Beta
বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

ফরাসি বিপ্লব থামিয়ে ফাইনালে স্পেন

১২ বছর পর ইউরোর ফাইনালে স্পেন। ছবি : এক্স
১২ বছর পর ইউরোর ফাইনালে স্পেন। ছবি : এক্স
Picture of রাহেনুর ইসলাম

রাহেনুর ইসলাম

[publishpress_authors_box]

স্পেন ২ : ১ ফ্রান্স

এক কথায় ক্লাসিক। এবারের ইউরোর অন্যতম সেরা ম্যাচটাই উপহার দিল স্পেন-ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত জয়গান তিকিতাকার। ফরাসি বিপ্লব থামিয়ে ১২ বছর পর ইউরোর ফাইনালে তারা। মিউনিখের সেমিফাইনালে কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্সকে ২-১ গোলে হারাল এবারের টুর্নামেন্টের সেরা এই দল।

ম্যাচে উঠানামা ছিল। শুরুতেই পিছিয়ে পড়েছিল স্পেন। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে অঙ্ক কষে ম্যাচটা খেলেছে তারা। ২১ থেকে ২৫ এই চার মিনিটের ঝড়ে আদায় করেছে ২ গোল। এরপর রক্ষণে শক্তি বাড়িয়ে ধরে রেখেছে ব্যবধানটা।

ম্যাচ জুড়ে অসাধারণ ছিলেন ১৬ বছরের লামিনে ইয়ামাল। তার ২৫ গজ দূর থেকে করা গোল আর দুর্দান্ত সব মুভ দেখে গ্যারি লিনেকার এক্সে লিখলেন, ‘‘জন্ম হলো নতুন সুপারস্টারের।’’

ইংলিশ কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকার নতুন সুপারস্টার বলেছেন ১৬ বছরের ইয়ামালকে। ছবি : এক্স

মাস্ক পরা কিলিয়ান এমবাপ্পে আর ফ্রান্স-এবারের ইউরোয় দারুণ মিল ছিল এ দুটোর। প্রথম ম্যাচে নাকে আঘাত পাওয়ার পর বাধ্য হয়ে মাস্ক পরে খেলছিলেন এমবাপ্পে। কিন্তু প্রতিটা ম্যাচ শেষে বলছিলেন নিজের অস্বস্তির কথা। ফ্রান্সও ঠিক তাই। ফেবারিট হয়ে এসে সেমিফাইনালে পৌঁছলেও ওপেন প্লেতে গোল নেই একটিও!

অস্বস্তি কাটাতে আজ সেমিফাইনালে মাস্ক ছাড়াই খেলার ঝুঁকিটা নিলেন এমবাপ্পে। তাতেই খেললেন মুক্ত বিহঙ্গের মতো। অষ্টম মিনিটে উসমান দেম্বেলের কাছ থেকে বল পেয়ে জেসুস নাভাসকে এড়িয়ে বক্সের ভেতর থেকে তার অসাধারণ ক্রসে মাথা ‍ছুঁইয়ে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন রানদাল কোলো মুয়ানি।

মুয়ানির গোলে শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স। ছবি : এক্স

এটাই এবারের ইউরোয় ফ্রান্সের প্রথম ওপেন প্লে থেকে গোল। কিছুই করার ছিল না গোলররক্ষক উনাই সিমনের। অথচ এর কিছুক্ষণ আগে লামিনে ইয়ামালের ক্রস থেকে প্রায় একই জায়গায় বল পেয়ে অবিশ্বাস্য মিস করেন স্পেনের ফাবিয়ান।

সমতা ফেরাতে খু্ব বেশি সময় নেয়নি স্পেন। ২১ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে চোখজুড়ানো গোল করেন ইয়ামাল। বডি ডজে ফরাসি চার ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে ১৬ বছরের কোনও তরুণ যে শট নেওয়ার সাহস দেখাবেন ভাবেননি ফরাসি গোলরক্ষক। তার কল্পনাকে ছাড়িয়ে নেওয়া বাঁকানো শট পোস্টে লেগে জড়ায় জালে।

 জায়ান্ট স্ক্রিনে রিপ্লে দেখানোর পর মিউনিখের দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে পড়েন ইয়ামালের জাদুতে। চোখের সামনে সত্যি কিছু দেখলেন কিনা, বিশ্বাস হচ্ছিল না যেন। ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, ‘‘এই গোলের আলোচনা চলবে আগামী ৫০ বছর।’’

ইয়ামালের অসাধারণ গোল। ছবি : এক্স

 ইউরোর ইতিহাসে এবারই প্রথম গোল করলেন ১৬ বছরের কেউ।  ২০০৪ ইউরোয় ১৮ বছর ১৪১ দিনে সবচেয়ে কম বয়সে গোলের রেকর্ডটা ছিল সুইজারল্যান্ডের জন ভনলাথেনের। 

ইউরো বা বিশ্বকাপের মতো মর্যাদার টুর্নামেন্টেও এটা সর্বকনিষ্ঠ কারও গোল। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ওয়েলসের বিপক্ষে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে গোল করেছিলেন ১৭ বছর ২৩৯ দিনে। সবচেয়ে কম বয়সী কারও গোলের সেই রেকর্ড টিকে ছিল ৬৬ বছর। পেলের সেই কীর্তি আজ পেছনে ফেললেন ইয়ামাল।

স্পেন আজ শুরু থেকেই ছিল ধীরস্থির। তারা মাঠে এসেছে ফ্রান্সের পর। অনুশীলও করেছে অল্প সময়। পুরো উদ্যম জমিয়ে রেখেছিল ম্যাচের জন্য। ইয়ামাল জাদুতে সমতা ফেরানোর পর ২৫ মিনিটে দানি ওলমোর গোলে এগিয়েও যায় তারা। এটা এবারের ইউরোয় ওলেমোর তৃতীয় গোল।

এবারের ইউরোয় তৃতীয় গোল করলেন দানি ওলমো। ছবি : এক্স

আলভারো মোরাতার কাছ থেকে বল পেয়ে চুয়ামেনিকে ছিটকে জোরালো শট নিয়েছিলেন ওলমো, যা জুলস কুন্দের পায়ে লেগে জড়ায় জালে। শুরুতে এটা আত্মঘাতি গোল দেওয়া হলেও পুরে উয়েফা গোলটা দেয় ওলমোকে। ৪ মিনিটের ঝড়ে দুই গোল আদায় করে ফ্রান্সকে এলোমেলো করে দেয় স্পেন।

শুরুতে পিছিয়ে পরেও ২-১ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় স্পেন। বিরতির আগে স্পেনের বলের দখল ছিল ৫৫.৩ শতাংশ আর ফ্রান্সের ৪৪.৭ শতাংশ। স্পেন পোস্টে ৫টা শট নিয়ে লক্ষ্যে রেখেছিল ২টি। আর ফ্রান্স ৩টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখে ১টি।

বিরতির পর সমতা ফেরাতে আক্রমণের গতি বাড়ায় ফ্রান্স। স্পেনের বক্সে বেশ কয়েকটা ক্রস ফেলেছিল তারা। তাতে কাজ হয়নি। ম্যাচের প্রথম ঘণ্টায় ইউরো জুড়ে প্রতিপক্ষের পোস্টে ২৩টা শট নেওয়া হয়ে গিয়েছিল এমবাপ্পের, যা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর সমান যৌথ সর্বোচ্চ। এই ৪৬টা শটে গোল হয়েছে কেবল একটাই, তাও সেটা পেনাল্টি থেকে ( পোল্যান্ডের বিপক্ষে এমবাপ্পের)।

হারের পর এমবাপ্পের হতাশা। ছবি : এক্স

জেসুস নাভাস হিমশিম খাচ্ছিলেন এমবাপ্পেকে আটকাতে। ৫৮ মিনিটে তার জায়গায় নামেন দানি ভিভিয়ান। ৬৩ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে দায়ত উপামেকানোর হেড অল্পের জন্য যায় বাইরে দিয়ে, তাতে সমতা ফেরানোর আরও একটা সুযোগ নষ্ট হয় ফ্রান্সের।

গোলের জন্য মরিয়া কোচ দিদিয়ের দেশম এনগালো কন্তের জায়গায় নামান আন্তোয়ান গ্রিয়েজমানকে। তাতে মর্যাদার টুর্নামেন্টে ফ্রান্সের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ ম্যাচ খেলার রেকর্ড হয় গ্রিয়েজমানের। ৩৫ ম্যাচের আগের কীর্তিটা ছিল গোলরক্ষক হুগো লরির। গ্রিয়েজমানকে নামতে দেখে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান ফরাসি সমর্থকরা। নিজের ছায়া হয়ে থাকা এই ফরোয়ার্ড গত এক দশকে প্রথমবার বাইরে ছিলেন ফ্রান্সের কোনও নকআউট ম্যাচে।

ফ্রান্সের প্রেসিং ফুটবলে বিরতির পর রক্ষণে জোর দিয়েছিল স্পেন। ৮০ মিনিট পর্যন্ত পোস্টে কোনও শটই নিতে পারেনি তারা। অথচ এই সময়ে তিনটা শট লক্ষ্যে রেখেছিল ফ্রান্স। স্প্যানিয়ার্ডরা নেতিবাচক খেলতে থাকায় আক্রমণে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ফরাসিদের। স্প্যানিশদের ক্লান্তও লাগছিল তখন।

 বাম প্রান্তে ভালো খেলছিলেন বারকোলা। কিন্তু এমবাপ্পেও সেই দিক দিয়ে আক্রমণ করায় ব্যহত হচ্ছিল টিম গেম। রিয়াল মাদ্রিদে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সঙ্গে এমন ঝামেলা এড়াতে এই ম্যাচটা শিক্ষা হতে পারে এমবাপ্পের।

৭৬ মিনিটে স্প্যানিশ অধিনায়ক আলভারো মোরাতার জায়গায় নামেন মিকেল ওয়াইরজাবাল। ইউরোর ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১০ ম্যাচ বদলি হয়ে নামলেন তিনি!

৭৮ মিনিটে বদলী হয়ে নামেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ গোলদাতা অলিভার জিরুদ। তাতে ফ্রান্স খেলছিল তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ চার গোলদাতার তিনজন- জিরুদ (৫৭ গোল), এমবাপ্পে (৪৮) ও গ্রিয়েজমানকে (৪৪) নিয়ে। সেরা চারের মধ্যে ছিলেন না কেবল থিয়েরি অঁরি। তারপরও আর গোল আদায় করতে পারেনি ফ্রান্স।

৮১ মিনিটে অল্পের জন্য একটা সুযোগ নষ্ট করেন ইয়ামাল। এর দুই মিনিট পর এমবাপ্পের শট যায় বারের উপর দিয়ে। ইনজুরি টাইমের পঞ্চম মিনিটে গ্রিয়েজমানের হেড যায় বার উঁচিয়ে। তাতে ফাইনালের স্বপ্নটাও উড়ে যায় ফ্রান্সের। আর নতুন ভোরের শুরু হয় স্পেনে। ২০১২ সালের পর ইউরোর শিরোপা ফিরিয়ে আনার সেরা সুযোগ এখন তাদের সামনে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত