শিশুদের আবেগ প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় বাবা-মায়ের করণীয় নিয়ে এসময়ের প্যারেটিং ফর্মুলায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। শিশু সন্তানের আবেগ সামলাতে মা-কে সঙ্গে নিয়ে বাবাদের ভূমিকার ওপর জোর দিচ্ছেন সম্পর্ক-বিশেষজ্ঞরা।
‘সোলমেট প্যারেন্টিং’ পরিচিত নামে জনপ্রিয় এ তত্ত্বে, সন্তানের সঙ্গে আবেগের বন্ধন গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সময়ে বাবা-মাকে বিভিন্ন ভূমিকা পালনের পরামর্শ দেওয়া হয়। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু সন্তানের সঙ্গে অতিরিক্ত বন্ধন গড়ে তুলতে গেলে কিছু বিপত্তিও দেখা দিতে পারে। এতে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের ভীতটিতে সংকটও দেখা দিতে পারে।
সোলমেট প্যারেন্টিং কী
এ ধরনের প্যারেন্টিং-এ বাবা-মা সন্তানের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলেন। সন্তানের জন্য তারা নিজেদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং প্রিয় সঙ্গী হিসেবে আস্থা অর্জনের রাস্তায় হাঁটেন। বেশিরভাগ বাবা-মা তাদের সন্তানের মানসিক ও আবেগগত চাহিদা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন এবং সেগুলো পূরণের চেষ্টার মধ্য দিয়ে শিশুকে বড় করে তুলতে চান। আর এ প্রক্রিয়ায় বাবা-মাকে কখনও চিয়ার-লিডারের, কখনও সহমর্মী শ্রোতা হিসেবে, আবার কখনও তাদের সহযোগী বা প্রেরণাদাতার ভূমিকা নিতে হয়। বিশেষ করে সন্তানের আবেগগত চাহিদা বুঝে বাবা-মা নিজেদের করণীয় নিয়ে পদক্ষেপ নেন।
আজকের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানের স্বাতন্ত্র্য এবং আত্ম-প্রকাশকে উৎসাহিত করার বিষয়ে আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। যেহেতু ‘সোলমেট প্যারেন্টিং’ সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানসিক বুদ্ধিমত্তা এবং খোলামেলা যোগাযোগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, তাই এটি নতুন যুগের পিতামাতার মধ্যে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির পাশাপাশি, ‘সোলমেট প্যারেন্টিং’ শিশুদের মধ্যে আত্ম-সচেতনতা তৈরির লক্ষ্য রাখে। এমনকি কোনটি করা উচিত এবং কোনটি নয়- সেটিও একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে যৌক্তিকতার মধ্য দিয়ে সন্তানকে শেখানোর চেষ্টা করেন বাবা-মায়েরা।
সোলমেট প্যারেন্টিং এর ঝুঁকি
সোলমেট প্যারেন্টিং গভীর মানসিক বন্ধন তৈরি করে। তবে সীমারেখা বজায় রাখা এবং ভারসাম্যপূর্ণ না হলে এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
সন্তানের সঙ্গে অতিরিক্ত সম্পৃক্ততায় শিশুর স্বাধীনতা ব্যাহত হতে পারে এবং বাবা-মায়ের অনুমোদনের ওপর নির্ভরতার কারণে তারা প্রয়োজনীয় সময়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে পারে।
অতিরিক্ত সুরক্ষার ফলে অতি-নির্ভরতা হতে পারে, অন্যদিকে সম্পর্কের সীমারেখা অস্পষ্ট হওয়ার ফলে বাবা-মায়ের কর্তৃত্ব কমে যেতে পারে। সর্বদা আবেগগতভাবে জড়িত থাকার কারণে অভিভাবকদেরও ক্লান্তিকর অনুভূতি হতে পারে।
তদুপরি, এই প্যারেন্টিং পদ্ধতির কারণে শিশু অযৌক্তিক প্রত্যাশা তৈরি করতে পারে, যার ফলে তারা বাবা-মায়ের অনুপস্থিতি মোকাবেলা করতে অপ্রস্তুত হতে পারে।
আর এ জন্য বাবা-মা’র উচিত একটি ভারসাম্যপূর্ণ নিয়ম মেনে চলা। সন্তানের ব্যাপারে অতিরিক্ত ক্ষমাশীল না হওয়া, জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা তৈরির পরিবেশ রাখতে হবে। সীমানা না জানলে বাবা-মা-এর সম্মানের ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে।
ভারসাম্যের গুরুত্ব
কর্তৃত্ব বজায় রাখা এবং শিশুদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও সুস্থ স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করতে আবেগগত সংযোগ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সোলমেট প্যারেন্টিং-এর সীমানা এবং কাঠামো নির্ধারণ করা উচিত।
জেন-জি এবং মিলেনিয়াল প্রজন্মের বাবা-মা’দের লক্ষ্য হলো এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে তাদের বাচ্চারা আইডিয়া, মন খারাপ এবং লক্ষ্যের কথা স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবে।
নিজের শিশুদের নানা কাজে উৎসাহ দেওয়ার এই পরিবেশটি মিলেনিয়াল ও জেন জি-দের খুব কম অংশই তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন।
‘সোলমেট প্যারেন্টিং’ পদ্ধতির বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে, যেমন- আত্ম-মূল্য বৃদ্ধি, উন্নত মানসিক নিরাপত্তা এবং পরিবারে একটি সুষম সুস্থ সম্পর্ক। এই পরিবেশে বেড়ে ওঠার সময় শিশু নিজেকে ভালোবাসতে শেখে এবং বুঝতে পারে। এমনকি নিজের চাহিদা ও অনুভূতি সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি হয়। এমন একটি প্রেমময় পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের মধ্যে শক্তিশালীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা, স্থায়ী বন্ধন এবং সহানুভূতি বেশি দেখা যায়।