যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচনী ফল পাল্টে দেওয়ার চক্রান্ত-সংক্রান্ত মামলায় নতুনভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার দেশটির স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ নতুন করে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
গত বছর দায়ের করা মামলাটিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। নতুন অভিযোগপত্রেও সেই চারটি অভিযোগই রয়েছে। তবে সেগুলোতে কিছু কাটছাট করা হয়েছে।
আগের অভিযোগপত্রটি ছিল ৪৫ পৃষ্ঠার। নতুন অভিযোগপত্রটিকে ৩৬ পৃষ্ঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
নতুন অভিযোগপত্রে ট্রাম্পকে সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, বরং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী এবং একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
কারণ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, প্রেসিডেন্টরা পদে থাকাকালীন কিছু কাজের জন্য বিচার থেকে মুক্ত।
গত ১ জুলাইয়ের ওই রায়ে আদালত ট্রাম্পকে আগের মামলাটি থেকে দায়মুক্তিও দেয়। আদালত বলেছিল, প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে তিনি এই দায়মুক্তি পাওয়ার অধিকার রাখেন।
তাই নতুন অভিযোগে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, ট্রাম্প যখন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য কথিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তখন তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে কাজ করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়।
এতে আরও যুক্তি তুলে ধরা হয় যে, নির্বাচনের ফলাফলের পর ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ট্রাম্পের ওপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনও সাংবিধানিক দায়িত্ব ছিল না। ফলে তার সেসময়কার সব কর্মকাণ্ডকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয় বরং একজন প্রার্থীর কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওয়াশিংটনের জেলা বিচারক তানিয়া চুটকান নতুন অভিযোগপত্র নিয়ে শুনানি শুরু করবেন। তবে আগামী ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া খুব বেশি এগোবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে চারটি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার ষড়যন্ত্র, সরকারি কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্র, সরকারি কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা এবং অধিকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরে যান। এরপর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের বিজয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের দিন দেশটির পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের সমর্থকেরা হামলা চালায়। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাম্প ওই হামলায় ইন্ধন যোগান।
ট্রাম্প অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “নতুন অভিযোগটি একটি মৃত বিষয়কে পুনরুত্থিত করার এবং নির্বাচনের আগে আমেরিকান জনগণকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা।”
তিনি তার বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ অবিলম্বে খারিজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন।
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, “পুরো মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের গত ১ জুলাইয়ের দায়মুক্তির রায়ের ভিত্তিতেই পরিচালিত হতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটানোর জন্যই স্মিথ একই অভিযোগ নতুন করে হাজির করেছেন।”
ট্রাম্পের আইনি দলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিবিসির অংশীদার সিবিএস নিউজকে জানিয়েছে, নতুন অভিযোগটি ‘বিস্ময়কর নয়’।
“সুপ্রিম কোর্ট যা করেছে তার ভিত্তিতে সরকারের এটাই করার কথা। এতে আমাদের এই অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হবে না যে, আমরা বিশ্বাস করি স্মিথের মামলাটি ত্রুটিপূর্ণ এবং এটি বাতিল করা উচিৎ।”
এদিকে নতুন এক জরিপে উঠে এসেছে, ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের ট্রাম্পকে হারানোর ৫৫ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ এর আগে উল্টো ট্রাম্পের বাইডেনকে হারানোর ৫৬ শতাংশ সম্ভাবনা ছিল।
ডিসিশন ডেস্ক এইচকিউ ও দ্য হিলের নতুন ওই জরিপে দেখা যায়, বাইডেনের চেয়ে হ্যারিস অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিনে ভালো অবস্থানে আছেন। এর আগে ট্রাম্প এসব রাজ্যে ভালো অবস্থানে ছিলেন।
জরিপে দেখা যায়, মিশিগানে হ্যারিস ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা থাকলেও এবার হ্যারিসের সম্ভাবনা বেড়েছে। ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে কমলা হ্যারিস ২৪১টি পেতে পারেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। এর আগে ট্রাম্পের ২৯১টি ইলেকটোরাল ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পরই ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ডোমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থিতা নিয়ে অনেক নাটকীয়তা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলটি থেকে প্রথমে প্রার্থী করা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে।
কিন্তু গত ২৭ জুন বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়ায় চাপের মুখে সরে দাঁড়ান বাইডেন। গত ২২ জুলাই বাইডেন নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট। তার বয়স এখন ৮১ বছর। এই বয়স নিয়ে তিনি ফের প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কতটা ভালো করতে পারবেন তা নিয়ে প্রথম থেকেই সংশয় ছিল।
জনমত জরিপগুলোতেও দেখা যায় বাইডেন প্রার্থী থাকলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ক্ষমতা হারাবে। তাই দলটির নেতা, সমর্থক, অর্থদাতা ও শুভানুধ্যায়ীরা বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন।
অবশেষে গত ২১ জুলাই জো বাইডেন নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন।
কমলা হ্যারিস প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরু করার পরপরই ভোটারদের মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীর সমর্থন বাড়তে থাকে। জনমত জরিপগুলো থেকে ইঙ্গিত মিলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন