Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

মামলা প্রত্যাহারে সময় বেঁধে দিল সনাতন জাগরণ মঞ্চ

সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ
সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ
[publishpress_authors_box]

পথে পথে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে আবারও বড় ধরনের সমাবেশ করে রাষ্ট্রদোহ মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সোমবারের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে সমাবেশে।

চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় মোড়ে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল আগেই। এদিন বিকাল তিনটা পর্যন্ত পুলিশ-সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাউকেই সমাবেশস্থলে আসতে দেয়নি। তখন হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী অবস্থান নেয় চেরাগি পাহাড় মোড়ের কাছাকাছি আন্দরকিল্লা, জামালখান, কাজীর দেউড়ী, নন্দনকানন এলাকার মোড়ে মোড়ে। এত এত মানুষকে পুলিশ আর আটকে রাখতে পারেনি।

আসামীর তালিকায় নাম থাকায় শুক্রবারের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন না সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র এবং চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী। চেরাগি পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকেই মামলা প্রত্যাহারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতারা।

সমাবেশে সনাতন জাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস মহারাজ বলেন, “লালদীঘি মাঠে লাখো মানুষের জনসমুদ্র দেখে ভীত হয়ে সনাতনীদের দাবিয়ে রাখতে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আট দফা দাবিতে সনাতন জাগরণ মঞ্চ তাদের বিভাগীয় সমাবেশ অব্যাহত রাখবে।”

বৃহস্পতিবার ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকালে দেশের ৬৪ জেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে সনাতন জাগরণ মঞ্চ।

সময় বেঁধে দিয়ে গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “আগামী সোমবারের মধ্যে মামলা তুলে নেওয়া না হলে এবং এই মামলা নিয়ে কেউ জলঘোলা করতে চাইলে, আমরা আরও কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হব। অনেকে বলছে হিন্দুরা প্রতিবেশি দেশ ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দালালি করছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ক্ষমতায় আসার জন্য এরই মধ্যে অনেক রাজনৈতিক দল সমর্থনের জন্য ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে এসেছে।”

সমাবেশের শুরুতে স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে সমবেত হয়েছি। কিন্তু নগরের জামালখান, আসকার দীঘির পাড়, নন্দনকানন ও আন্দরকিল্লা এলাকায় লোকজনকে সমাবেশে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।”

স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘আমাদের কারাগারে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, মামলা করেছেন সাধু ও সনাতনীদের বিরুদ্ধে। সাধুরা কিন্তু ভয় পান না। ৮ দফা আদায় করে ছাড়ব। সনাতনীদের দমিয়ে রাখতে পারবেন না। প্রশাসনকে সম্মান করি। তাই আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি।”

গৌরাঙ্গ দাস আরও বলেন, জাতীয়বাদী দল বিএনপি ভুল বুঝতে পেরেছে। তাই তারা মামলার বাদী ফিরোজ খানকে বহিষ্কার করেছে। ফিরোজ খানকে যে ইন্ধন দিয়েছে, তাকে খুঁজে বের করতে হবে। না হলে বারবার এ দেশের নাম ক্ষুণ্ন হবে।

সমাবেশে সনাতন ধর্মের নেতারা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, কিছুদিন আগে এই বাংলাদেশের একটা গোষ্ঠী জাতীয় পতাকা অবমাননা করেছিল। আমরা দেখেছি তারা আমাদের জাতীয় পতাকার উপরে ফিলিস্তিনের পতাকা দিয়েছে। আমরা আরও দেখেছি পায়ের নিচে জাতীয় পতাকা পড়ে থাকতে। তখন মামলা কেন হলো না?

সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে বুধবার রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন চট্টগ্রাম শহরের মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান। পরে অবশ্য তাকে পদ থেকে বহিস্কার করেছে বিএনপি।

২৫ অক্টোবর বুধবার চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে লাখো জনতার অংশগ্রহণে সনাতনীরা সমাবেশ করে। সেখানে চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী বলেন, “এ বঙ্গের উত্তরাধিকার আমরা। আমরা এ ভূমির ভূমিপুত্র, উড়ে আসিনি। আমরা মোগল-ব্রিটিশ পর্তুগীজ নয়, আমরা এ ভূমির সন্তান। আমাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করবেন না। কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন তাহলে এ ভূমি সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য হবে। এ ভূমি আফগানিস্তান, সিরিয়া হবে। ”

এর পরই সেদিন নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেন বিএনপি নেতা। সেদিন রাতে দুই সনাতন ধর্মাবলম্বী রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশকে গ্রপ্তার করে পুলিশ।

পরদিন বৃহষ্পতিবার বিকাল তিনটায় চেরাগি মোড়ে তাৎক্ষণিক সমাবেশের ডাক দেয় সনাতন জাগরণ মঞ্চ। কিন্তু সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবির কড়া নিরাপত্তা এবং বাধায় বড় সমাবেশ করতে পারেনি সংগঠনটি। সেদিন মঞ্চ থেকেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এবং সোমবারের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত