২০০৮ ইউরো, ২০১০ বিশ্বকাপ আবারও ২০১২ ইউরো! স্বর্ণালি সময়টায় টানা তিন টুর্নামেন্ট জেতা স্পেনের তুলনা চলছিল পেলের ব্রাজিলের সঙ্গে। তবে তিকিতাকায় মুগ্ধ করা স্পেন ধীরে ধীরে হারাতে থাকে সিংহাসন।
২০১০ বিশ্বকাপের পর আর কোয়ার্টার ফাইনালেই খেলা হয়নি স্পেনের। ২০১২ সালে সবশেষ ইউরো জেতা স্পেন আর খেলতে পারেনি ফাইনালে। কারণ সময়ের পরিক্রমায় মরচে পড়েছিল তিকিতাকায়। এই ঘরানা হয়ে উঠেছিল অচল ও অকার্যকর। সেটিই বদলে দিয়ে এবারের ইউরোয় নতুন রূপ স্পেনের।
এর কারিগর কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে। গতি হারানো স্পেনের ফুটবলকে অতিরিক্ত পাস নির্ভরতা থেকে বের করে গতিশীল করেছেন তিনি। এই স্পেনও পাসিং ফুটবল খেলে তবে অনর্থক পাস দেয় না কেউ।
বল পজেশন নিয়েও খুব বেশি মাথা ঘামায় না স্পেন। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এবারের ইউরোর প্রথম ম্যাচে স্পেনের বল পজেশন ৪৬ শতাংশ আর পাস ৪৫৫টি (ক্রোয়েশিয়ার ৫২৮)। এই ম্যাচের আগে প্রতিযোগিতামূলক খেলায় স্পেনের সঙ্গে বিপক্ষ দলের বেশি বল দখল ছিল সবশেষ ২০০৮ সাল ও ১৩৬ ম্যাচ আগে । সেবার ইউরো ফাইনালে স্পেনের চেয়ে বল পজেশনে এগিয়ে ছিল জার্মানি। ১৬ বছর পরও আবার প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে কম বলের পজেশন নিয়ে খেলেছে স্পেন।
প্রীতি ম্যাচের হিসেব করলে ২০১৪ সালের পর প্রথমবার বলের পজেশন কম ছিল স্পেনের। সেবারও তারা খেলেছিল জার্মানির বিপক্ষে। বলের দখল কম রেখে খেলায় কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে বলেছেন ‘‘এভাবে ফুটবল খেলেও চমকে দিতে পারি বিপক্ষকে। হয়তো অন্য কোনও সময় প্রতিপক্ষকে হারাতে বেশি সময় বলের দখল রাখতে হবে আমাদের।’’
ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের পর ধীরে ধীরে বলের দখল আর খেলার ধার বেড়েছে স্পেনের। ইতালির বিপক্ষে বল পজেশন ছিল ৫৭ শতাংশ, আলবেনিয়ার সঙ্গে ৫৯ শতাংশ আর জর্জিয়ার বিপক্ষে ৭২ শতাংশ। সবশেষ ম্যাচে ৮২৩টা পাস খেলেছে তারা। স্পেনের ফুটবলে যেমন ছিল আগের সৌরভ তেমনি যোগ হয়েছে গতি। ওয়ান টাচ ফুটবলেও তারা অসাধারণ।
আসলে লুইস দে লা ফুয়েন্তের অধীনে বর্তমান দলটির বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের যুব পর্যায়ে খেলার সুফলই পাচ্ছে স্পেন। তার অধীনে ২০১৭ ও ২০১৯ অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোর ফাইনাল খেলেছিল স্পেন। দুটিই জার্মানির বিপক্ষে। একটিতে হার আরেকটিতে জিতেছিল তারা।
২০১৯-এ টুর্নামেন্ট সেরা হওয়া ফাবিয়ান রুইসের সঙ্গে এবারের জাতীয় দলে আছেন সেই দলের মিকেল ওইয়ারসাবাল ও দালি ওলমো।
দে লা ফুয়েন্তের অধীনে ২০১৫ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ ইউরো জিতেছিল স্পেন। সেই দলের মিকেল মেরিনো, রদ্রি ও উনাই সিমন আছেন এবারের ইউরোয়। দে লা ফুয়েন্তের কোচিংয়ে ২০২২ অলিম্পিকে সোনা জেতা দলের পেদ্রি, মার্তিন সুবিমেন্দি, মার্ক কুকুরেইয়াও আছেন ইউরোয়।
সেই তরুণরা একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলায় মিডফিল্ডার মিকেল মেরিনো বললেন, ‘‘দে লা ফুয়েন্তে আমাদের সবাইকে খুব ভালো চেনেন, আমরা তাকে ভালোভাবে চিনি। তিনি যে ফুটবল খেলাতে চান, তাতে কেমন মানসিকতা দরকার সবই জানা আমাদের।’’
জানা সেই কাজটা স্প্যানিশরা করছেন বলেই জার্মানির বিপক্ষে ফেবারিট হয়ে নামবে স্পেন।
গ্রুপ পর্বের স্পেন
ক্রোয়েশিয়া : বল পজেশন ৪৬ শতাংশ (৫৪), পাস ৪৫৫ (৫২৮), বল ফিরে পাওয়া ৩৬ (২৯), গোল ৩ (০)।
ইতালি : বল পজেশন ৫৭ শতাংশ (৪৩), পাস ৫৯৪ (৪৪৫), বল ফিরে পাওয়া ৪৫ (৪০), গোল ১ (০)।
আলবেনিয়া : বল পজেশন ৫৯ শতাংশ (৪১), পাস ৫৭৯ (৪০৩), বল ফিরে পাওয়া ৪২ (৪৮), গোল ১ (০)।
শেষ ষোলোর স্পেন
জর্জিয়া : বল পজেশন ৭২ শতাংশ (২৮), পাস ৮২৩ (২৮১), বল ফিরে পাওয়া ৪২ (৩৫), গোল ৪ (১)।