Beta
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ইতিহাস গড়ে রকেট যেভাবে লঞ্চপ্যাডে ফেরাল স্পেসএক্স

SpaceX-launches-its-most-ambitious-Starship-test-flight-yet
[publishpress_authors_box]

বিশ্বের শীর্ষধনী ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স মহাকাশে মানুষ ও মালামাল বহনের জন্য তৈরি ‘স্টারশিপ’ রকেটের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এই রকেটে করেই একদিন মানুষকে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

রবিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট সিস্টেমটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। পঞ্চমবারের চেষ্টায় এই সফলতা এল।

এবারই প্রথম স্পেসএক্স সফলভাবে এই রকেটের ‘বুস্টার’-কেও ফিরিয়ে এনে উৎক্ষেপণ প্যাডে নিরাপদে অবতরণ করাতে পেরেছে। এর মধ্য দিয়ে অভাবনীয় এক প্রকৌশল কৃতিত্ব অর্জন করল স্পেসএক্স।

স্টারশিপ রকেট সিস্টেমের দুটি অংশ। একটি হচ্ছে ‘সুপার হেভি বুস্টার’ নামের তরল গ্যাসচালিত উৎক্ষেপণ রকেট। আর অপর অংশটি হল ‘স্টারশিপ’ নামের মহাকাশযান, যা এই সুপার হেভি বুস্টারের ওপর বসানো থাকে।

রকেট সিস্টেমটি উৎক্ষেপণের পর এক পর্যায়ে স্টারশিপ মহাকাশযানটি বুস্টার থেকে আলাদা হয়ে মহাকাশে উড়ে যাবে আর বুস্টারটি পৃথিবীতে ফিরে আসবে। বুস্টারটি মূলত মহাকাশযানটিকে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান অতিক্রম করে যেতে সহায়তা করে, যাতে সেটি আবার পৃথিবীতে আছড়ে না পড়ে।

এতোদিন সাধারণত এই বুস্টারগুলোকে সমুদ্রে অবতরণ করানো হত। স্পেসএক্স গত প্রায় ৯ বছর ধরে রকেট লঞ্চের সময় এভাবেই সমুদ্রে বুস্টার অবতরণ করিয়ে এসেছে। পরে তারা সেখান থেকে বুস্টারগুলোকে ফের তুলে নিয়ে আসত।

রবিবারের এই সাফল্যের পর থেকে আর বুস্টারগুলোকে সমুদ্রে নয় সরাসরি লঞ্চপ্যাডেই ফিরিয়ে আনা যাবে। এতে অনেক সময় বেঁচে যাবে এবং দ্রুততম সময়ে একের পর এক মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে। মাস্ক দাবি করেন, এর ফলে ৩০ মিনিটের মধ্যেই ফের আরেকটি রকেট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে।

বুস্টারসহ উড়ে যাচ্ছে রকেট।

অতীতে একটা সময় ছিল যখন মহাকাশে একটি রকেট সফলভাবে পাঠাতে পারলেই ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হতো। বর্তমানে মহাকাশে রকেট পাঠানো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে রূপ নিয়েছে। কিছুদিন পরপরই রকেট উৎক্ষেপণের এ ঘটনার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। এক বছরে মহাকাশে সবচেয়ে বেশি রকেট পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইলন মাস্কই প্রথম রকেট ইন্ডাস্ট্রিকে ব্যক্তিমালিকানার আওতায় নিয়ে আসেন। তখন রকেটের বুস্টারগুলো ছিল এককালীন ব্যবহারের উপযোগী। এতে রকেট উৎক্ষেপণে অনেক বেশি খরচ হত। ইলন মাস্ক ভাবলেন, রকেট উৎক্ষেপণের এই খরচ কমাতে হবে। আর এজন্য বুস্টারগুলোকে পুনঃব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। স্পেসএক্স তৈরি করল পুনঃব্যবহারের উপযোগী বুস্টার।

কিন্তু এরপর সমস্যা হয়ে দাঁড়াল সেগুলো ফিরিয়ে আনার সময়। সমুদ্র থেকে একটি বুস্টার লঞ্চপ্যাডে ফেরত আনতে যে সময় প্রয়োজন তাতে একদিনে একটির বেশি রকেট মহাকাশে পাঠানো সম্ভব হবে না। তাই ইলন মাস্ক ভাবলেন, মহাকাশ থেকে সরাসরি লঞ্চপ্যাডেই ফিরিয়ে আনতে হবে বুস্টারগুলোকে। এর জন্য তৈরি করতে হবে মুভেবল রকেট ক্যাচার টাওয়ার। তাও তৈরি করে ফেলল স্পেসএক্স। এর মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ল মাস্কের মহাকাশ কোম্পানিটি।

গত ১৮ মাসের মধ্যে পঞ্চমবারের পরীক্ষায় টেক্সাসের বোকা চিকা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে রকেট সিস্টেমটি রবিবার সকালে উৎক্ষেপণ করা হয়। এক পর্যায়ে স্টারশিপ মহাকাশযানটি আলাদা হয়ে উড়ে যায় আর বুস্টারটি ফিরে আসে স্পেসএক্সের সেই টাওয়ারে, যেখান থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

উৎক্ষেপণ টাওয়ারের রকেট ক্যাচার ‘চপস্টিক’ যখন বুস্টারটিকে ধরে ফেলে তখন সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দ প্রকাশ করে ইলন মাস্ক এক্সে পোস্ট দেন, “টাওয়ার রকেটটিকে ধরে ফেলেছে!”

বুস্টারটি নিরাপদে অবতরণ করায় স্পেসএক্সের প্রকৌশলীরাও ঘোষণা করেন, “ইতিহাসের বইয়ের জন্য নতুন একটি দিন।”

প্রথম প্রচেষ্টায়ই বুস্টারটি এত সহজে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে হয়েছিল। এমনকি উৎক্ষেপণের আগে স্পেসএক্স টিম বলেছিল, বুস্টারটি যদি মেক্সিকো উপসাগরে গিয়ে পড়ে তাতেও তারা অবাক হবেন না।

বুস্টারটি ফিরে এসেছে।

এর আগে স্পেসএক্সের এই প্রচেষ্টা চারবার ব্যর্থ হয়েছে। গতবছরের এপ্রিল ও নভেম্বরে এবং এ বছরের মার্চ ও জুনে। তবে হাল ছাড়েননি মাস্ক। এমনকি নিজের প্রতিষ্ঠানকে রীতিমত দেউলিয়া করার পথে হাঁটছিলেন তিনি। পঞ্চমবারের প্রচেষ্টায় এসেছে সফলতা।

স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে টেক্সাসের বোকাচিকা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে স্টারশিপ রকেট সিস্টেমটি উৎক্ষেপণ করা হয়। তার সাত-আট মিনিট পরই সফলভাবে উৎক্ষেপণ প্যাডে নিরাপদে অবতরণ করে রকেটের সুপার হেভি বুস্টারটি।

অন্যদিকে, স্টারশিপ মহাকাশযানটি বুস্টার থেকে আলাদা হওয়ার পরে তার নিজস্ব ইঞ্জিনগুলোকে সক্রিয় করে মহাকাশে উড়ে যায়। এরপর সেটি প্রায় চল্লিশ মিনিট পর ভারত মহাসাগরে সফলভাবে অবতরণ করে।

স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক এক্স-এ লিখেছেন, “মহাকাশযানটিও সঠিকভাবে লক্ষ্যে অবতরণ করেছে! দুটি উদ্দেশ্যের দ্বিতীয়টিও অর্জিত হল।”

মহাকাশযানটি কেবল সঠিকভাবে অবতরণই করেনি বরং স্পেসএক্স এর অনেক হার্ডওয়্যারও সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে, যা এর আগের পরীক্ষাগুলোতে করা সম্ভব হয়নি।

স্টারশিপ মহাকাশযানটি ১০০ টনের বেশি যন্ত্রপাতি বা ১০০ জন আরোহী বহন করতে পারে। আর সুপার হেভি বুস্টারে আছে ৩৩টি ইঞ্জিন, যা যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আর্টিমেস রকেটের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী।

স্পেসএক্স নাসার আর্টেমিস-৩ মিশনের জন্য এই রকেট সিস্টেমটি তৈরি করছে। এই মহাকাশযানে করেই নাসা ২০২৬ সালে চাঁদে আবারও মানুষ পাঠাবে। এ জন্য নাসা স্পেসএক্সকে ৪ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।

এ ছাড়া স্পেসএক্স স্টারশিপ মহাকাশযানে করে মঙ্গল গ্রহেও মানুষ পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছে। এজন্য স্পেসএক্স মহাকাশেই স্টারশিপ মহাকাশযানে পুনরায় জ্বালানি ভরার পদ্ধতি উদ্ভাবনের চিন্তাভাবনা করছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত