Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

এক হ্যান্ডব্যাগে টলায়মান গোটা দেশের রাজনীতি

দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক ঝড় তুলেছে এমন একটি ব্যাগ (ছবির মাঝখানে)।
দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক ঝড় তুলেছে এমন একটি ব্যাগ (ছবির মাঝখানে)।
[publishpress_authors_box]

ফিলিপিন্সে স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোস যখন ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন, তখন তার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসের বিলাসি জীবনযাপন ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ইমেলদার ৮৮৮টি হ্যান্ডব্যাগের কাহিনীও এসেছিল সংবাদমাধ্যমে।

তিন যুগ পরে এখন মাত্র একটি হ্যান্ডব্যাগে অস্থির একই অঞ্চলের দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতি। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের মধ্য-মেয়াদে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস। আগামী ১০ এপ্রিল হবে ভোটগ্রহণ।

কিন্তু এর মধ্যে সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, তার স্ত্রীকে ঘিরে সর্বশেষ একটি কেলেঙ্কারির জেরে তার জনপ্রিয়তা কমছে। এনিয়ে বিপাকে পড়েছে কোরিয়ার রক্ষণশীল শাসকদল পিপল পাওয়ার পার্টিও (পিপিপি)।

দক্ষিণ কোরিয়ায় মতো একটি পিতৃতান্ত্রিক দেশের হিসেবে সাধারণ কোনও ফার্স্ট লেডি নন কিম কিওন হি (৫১)। ১২ বছর আগে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে বিয়ের আগেই তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রদর্শনী আয়োজক হিসেবে নিজের একটি সফল কর্মজীবন দাঁড় করিয়ে ফেলেছিলেন। এই দম্পতির কোনও সন্তান নেই, তবে তারা প্রচুর সংখ্যক বিড়াল ও কুকুর পালেন। সেগুলোর ছবি ইউন তার প্রেসিডেন্ট অফিসেও ঝুলিয়ে রাখেন।

কিম তার আগের ফার্স্ট লেডিদের মতো নন, যারা বেশিরভাগই তাদের স্বামীদের ছায়ায় থাকতেন। কিমের নিজস্ব ফ্যান ক্লাব রয়েছে এবং কোরিয়ান সংস্কৃতির উৎসাহী প্রচারক হিসেবে প্রচারের আলোয় থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিম কুকুরের মাংস ব্যবসার বিরুদ্ধেও একজন সোচ্চার। ফ্যাশনেবল কিমের পরা দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকও তাকে রাখে আলোচনায়।

দামি ও সুন্দর হ্যান্ডব্যাগের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে কিমের। আর হ্যান্ডব্যাগের প্রতি তার এই ভালোলাগাই তার জন্য কাল হয়েছে এবং তাকে একটি রাজনৈতিক ঝড়ের কেন্দ্রে ঠেলে দিয়েছে।

তার বিরুদ্ধে বিখ্যাত ফরাসি ব্র্যান্ড ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের ২,২০০ ডলার দামের একটি দামি ব্যাগ উপহার হিসেবে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনার ব্যাখ্যা ও তদন্তের জন্য ক্রমবর্ধমান আহ্বান সত্ত্বেও কিম এখনও কোনোও জবাব দেননি। তবে তার স্বামী প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ পরিকল্পিত ও সাজানো রাজনৈতিক নাটক।

দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্স্ট লেডি কিম কিওন-হিকে ঘিরে বিতর্ক এটিই প্রথম নয়। এর আগে তার বিরুদ্ধে পিএইচডি গবেষণায় অন্যের লেখা চুরি ও সিভিতে ভুয়া তথ্য দেওয়া এবং পুঁজিবাজারে জালিয়াতির মতো একাধিক অভিযোগ ওঠে।

পিএইচডি গবেষণায় অন্যের লেখা চুরি ও সিভিতে ভুয়া তথ্য দেওয়ার জন্য কিম ক্ষমা চেয়েছেন। তবে পুঁজিবাজারে দর জালিয়াতি ও ডিওর ব্যাগ নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি।

ফলে ডিওর ব্যাগ কেলেঙ্কারি দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দল এবং প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের জন্য সামনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আগে একটি বড় রাজনৈতিক সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

সউলের হঙ্গিক ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক চো হি-কিয়ং বলেছেন, “ডিওর ব্যাগ কেলেঙ্কারি হল প্রবাদের সেই সুইয়ের মতো, যা উটের পিঠ ভেঙে দেয়। আর সমস্যা হলো এই কেলেঙ্কারির শক্তিশালী চাক্ষুস প্রমাণ আছে।”

ডিওর ব্যাগ কেলেঙ্কারি কী

এই বিতর্কের সূচনা হয় গত বছরের নভেম্বরে গোপনে ধারণ করা একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ফার্স্ট লেডি এক যাজকের কাছ থেকে একটি মেঘ নীল রঙের বাছুরের চামড়ার তৈরি ‘লেডি ডিওর পাউচ’ উপহার নিচ্ছেন। কোরিয়ান-আমেরিকান ওই যাজকের নাম চোই জায়ে-ইয়ং। তিনি কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া ও পুঁজিতান্ত্রিক দক্ষিণ কোরিয়াকে ফের একত্রীকরণের পক্ষেও প্রচার চালান।

কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চোইয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার ইতিহাস রয়েছে। তিনি বেশ কয়েকবার দেশটিতে ভ্রমণও করেছেন। তখন পিয়ংইয়ংয়ের রাষ্ট্রীয় গীর্জাগুলোতে প্রার্থনা অনুষ্ঠানও পরিচালনা করেন তিনি।

চোই বলেন, দুই কোরিয়াকে এক করার বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার জন্যই তিনি ফার্স্ট লেডি কিম কেওন হির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এর ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে দুবার মুখোমুখি বৈঠকও হয়। একবার ২০২২ সালের জুনে আরেকবার সেপ্টেম্বরে। সেপ্টেম্বরের বৈঠকটি হয় ফার্স্ট লেডির আর্ট অফিসে। তার কয়েকমাস আগেই মাত্র কিমের স্বামী ইউন প্রেসিডেন্ট হন।

চোইয়ের দাবি, আগের বৈঠকে তিনি কিমকে ফোনে কারও সঙ্গে স্পর্শকাতর রাষ্ট্রীয় বিষয় নিয়ে কথা বলতে শোনেন। ওই কথপোকথনের ধরন দেখে শঙ্কিত হয়েই তিনি তাদের পরবর্তী বৈঠকের দৃশ্য গোপনে ভিডিওতে রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য তিনি হাত ঘড়ির মধ্যে লুকানো একটি স্পাই ক্যামেরা ব্যবহার করেন।

চোই বলেন, দুর্নীতি সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকারবোধ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি এই কাজ করেন।

সেপ্টেম্বরে কিমের সঙ্গে দ্বিতীয়বার সাক্ষাতের সময় যাজক চোই তাকে ৩০ লাখ ওন (২,২৪০ ডলার) মূল্যের একটি ডিওর হ্যান্ডব্যাগ উপহার দেন। চোইকে সেই ব্যাগ ও গোপন ক্যামেরা কিনে দিয়েছিল দেশটির বামপন্থী সংবাদ মাধ্যম ভয়েস অব সিওল। সংবাদ মাধ্যমটি ইউন সরকারের কঠোর বিরোধিতার জন্য পরিচিত।

এর প্রায় এক বছর পরে ২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষদিকে ভয়েস অব সিউল তাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি প্রকাশ করে। ভিডিওতে দেখা যায়, ফার্স্ট লেডি কিম যাজক চোইয়ের সঙ্গে কথা বলছেন। এ সময় চোই কিমকে বলেন, তিনি তার জন্য একটি উপহার এনেছেন। তখন কিম বলেন, “আপনি কেন এমন জিনিস আনেন? দয়া করে এত দামি জিনিস আর আনবেন না।”

তবে ভিডিওতে কিমকে ব্যাগটি নিজের হাতে নিতে দেখা যায়নি। অবশ্য ব্যাগটি তার সামনের টেবিলেই রাখা ছিল।

প্রথবারের মতো মুখ খুললেন প্রেসিডেন্ট

গত বুধবার ইউন প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এই অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছেন। তার অভিযোগ, এটি একটি সাজানো ঘটনা। তার দাবি, নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে বিপদে ফেলতেই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে।

ইউন সুনির্দিষ্টভাবে তার স্ত্রীর ডিওর ব্যাগ উপহার গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেননি। এছাড়া এই বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে, কিম চোইয়ের উপহার আনার বিরুদ্ধে যথেষ্ট দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদও করেননি।

ইউন বলেন, “আমার স্ত্রী মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময়ই তার বাবাকে হারিয়েছে। ফলে নিজ শহরের মানুষেরা তার কাছে আসলে ফিরিয়ে দিতে পারেন না। যাজক চোই যখন তার সঙ্গে দেখা করতে বলে তখনও সে তাকে না বলতে পারেনি। সমস্যা হলো, সে তাকে আরও কঠোরভাবে মানা করতে পারেনি এবং তা দুঃখজনক।”

ইউন সমর্থকরাও যাজক চোইয়ের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের সমর্থকরাও বলছেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য চোই এই নাটক সাজিয়েছেন।

তবে যাজক চোইয়ের দাবি, তিনি কিমকে বৈঠকের আগেই জানিয়েছিলেন যে, তিনি তার জন্য ব্যাগটি নিয়ে আসছেন। কিন্তু কিম তাকে মানা করেননি বা পরেও ব্যাগটি ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করেননি। এর আগে জুনের বৈঠকের সময়ও তিনি ফার্স্ট লেডিকে ১৩০০ ডলারের কসমেটিকস উপহার দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন চোই।

দুর্নীতির প্রতি দক্ষিণ কোরীয়দের ঘৃণা

ভিডিওটিতে কিমকে ফের দুই কোরিয়ার একত্রীকরণ বিষয়ে কাজ করার জন্য গভীর আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়। কিন্তু তা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ কিছু বলছে না, বরং ডিওর ব্যাগটিই তাদেরকে বেশি ক্ষেপিয়েছে।

কিউং হি ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক কিম ইউন-চেওল বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজ সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায় তখন যখন রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা বা তাদের ঘনিষ্ঠরা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন এবং তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা ব্যবহার করে বাড়তি সুবিধা ভোগ করেন।” কিমের বিরুদ্ধেও স্বামীর প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ কোনও ছেলেখেলা নয়। এর আগে সাবেক রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হেকেও দুর্নীতির জন্য অভিশংসনের মুখে পড়ার পর কারাবরণ করতে হয়েছিল।

তবে, এই ঘটনার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপ কী হতে পারে তা স্পষ্ট নয়। দেশটির দুর্নীতিবিরোধী আইনে কোনও সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রীর একবারে ১০ লাখ ওন (৭৪৮ ডলার) এবং বছরে ৩০ লাখ ওনের বেশি মূল্যের উপহার গ্রহণ নিষিদ্ধ। আর সেই উপহার অবশ্যই সেই সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে।

প্রেসিডেন্ট ইউনের জনপ্রিয়তায় ধস

স্ত্রীর দামি ব্যাগ উপহার গ্রহণের এই কেলেঙ্কারিতে প্রেসিডেন্টে ইউন সুক ইউলের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ইউনের জনসমর্থন গত নয় মাসের মধ্যে এখন সর্বনিম্নে।

গত শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) গ্যালাপ কোরিয়ার প্রকাশিত সাপ্তাহিক এক জরিপে দেখা গেছে, ইউনের জনসমর্থন মাত্র ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনীতির দুরবস্থা, জনসংযোগের অভাব ও ফার্স্টলেডির এই দামি ব্যাগ উপহার গ্রহণ কেলেঙ্কারির কারণেই ইউনের জন সমর্থনে ধস নেমেছে।

গত মাসে গ্যালাপের আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন, কিমের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। একই সময়ে কেবল নিউজ চ্যানেল ওয়াইটিএনের প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, স্ত্রীকে ঘিরে বিতর্কের বিষয়ে ইয়ুনকে জবাবদিহি করতে হবে।

ডিসেম্বরের আরেকটি জরিপে দেখা গেছ, ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন, কিম ঠিক কাজ করেননি। আর মাত্র ২৭ শতাংশ বলেছেন, তাকে ফাঁদে ফেলার জন্যই হয়তো এই কাজ করেছেন যাজক চোই জায়ে-ইয়ং।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক রি জং-হুন বলেছেন, “এটি একটি রাজনৈতিক বোমা। এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক বাড়তেই থাকবে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন এমন এক সময়ে এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হলো, যখন প্রেসিডেন্ট ইউন ও ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) রক্ষণশীল সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। এপ্রিলের নির্বাচনকে ইউনের শাসনব্যবস্থার মধ্যবর্তী মূল্যায়ন হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদি পিপিপি আইনসভার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হয় তাহলে ইউন তার পাঁচ বছরের বাকি মেয়াদে রাজনৈতিক অচলাবস্থায় জর্জরিত হতে পারেন।

প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টিও প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল ও তার দলকে আক্রমণ করার জন্য বিষয়টি হাতে তুলে নিয়েছে। তারা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে ঘিরে ‘সন্দেহ গোপন করার’ অভিযোগ করেছে।

বিরোধী নেতা হং ইক-পিও বলেছেন, “প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও ক্ষমতাসীন দলের এটিকে উপেক্ষা করা এবং শুধু ক্ষমা চাইলেই পার পেয়ে পাওয়া যাবে— এমন মনোভাব হাস্যকর।”

ঘটনাটি ঘিরে জনগণের ক্ষোভ বাড়ায় ইউনের নিজ দলের রাজনীতিকরাও চটেছেন। ইউনের সঙ্গে পিপিপি-র সিনিয়র সদস্যদের মধ্যেও ফাটল ধরেছে। দলের অনেকে তার স্ত্রীর চলন-বলনকে ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের কুখ্যাত রানী মারি আঁতোয়ানেতের ভোগবিলাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। পিপিপির কিছু সদস্য ইউন ও কিমকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে।

এই ঘটনার সমালোচনা করায় দলটির অন্তর্বর্তী নেতা এবং প্রেসিডেন্ট ইউনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হান ডং-হুনকেও পদত্যাগ করতে বলা হয়। তবে তিনি পদত্যাগ করেননি। পরে অবশ্য তাদের বিরোধ মিটে যায়।

আগামী এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল নিজেদের পক্ষে সমর্থন বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। দুটি দলের কোনোটির প্রতিই জনগণের আর খুব বেশি আস্থা নেই। উভয় দলই অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াইয়ে জর্জরিত।

বিরোধীরা বহুদিন ধরেই ফার্স্ট লেডির বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে দর নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করে আসছে। গত বছর সিওল সরকার একটি এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিল করে দেয় এই অভিযোগে যে, এর ফলে ফার্স্ট লেডি কিমের পরিবার আর্থিকভাবে লাভবান হবে। ওই প্রকল্পের জন্য কিমের পরিবারের মালিকানাধীন জমির দাম বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। এর আগে জমি কেনায় জালিয়াতি করার দায়ে গত নভেম্বরে আদালত তার মাকে এক বছরের কারাদণ্ডও দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ফার্স্ট লেডির দামি হ্যান্ডব্যাগ উপহার গ্রহণ কেলেঙ্কারি ক্ষমতাসীন অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠতে পারে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত