এএফসি এশিয়ান কাপ, যাকে এশিয়া অঞ্চলের ফুটবল ‘বিশ্বকাপ’ বলেও ডাকা হয়। প্রতিযোগিতাটির প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ কোরিয়া। এরপর আরও চারবার ফাইনাল খেললেও শিরোপা আসেনি। আরেকটি শিরোপার অপেক্ষায় পেরিয়ে গেছে ৬০ বছর। সেই অপেক্ষা দূর করতে কাতারের আসরে নেমেছে তারা। লক্ষ্যের পথেও আছে। পৌঁছে গেছে ২০২৩ এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে।
যত সহজে বলা হলো, দক্ষিণ কোরিয়ার পথ অত সহজ নয়। প্রায় প্রত্যেক ম্যাচেই ফিরে আসার গল্প লিখে শেষ চার নিশ্চিত করেছে। কোয়ার্টার ফাইনালের কথাই ধরা যাক। শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো কঠিন লড়াই জিতেছে ২-১ গোলে।
৪২ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়া পিছিয়ে পড়ে। ক্রেগ গুডউইনের দেওয়া গোলটিই জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াকে। কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার কিছুক্ষণ আগে দক্ষিণ কোরিয়া সমতায় ফেরে। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমে সন হেয়াং-মিন পেনাল্টি আদায় করেন। সেখান থেকে স্পষ্ট কিকে গোল করে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যান হোয়াং হি-চ্যান।
✨ 𝐒𝐄𝐌𝐈-𝐅𝐈𝐍𝐀𝐋𝐈𝐒𝐓𝐒 ✨
— #AsianCup2023 (@afcasiancup) February 2, 2024
❗Never. Say. Never. They just keep on doing it!
🇰🇷 Korea Republic are heading into the semi-finals. #AsianCup2023 | #HayyaAsia pic.twitter.com/HYkE3BBBMV
অতিরিক্ত সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার জয়ের নায়ক অধিনায়ক সন। টটেনহামের এই তারকা উইঙ্গার ১০৪ মিনিটে বাঁকানো ফ্রি কিক থেকে গোল পেলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ‘টাইগার্স অব এশিয়া’। বাকি সময় এই ব্যবধান ধরে রেখে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে দক্ষিণ কোরিয়া।
শুধু এই ম্যাচ নয়, এবারের এশিয়া কাপের প্রায় সব ম্যাচেই নাটকীয়ভাবে ফেরার গল্প লিখেছে দক্ষিণ কোরিয়া। যে কারণে তাদের সমর্থকরা সনদের খেলার নাম দিয়েছে ‘জম্বি ফুটবল’। যার অর্থ হলো, একটি দল যারা মরতে রাজি নয়। যারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মানসিকতা রাখে এবং জয়ী হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া সমর্থকদের দেওয়া এই ‘জম্বি ফুটবল’ কি সনদের জন্য ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক? শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়ে আসার মানসিকতার প্রশংসা অবশ্যই কুড়াচ্ছে তারা। কিন্তু বারবার শেষ মুহূর্তে গিয়ে রক্ষা পাওয়া দলের পারফরম্যান্স ঠিকই প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
সেমিফাইনালে ওঠার পথে দক্ষিণ কোরিয়া খেলেছে ৫ ম্যাচ। শুধুমাত্র গ্রুপ পর্বে বাহরাইনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে জিতেছে। এছাড়া বাকি চার ম্যাচের সবকটিতে হয় ইনজুরি টাইমে কিংবা অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে রক্ষা পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। জর্ডান ও মালয়েশিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ দুটি ড্র করতে পেরেছিল ইনজুরি টাইমের গোলে। এরপর শেষ ষোলোতে সৌদি আরবকে হারায় টাইব্রেকারে। আর কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় অতিরিক্ত সময়ে।
দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোয় বাহবা যেমন পাচ্ছে, তেমনি সমালোচনাও হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবল নিয়ে। সমর্থকদের দেওয়া ‘জম্বি ফুটবল’ ট্যাগ অবশ্য খুশি মনে আলিঙ্গন করছেন কোচ ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান ও অধিনায়ক সন। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ শেষে ক্লিন্সমান বলেছেন, “যেকোনও ডাকনাম আমার কাছে ঠিক আছে।”
কিন্তু বারবার চাপের মধ্যে কেন পড়ছে দক্ষিণ কোরিয়া? জার্মান কোচ সেটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, “দারুণ সব খেলোয়াড়ের মিশ্রণে এই দলটা। ৬০ বছর ধরে এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জেতে না দক্ষিণ কোরিয়া। খেলোয়াড়দের মনের মধ্যে হয়তো কাজ করে যে, ‘যদি জিততে না পারি!’ সেকারণেই হয়তো শুরুতে একটু ঝামেলা হচ্ছে।”
অধিনায়ক সনের কাছে অবশ্য ‘জম্বি ফুটবল’-এ ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক কোনও দিকই নেই। তার কাছে জয়ই বড় কথা, “আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমরা জয় পাচ্ছি। একটা বিষয় আমি নিশ্চিত করতে চাই, আমাদের দলটা এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ১২০ মিনিট খেলা মোটেও সহজ বিষয় নয়। তবে ছেলেরা খেলছে।”