Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্শাল ল’ জারির ঘোষণাকে ‘ডিপফেইক’ ভেবেছিলেন বিরোধী নেতা

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জে-মিয়ং। ছবি: সিএনএন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জে-মিয়ং। ছবি: সিএনএন।
[publishpress_authors_box]

টেলিভিশনে প্রেসিডেন্টের মার্শাল ল’ বা সামরিক আইন জারির ঘোষণার দৃশ্যকে প্রথমে ‘ডিপফেইক’ বা ভুয়া ভিডিও ভেবেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দলের নেতা লি জে-মিয়ং।

বৃহস্পতিবার সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। লি জে-মিয়ং আরও বলেন, তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন প্রেসিডেন্টের অপসারণ চায়।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট উন সুক ইয়েল গত মঙ্গলবার গভীর রাতে হঠাৎ করেই টেলিভিশনে এক বিশেষ ভাষণে মার্শাল ল’ জারির ঘোষণা দেন। তবে পার্লামেন্ট সদস্যদের বিরোধিতার মুখে কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি তা প্রত্যাহারে বাধ্য হন।

প্রেসিডেন্টের ওই ঘোষণার দুই ঘণ্টার মধ্যেই পার্লামেন্ট সদস্যরা রাতেই জাতীয় পরিষদে একত্রিত হয়ে তার এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য ভোট দেন।

লি জে-মিয়ং সিএনএন-কে বলেন, “সেদিন রাতে কাজ শেষ করে আমি স্ত্রীর সঙ্গে বাড়িতে শুয়ে ছিলাম। তখন হঠাৎ স্ত্রী আমাকে ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখিয়ে বললেন, ‘প্রেসিডেন্ট মার্শাল ল’ ঘোষণা করছেন’।

“আমি উত্তরে বলি, এটা ডিপফেইক। অবশ্যই ডিপফেইক। এটা সত্যি হতে পারে না।” ডিপফেইক বলতে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া অডিও বা ভিডিও বোঝান।

লি আরও বলেন, “তবে যখন আমি ভিডিওটি দেখলাম, তখন সত্যিই দেখলাম প্রেসিডেন্ট মার্শাল ল’ ঘোষণা করছেন। তারপরও মনে হলো, এটি বানানো। এটি ভুয়া।”

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণা দেশটির সকলকেই হতবাক করে দেয়। কারণ দেশটি গত চার দশক ধরে নিজেকে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। সেখানে নিয়মিত প্রতিবাদ এবং সুরক্ষিত স্বাধীনতা বিদ্যমান, যা রক্তাক্ত স্বৈরাচারী শাসনের দীর্ঘ ইতিহাস অতিক্রম করে অর্জিত হয়েছে।

বুধবার সকালে প্রেসিডেন্ট তার সিদ্ধান্ত বাতিল করার পর প্রতিবাদকারীরা তাকে অপসারণের দাবিও তুলেছেন। বিরোধী দলগুলো প্রেসিডেন্টেকে অপসারণে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।

লি জে-মিয়ং এই অভিশংসন প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি উন সুক ইয়েলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।

মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই লি জে-মিয়ং সিউলের পার্লামেন্টে ছুটে যান। তিনি লাইভ-স্ট্রিম করে দেখান কীভাবে তিনি একটি বেড়া টপকে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন। এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যম এক্সে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কয়েক কোটি বার দেখা হয়েছে।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাতে হঠাৎ করেই সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট।

পার্লামেন্ট আগামী শনিবার প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের বিষয়ে ভোট দিতে পারে। অভিশংসন বিল পাস হতে হলে ৩০০ সদস্যের জাতীয় পরিষদের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ কমপক্ষে ২০০ ভোট প্রয়োজন।

তবে, প্রেসিডেন্ট উনের ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি এই প্রচেষ্টা আটকে দিতে কাজ করছে। প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের জন্য বিরোধী দল এককভাবে প্রয়োজনীয় সব ভোট নিশ্চিত করতে পারবে না। এর জন্য সরকারে থাকা দলের কয়েকজন সদস্যের ভোটও লাগবে।

মঙ্গলবার রাতে সরকারি দলের বেশ কয়েকজন সদস্যও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যোগ দিয়ে সামরিক আইন জারির ঘোষণা বাতিলে ভূমিকা রাখেন। তবে তারা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে ভোট নাও দিতে পারেন।

ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি নেতা হান ডং-হুন বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, তিনি অভিশংসনের বিরোধিতা করবেন। কারণ এতে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে, অনেক বিরোধী আইনপ্রণেতা পার্লামেন্ট ভবন ছেড়ে যেতে সাহস করছেন না। এমনই একজন বিরোধী দলের সদস্য কাং সুন-উ। তিনি মঙ্গলবার রাত থেকেই সেখানে অবস্থান করছেন।

তিনি সিএনএন-কে বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন এবং ভয় পাচ্ছি যে প্রেসিডেন্ট উন যে কোনো সময় আবার সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিতে পারেন, যেহেতু প্রথম ঘোষণা ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য আমরা এখানেই থাকছি, বাড়ি যাচ্ছি না।”

লি জে-মিয়ং, যিনি মানবাধিকার আইনজীবী থেকে প্রাদেশিক গভর্নর হয়েছিলেন, ২০২২ সালের নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে তখন কোনো প্রার্থীই বিশেষ জনপ্রিয় ছিলেন না। উভয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধেই নানা কেলেঙ্কারি ও আইনি অভিযোগ ছিল।

লি জে-মিয়ং নিজেও এখন ঘুষ গ্রহণ ও এক বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত অভিযোগসহ একাধিক মামলার আসামি।

রয়টার্স জানায়, নভেম্বরে তাকে সরকারি তহবিলের ব্যক্তিগত অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া তিনি নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্তও হয়েছেন।

তবে লি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত