়ার পর কোমল পানীয় খাওয়া একটি চল- বহুবছর ধরেই।
অনেকেই আবার স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য সুগার ফ্রি বা ডায়েট কোমল পানীয় গ্রহণ করেন। কিন্তু এসবও ডেকে আনতে পারে শরীরের নানা ধরনের ক্ষতি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন সাত বছরব্যাপি এক সমীক্ষা চালিয়ে বলেছে, কোমল পানীয় বেশি খেলে হাড়ের ঝুঁকি রয়েছে। দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনের আরেকটি গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, কোলা সেবন হাড়ের খনিজ ঘনত্বের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ক্যাফেইন এবং ফসফরিক অ্যাসিড, দ্বিগুণ হুমকি
বেশিরভাগ কোমল পানীয়তে দুইটি মূল উপাদান থাকে: ক্যাফেইন এবং ফসফরিক অ্যাসিড। অ্যাসিডের তেতো স্বাদ লুকাতে প্রায়ই প্রচুর পরিমাণে চিনি যোগ করা হয়।
ক্যাফেইন ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ পদার্থ।
আর ফসফরিক অ্যাসিড ক্যালসিয়ামের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং, যখন কেউ কোমল পানীয় খান, তখন তার অজান্তেই শরীরের হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চিনিযুক্ত সোডা এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি
অতিরিক্ত চিনি খাওয়া ক্যালসিয়ামের ক্ষতির আরেকটি কারণ। চিনি রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে কিডনি দিয়ে ক্যালসিয়াম বের হয়ে যায়। আবার, যারা নিয়মিত কোমল পানীয় পান করেন, তারা প্রায়ই দুধ, দই বা অন্যান্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খান। ফলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।
নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি
নারীদের ক্ষেত্রে হাড়ের ঘনত্ব কম হওয়ার আশঙ্কা পুরুষদের তুলনায় বেশি। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় এই সমস্যাটি আরও বাড়তে থাকে। নিয়মিত কোমল পানীয় পান করা এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে।
শিশু-কিশোরদের ঝুঁকি
শিশু ও কিশোরদের হাড়ের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। কোমল পানীয় পান করলে এই বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
সুগার ফ্রি কোমল পানীয় কি নিরাপদ?
সুগার ফ্রি কোমল পানীয়ে চিনি না থাকলেও ফসফরিক অ্যাসিড এবং ক্যাফেইন থাকে। ফলে হাড়ের ক্ষতির ঝুঁকি এতেও রয়েছে।
কোমল পানীয় হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ক্যাফেইন, ফসফরিক অ্যাসিড এবং চিনির সংমিশ্রণ এই পানীয়গুলোকে হাড়ের শত্রু করে তোলে। তাই যতটা সম্ভব কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে পানি, দুধ, ফলের রস ইত্যাদি খান।
হাড়ের সুরক্ষায় যা প্রয়োজন
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: দুধ, দই, পনির, বাদাম, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি।
ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। সূর্যের আলো এবং কিছু খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।