Beta
বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

জেল হত্যা দিবসে থাকছে সোহেল তাজের কর্মসূচি

জেল হত্যা দিবস জাতীয়ভাবে পালনের দাবিতে গত কয়েকবছর ধরে সক্রিয় তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ।
জেল হত্যা দিবস জাতীয়ভাবে পালনের দাবিতে গত কয়েকবছর ধরে সক্রিয় তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ।
[publishpress_authors_box]

রাজনীতিক পট বদলে গেলেও জেল হত্যা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি সামনে রেখে কর্মসূচি রাখছেন তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ।

রবিবার এই দাবিতে পদযাত্রা করে যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দেবেন জানিয়ে তাতে অংশ নিতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ছন্নছাড়া অবস্থায় পড়া আওয়ামী লীগ জেল হত্যা দিবস পালনের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জেল হত্যা দিবসের একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেছে তার দল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বন্দি করা হয়েছিল তার ঘনিষ্ঠ চার সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।

বঙ্গবন্ধুর খুনিরাই ওই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে হত্যা করে এই জাতীয় চার নেতাকে। পঁচাত্তরের খুনিদের দায়মুক্তিও দিয়েছিল তৎকালীন সরকার।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হয়ে পাকিস্তানে থাকার মধ্যে তার ঘনিষ্ঠ সহচর এই চার নেতাই স্বাধীনতা যুদ্ধ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সৈয়দ নজরুল ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, মনসুর আলী ছিলেন অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী, কামারুজ্জামান ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

যে চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনে তার উল্টো যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জেল হত্যাকাণ্ডের দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

আওয়ামী লীগের শাসনকালে জেল হত্যা দিবস জাতীয়ভাবে পালিত না হলেও দিনটিতে দলীয় কর্মসূচি থাকত।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৫ আগস্ট ও ৭ মার্চ যখন জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে, তখন ৩ নভেম্বরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি পুনরায় তুললেন তাজউদ্দীনপুত্র সোহেল তাজ।

সোহেল তাজের ৩ দাবি

তিন দাবি নিয়ে রবিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে পদযাত্রা করবেন বলে শনিবার সোহেল তাজ তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পাতায় ঘোষণা দেন।

বিকাল সাড়ে ৩টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পশ্চিম পাশে সাকুরার সামনে অবস্থান নেবেন তিনি। এরপর বিকাল ৪টায় সেখান থেকে রওনা হবেন যমুনার উদ্দেশে।

স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বৈষম্যবিরোধী চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে এই পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সোহেল তাজ লিখেছেন, “দেখতে দেখতে ৪৯ বছর পার হয়ে গেল, অথচ এখন পর্যন্ত জাতির এই ৪ বীর, যাদের নেতৃত্বে সফলভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হলো, যাদের নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেলাম, আজ অবধি রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের কোনও স্বীকৃতি নাই। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”

এর পাশাপাশি মুজিবনগর সরকার গঠনের দিন ১০ এপ্রিল ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসাবে পালন এবং জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ও জীবনী, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথভাবে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানাবেন সোহেল তাজ।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আমার এই তিন দাবি ন্যায্য ও যৌক্তিক এবং এটা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এবং বৈষম্যবিরোধী সকলের প্রাণের দাবি।”

জাতীয় এই চার নেতা আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। তাদের উত্তরসূরিরাও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে এবং দলটির হয়ে সংসদ সদস্য ছিলেন। কেউ কেউ সরকারেও ছিলেন।

সোহেল তাজ নিজেও ২০০১ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন তিনি।

কয়েক মাস পর অবশ্য মন্ত্রিত্ব ছাড়েন সোহেল তাজ, পরে সংসদ সদস্যপদ ছেড়ে বিদেশ চলে যান। কয়েক বছর পর ফিরলেও আওয়ামী লীগে আর সক্রিয় হননি তিনি। তবে ৩ নভেম্বরকে জাতীয়ভাবে পালনের দাবিতে সক্রিয় হন। ২০২২ সালে পদযাত্রা করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তিনি।

সোহেল তাজ আওয়ামী লীগে না ফেরার পর তার বোন সিমিন হোসেন রিমি তার আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হন। শেখ হাসিনার সর্বশেষ সরকারের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন তিনি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

জেল হত্যা দিবসের স্মরণে বনানী কবরস্থানে সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দীন ও মনসুর আলীর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি রাজশাহীতে কামারুজ্জামানের কবরেও ফুল দেওয়া হবে।

রবিবারের এই কর্মসূচির খবর জানিয়ে আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পাতায় এক পোস্টে বলা হয়েছে, এছাড়া জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শহীদ সবার স্মরণে দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পাতায় প্রকাশিত দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার এক বিবৃতিতে বলা হয়, “পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় ৩ নভেম্বর ….. কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমি জাতির পক্ষ থেকে জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।”

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, “পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর কুচক্রী মহল দেশের যে পরিস্থিতি করেছিল, বর্তমানে তেমন পরিস্থিতিই বিরাজ করছে। বাংলাদেশ আজ অবরুদ্ধ এবং কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, শোক পালনের অধিকার নেই।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত